ঢাকা     শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৬ ১৪৩১

লেবু চাষি তুহিন এখন এলাকার মডেল

সাকিরুল কবীর রিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ৩১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৫:৫৯, ৩১ জুলাই ২০২১
লেবু চাষি তুহিন এখন এলাকার মডেল

আব্দুস সেলিম তুহিন। সম্প্রতি বীজহীন কাগজি লেবু চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সঙ্গে আরও ১২ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে যশোরে সাড়া ফেলেছেন। প্রতিদিন তার ক্ষেত থেকে গড়ে ১০ হাজার পিস লেবু সংগ্রহ করা যাচ্ছে। যশোরের কালিবাড়ি বড়বাজারসহ রাজধানীতেও যাচ্ছে তুহিনের উৎপাদিত লেবু। এতে প্রতিমাসে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় হচ্ছে তার। 

যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া মডেল ইউনিয়নের একটি গ্রাম ‘জোলা আমদাবাদ’। কায়েমকোল-ছুটিপুর সড়কের দত্তপাড়া বাজার থেকে ডান দিকে ইটের সোলিং ধরে একটু সামনে এগুলেই মিলবে এই গ্রামের দেখা। গ্রামের মৃত রকিব উদ্দীন বিশ্বাসের ছেলে আব্দুস সেলিম তুহিন ওরফে তুহিন বিশ্বাস। লেখাপড়া এসএসসির পর আর এগোয়নি। পৈত্রিক জমি দেখাশোনা আর স্থানীয় দত্তপাড়া বাজারে মজুদ পণ্যের আড়তদারি করে শুরু হয় কর্মজীবন। তবে ক্রমাগত বাকিতে পণ্য বিক্রি করে অনাদায়ী হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছিল তার ব্যবসা। 

২০১৯ সালে ময়মনসিংহের তান্ত্রিক গুরু আব্দুল বারেক লাল দাদুর পরামর্শে তিনি শুরু করেন বীজহীন কাগজি লেবুর চাষ। ৮০ টাকা প্রতি পিস দরে ময়মনসিংহ থেকে নিয়ে আসেন এক হাজার লেবুর চারা। নিজের চার বিঘা জমিতে রোপণ করেন এই চারা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তুহিনকে। চার বিঘার লেবুর ক্ষেত এখন পরিণত হয়েছে ১২ বিঘায়। প্রস্তুত করা হয়েছে আরও ছয় বিঘা। তবে তুহিনের আশা, এটিকে তিনি নিয়ে যাবেন শত বিঘা প্রকল্পে।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীদের ভিয়েতনামের একটি স্থানীয় জাত থেকে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে দীর্ঘ সময় গবেষণার পর মেলে সফলতা। আশানুরূপ ফলন হওয়ায় ২০১৮ সালে ‘বিনালেবু-১’ কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য নিবন্ধিত করে জাতীয় বীজ বোর্ড। উন্নত মানের এই লেবুর জাতটি উদ্ভাবন করেছেন বিনার বিজ্ঞানী ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. রফিকুল ইসলাম। এই লেবুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ১২ মাসই ফলন দেয়। এটি সুগন্ধিযুক্ত এবং বীজহীন। অন্যান্য লেবুর তুলনায় এ জাতের লেবুতে রস ও ভিটামিন-সি’র পরিমাণ বেশি। প্রতিটি গাছে প্রতি মৌসুমে ২৫০ থেকে ৩০০ লেবু হয়। চারা রোপণের ১০ থেকে ১১ মাস বয়সে লেবু পাওয়া যায়। একটি গাছ ১৫ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লেবু দিয়ে থাকে।

চারা রোপণের চেয়ে কলমে দ্রুত ফলন আসে বলে কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুস সেলিম তুহিন নিজের লেবু ক্ষেত থেকে কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করছেন। প্রতিটি কলম তিনি বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। ৩৩ শতকের বিঘায় ১২০টি কলম রোপণ করা যায়। যার দাম পড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এরপর পরিচর্যা ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। 

এই লেবু চাষে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। শুধু জৈব সার দিয়েই এই লেবুর চাষ করা হয়। সেই হিসাবে এক বিঘা জমিতে খরচ সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। বারোমাসি এই লেবু চাষ করে মৌসুমে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব।

প্রথম যখন শুরু করেছিলেন, তখন তুহিনকে অনেকেই টিপ্পনি কেটেছেন। তবে সেসব এখন অতীত। তার দেখাদেখি অন্যরাও শুরু করেছেন এই বিচিহীন লেবুর চাষ।  নীরব এই সবুজ বিপ্লব ছড়িয়ে যাবে সবখানে, এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

যশোর/মাহি 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়