সোলায়মানের পিঠার সুনাম জেলাজুড়ে
মাওলা সুজন, নোয়াখালী || রাইজিংবিডি.কম
শীতকাল এলেই ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে শুভাকাঙ্ক্ষীদের দাওয়াত করেন খাওয়ান সবাই। এটা বাঙালির চিরায়ত নিয়ম। আবার বাহারি রকমের পিঠা বিক্রি করেও সংসার চালান নিম্ন আয়ের মানুষ। এমনই একজন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের বাসিন্দা সোলায়মান। চরএলাহী বাজারে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। শুধু সংসার নয়, এই পিঠা বিক্রি করে সোলায়মান ৭ মেয়ের মধ্যে ৬ মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন।
জানা যায়, নারিকেল ও খেঁজুর গুড়ের তৈরি ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল-মসলা পিঠা, সাদা পিঠা, তেলের পিঠা, দুধ পিঠা, মাশকালাইয়ের রুটি, পাটিসাপটা পিঠা, নানা রকম মসলার তৈরি ধনিয়া পাতার চাটনিসহ বাহারি সব পিঠা সোলায়মানের দোকানে পাওয়া যায়। এছাড়াও সারাবছর নোয়াখালীর আঞ্চলিক জনপ্রিয় সব পিঠা বিক্রি করেন সোলায়মান। শীতে বেশি জমে ওঠে পুলি পিঠা বিক্রি। শেষ বিকেল থেকেই পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, সোলায়মানের পিঠা মানেই অন্যরকম স্বাদ। একের পর এক লাইন ধরে কেনেন ক্রেতারা। দূর-দূরান্ত থেকেও আসছেন অনেকে। তার পিঠার সুনাম শুধু চরএলাহীতে নয়, আশেপাশের ইউনিয়নগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। গরম পিঠা খেতে বিকাল থেকে ভিড় লেগে থাকে তার দোকানে। চরএলাহী বাজারের বিভিন্ন স্থানে শীতকালীন নানা ধরনের পিঠা ও খাবারের দোকান থাকলেও সোলায়মানের দোকানের জনপ্রিয়তা সবার উপরে।
সোলায়মান বলেন, আমি সারাবছর পিঠা বিক্রি করি। এটা আমার পেশা। এখানকার আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চালাই। ৬ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এভাবে ৩০টি বছর আমার কেটে গেলো। শীত আসলে পিঠা বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। উপকরণ বাড়ি থেকেই তৈরি করে আনি। বাজারে বসে কড়াইয়ের জলন্ত তেলে প্রয়োজন মতো ভেজে নিই। তবে চেষ্টা করি যারা পিঠা পছন্দ করেন, তাদের চাহিদা অনুযায়ী গরম ভেজে দেওয়ার জন্য।
তিনি আরও বলেন, অনেক দূর-দূরান্তের মানুষ আসেন পিঠা খেতে। নতুন চালের গুড়া ও নারিকেল, চিনি, গুড় দিয়ে খুব যত্নসহকারে পিঠা তৈরি করি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি পরিমাণ চালের পিঠা বিক্রি হয়। শীতের পুলি পিঠার সঙ্গে বাড়তি হিসেবে ভাপা-চিতই পিঠাও তৈরি করি। এছাড়াও নোয়াখালীর জনপ্রিয় পিঠাগুলো সারা বছর বিক্রি করি।
পাশের ইউনিয়ন চরপার্বতী থেকে আসা জয়নাল পিঠা খেতে খেতে বলেন, সব ধরনের ক্রেতাদের দেখা যায় এখানে পিঠা খেতে আসেন। আবার কেউ কেউ বাড়িতে ছেলে-মেয়েদের জন্যও পিঠা কিনে নিয়ে যায়। ব্যস্ততার কারণে বাড়িতে পিঠা খাওয়ার সময় হয়ে ওঠে না। তাই এখানে সেই স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করছি।
বসুরহাট পৌরসভা এলাকা থেকে আসা মো. ফিরোজ নামে একজন বলেন, পৌর এলাকা থেকে বাইকে এখানে আসতে ১৫/২০ মিনিট লাগে। সোলায়মানের পিঠার কদর আগ থেকেই জানা ছিল। সময় পেয়ে শীতের সন্ধ্যায় তার বানানো পিঠা খেতে চলে এলাম। স্বাদ ও ভালো লাগা থেকে এখানে আসা। দূরের লোকজনও আসেন।
রামপুর ইউনিয়ন থেকে আসা টুটুল নামে একজন বলেন, একটা ব্যক্তিগত কাজে চরএলাহী বাজারে এসেছিলাম। কাজ শেষে সোলায়মানের পিঠার স্বাদ নিতে ভুললাম না। শুধু আমি না অনেক দূর-দূরান্ত থেকে তার দোকানে লোকজন আসেন পিঠা খেতে।
/মাহি/