শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সফল ইউটিউবার হৃদয়
সাজেদুর আবেদীন শান্ত || রাইজিংবিডি.কম
সাইফুল ইসলাম হৃদয়
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে কখনেো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তার অনন্য উদাহারণ মাদারীপুরের হৃদয়। তিনি একজন সফল ইউটিউবার ও গ্রাফিক্স ডিজাইনার। নিজেই বিভিন্ন সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করেন, আবার নিজেই এডিট করে ইউটিউবে পাবলিশ করেন। এখান থেকে তার মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। পরিবারের হাল ধরেছেন। তিনি এখন আর পরিবারের বোঝা নন। স্বপ্ন দেখছেন নিজের প্রতিভা দিয়ে সমাজকে বদলে দেবেন।
তার পুরো নাম সাইফুল ইসলাম (হৃদয়)। মাদারীপুরের কুনিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে ২০০০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১৮ সালে আমগ্রাম হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও মোস্তফাপুর কলেজ থেকে ২০২০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। বাবা মোস্তফা বেপারী একজন কৃষক ও মা লিপি বেগম গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে হৃদয় ছোট। বড় ভাই প্রবাসী। শারীরিক আকৃতি ছোট হওয়ায় অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে হৃদয়কে।
হৃদয় বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে খর্বাকৃতির বলে আমাকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি, ঠাট্টা ও উপহাস করতো। প্রথম প্রথম আমার অনেক কষ্ট হতো, মন খারাপ হতো। কিন্তু এখন আর হয় না। কারণ আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি। পরিবারের জন্য কিছু করার চেষ্ঠা করছি। আমি এখন আমার পরিবারের বোঝা না।’
হৃদয় ছোটবেলায় ঘরকুনো স্বভাবের ছিল। ফলে তাকে নিয়ে অনেকেই ঠাট্টা করতো। কিন্তু তার এই ঘরকুনো স্বভাবই যেন আশীর্বাদ। ঘরে থেকেই তিনি ইউটিউব দেখে ভিডিও এডিটিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখেন। পাশাপাশি নিজেই ভিডিও তৈরি করে নিজের পেজ ‘হৃদয় নিউজ’ এ আপলোড দেন। পাশাপাশি তিনি বর্তমানে অভিনয় করেন। তার অভিনীত স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিগুলো হলো- মোল্লা বাড়িব চার বউ, চাকরানি মেয়ে থেকে রাজরানি বউ, শিক্ষিত বেকার, বৃদ্ধাশ্রম ইত্যাদি।
অভিনয়ের জগতে কিভাবে আসলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হৃদয় বলেন, ‘আমি গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমার বান্ধবী জুঁইয়ের কথায় আমি প্রথম ইউটিউবে কাজ শুরু করি। তারপর আমার ফেসবুকের পরিচিত এক ভাই রানা আমার ভিডিওগুলো দেখেন। ভিডিওগুলো দেখে তিনি আমাকে গ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তারপর থেকে আমি মিউজিক বাংলা টিভি ইউটিউব চ্যানেলে রুবেল হাওলাদার ভাইয়ের সাথে কাজ করি।’
হৃদয়ের প্রিয় অভিনেতা হুমায়ূন সাধু। তিনি স্বপ্ন দেখেন একজন ভালো অভিনেতা হবেন এবং নিজে একটা প্রোডাকশন হাউজ দেবেন। তিনি চান, তার মতো মানুষ যেন সমাজের বোঝা না হয়ে কিছু যেন করেন। নিজের পায়ে দাঁড়ান। হৃদয়ের মতো মানুষই সমাজের প্রতিবিম্ব, তারাই গড়বেন বেকার মুক্ত বাংলাদেশ।
হৃদয়ের বাবা মোস্তফা বেপারী বলেন, ‘আমার দুইটাই ছেলে। বড় ছেলে প্রবাসী। ছোট ছেলে হৃদয় প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেকেই অনেক কথা বলতো। শুনে আমাদের মন খারাপ হতো। তাকে নিয়ে নানা চিন্তা করতাম। তবে বর্তমানে আমার ছেলে আর কারো বোঝা নয়। আট-দশটা স্বাভাবিক ছেলের চেয়ে আমার ছেলে এই বয়সে অনেক আয় করে। তা দিয়ে নিজে চলে, আমাদেরও কিছু দেয়। আমি আমার ছেলের সর্বোচ্চ সাফল্য কামনা করছি। আপনারা সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।’
লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।
/মাহি/