ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

লেডিস কর্নার: একজন সহায়-সম্বলহীন নারীর স্বপ্নের নাম

মো. নুরুন্নবী জুয়েল  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৪:৪৫, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
লেডিস কর্নার: একজন সহায়-সম্বলহীন নারীর স্বপ্নের নাম

উম্মে কুলসুম পপি। থাকেন লালমনিরহাটের সাপটানা বাজারের আদর্শপাড়ায়। আর দশজন নারীর মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুন্দর জীবনের। লেখাপড়া শিখেছিলেন প্রতিষ্ঠিত হবেন বলে। চাকরি করতেন একটি এনজিওতে। কিন্তু ভাগ্যে জীবনের গল্প লেখা ছিল হয়তো অন্যভাবে। তাই অল্প বয়সেই গ্রন্থিতে টিউমার দেখা দেয়। হরমোনাল ইমব্যালেন্স ছড়িয়ে পড়ে সারাশরীরে। এতে সারাশরীর ফুলে যায় অস্বাভাবিকভাবে। 

১৯৯৮ সালের পর আর চাকরি করা সম্ভব হয়নি পপির। তার একটি মেয়ে হয়, সে এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু জন্ম থেকেই মায়ের রোগ বহন করে বড় হচ্ছে সে। অস্বাভাবিক স্থুলতা তারও। ফলে স্ত্রী-সন্তানকে রেখে চলে যান তার স্বামী। একসময় বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান। 

চিকিৎসা করে কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো গলা ও হাত পা ফোলা, সেইসঙ্গে শ্বাসকষ্ট। বেশ কিছু দিন ভাড়া বাসায় থেকে ঘরে বসে টুকটাক সেলাইয়ের কাজ এবং কাপড় বিক্রি করতেন পপি। কিন্তু তাতে নিজেদের ভরণপোষণ দিয়ে ঘর ভাড়া কারেন্ট বিল দেওয়া অসাধ্য হয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে করোনার প্রকোপে তার ব্যবসার পুঁজিও আর অবশিষ্ট নেই। সেলাই মেশিনটাও নষ্ট। বাধ্য হয়ে আশ্রয় নেন ভাইয়ের বাসায়। বাবাও স্ট্রোক করে শয্যাসায়ী। আর অসুস্থ মা-মেয়ে ভাইয়ের বাসায় ছোট্ট একটা কুঠিরে কোনোরকম বেঁচে আছেন। 

আরো পড়ুন:

মা-মেয়ের এই করুণ জীবনযাপনের কথা শুনে এগিয়ে আসে তরুণদের পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘শুনতে কি পাও?’
যারা দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রত্যন্ত ও পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন তথা শিক্ষা, চিকিৎসা, সাধারণ জ্ঞান, কারিগরি ট্রেনিং ও কর্মসংস্থান উন্নয়নে সফলতার সাথে কাজ করে চলেছে। 

এমন খবর সম্প্রতি সংগঠনের পক্ষ থেকে খুঁজে বের করা হয় পপিকে। কষ্টের কথাগুলো বলতে গিয়ে বার বার কেঁদে ফেলছিলেন উম্মে কুলসুম পপি। তার একটা বাক্য শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে যান সংগঠনের সদস্যরা। তিনি বলছিলেন, ‘ভাই আমার বাচ্চাটা যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতো, আমি রাস্তার ফুটপাতে গিয়ে থাকতাম।’

শুনতে কি পাও? সংগঠনের ‘ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প-৭’ প্রজেক্টের আওতায় পপিকে একটি কাপড়ের দোকান করে দেওয়া হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘লেডিস কর্নার’। তার ব্যাবসার জন্য কাপড়, সেইসঙ্গে তার চলার জন্য আনুমানিক ১০ দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীও দেওয়া হয়।

অনিশ্চিত জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর এই স্বপ্ন বুনতে পেরে খুশি উম্মে কুলসুম পপি। তিনি বলেন, এই দুনিয়ায় এখনো ভালো মানুষ আছে বলেই হয়তো দুনিয়া টিকে আছে। আমার এই দুর্বিষহ অসহায় জীবনে অনেক আপনজনই দূরে সরিয়ে দিয়েছে কিন্তু এই ভাইয়ারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার জন্য এত কিছু করলো, এতে আমি খুবই খুশি। দোয়া করি তারা সুস্থ থাকুক, দেশের মানুষের জন্য আরও ভালো কিছু করুক।

দুই শতাধিক সদস্য নিয়ে দেশজুড়ে কাজ করে যাচ্ছে শুনতে কি পাও? তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি প্রান্তিক চৌধুরী অর্ঘ্য। তিনি বলেন, আমাদের মতো যুব সমাজ দেশের মেরুদণ্ড। আমরা যাতে ভুল পথে নিজেদের ভবিষ্যতকে নষ্ট না করে উপরন্ত সমাজের কল্যাণে কিছুটা অবদান রাখতে পারি, সেই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এই পথচলা।আশেপাশে খুঁজলে এমন অনেক অসহায় মানুষ পাওয়া যাবে, যারা একটু সহযোগিতা পেলে নিজেদের এগিয়ে নিতে পারেন। আর এই মানুষকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করাই আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। 

এমন অনেক পপি আপা মানবেতর জীবনযাপন করছেন আমাদের আশেপাশে, যাদের খোঁজ রাখার মতো সময় আমাদের হয়ে ওঠে না। কিন্তু আমাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই তাদের প্রতি? এমন হাজারো মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে চলেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘শুনতে কি পাও?’ মানবিকতার তাগিদে মানুষের পাশে।

লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, রংপুর সরকারি সিটি কলেজ।

/মাহি/ 

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়