ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৮০ লাখ কেজি

আবু নাঈম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ৩ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৬:৫৩, ৩ মার্চ ২০২২
পঞ্চগড়ে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৮০ লাখ কেজি

দুই মাস বন্ধ থাকার পর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলোতে। সমতলের প্রায় সব বাগানে উঁকি দিতে শুরু করেছে দুটি পাতার একটি কুঁড়ি। শুরু হয়েছে চা পাতা সংগ্রহ।  কারখানাগুলোতেও শুরু হয়েছে উৎপাদন কার্যক্রম।  নতুন বছরে উত্তরবঙ্গের চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৮০ লাখ কেজি নির্ধারণ করেছে চা বোর্ড।

চলতি বছরের মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে চায়ের মৌসুম শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গে। এই বছর এ অঞ্চলটিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ কেজি।২০২১ মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি কেজি। কিন্তু সেই বছর উৎপাদন হয় ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি। ২০২০ সালের তুলনায় ৪২ লাখ ৪০ হাজার কেজি বেশি। 

জানা গেছে, প্রতিবছর শীতের সময় চা বাগানে পাতার বৃদ্ধি কমে যায়। এ সময় চাষিরা চা পাতা সংগ্রহ না করে গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলেন। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে বলা হয় প্রুনিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বাগানের পাতা ঘন হয় এবং উৎপাদন বাড়ে। তাই প্রতি বছর জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে পাতা সংগ্রহ বন্ধ রেখে প্রুনিং করেন চাষিরা। একই সঙ্গে এ সময় প্রতিটি কারখানা বন্ধ রাখা হয়। 

চা শ্রমিকরা জানান, দুই মাস কর্মহীন সময় শেষে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। তারা চুক্তিভিত্তিক বাগান থেকে চা সংগ্রহ করেন। এতে প্রতি কেজি চায়ের কাঁচা পাতা সংগ্রহে তারা তিন থেকে পাঁচ টাকা পান।

তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামের চাষি আব্দুর রহমান বলেন, ‘চায়ের অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে প্রুনিং করা হয়। এজন্য দুই মাস বাগান থেকে পাতা সংগ্রহ বন্ধ থাকে। তবে এ সময়টা বাগানে গাছের গোড়া পরিস্কার করা, চা গাছের মাঝে বেড়ে উঠে লতাগুলোকে উপড়ে ফেলা এবং সেচ দেওয়াসহ বাগানের পরিচর্যা কাজ চলে। এখন নতুন কুঁড়িতে বাগানগুলো ভরে গেছে। আবার নতুন করে চা পাতা সংগ্রহ শুরু হয়েছে।’

সিলেট অঞ্চলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পঞ্চগড়। ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম পঞ্চগড়ে চা চাষের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয় এবং ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয়। পঞ্চগড়কে অনুসরণ করে চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা। 

এক সময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি এখন চায়ের সবুজ পাতায় ভরে উঠছে। ভালো মানের চা উৎপাদন হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ অঞ্চলের চা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে।  

চা-বাগানের পাশাপাশি এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। সৃষ্টি হয়েছে মানুষের কর্মসংস্থান। একেক জন শ্রমিক দৈনিক আয় করছেন ৫ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।

চা বোর্ড জানিয়েছে, এই মৌসুমে উত্তরবঙ্গে ১ কোটি ৮০ লাখ কেজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কাঁচা চা পাতার ক্রয় মূল্য এখনো নির্ধারণ করেনি চা ক্রয় কমিটি। তাই মূল্য নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় রয়েছেন চা চাষিরা। চা নিলামের উপর নির্ভর করেই কাচা চা পাতার দাম নির্ধারণ করা হবে। তবে দাম বিষয়ে চাষীদের কোনো সমস্যা হলে চা বোর্ডের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানের কাজ করা হবে।  

বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, ‘সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। দিনদিন এসব এলাকায় চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালে উত্তরবঙ্গে চা উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড়গুণ। ’

তিনি আরো বলেন, ‘চা চাষ সম্প্রসারণে চাষিদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে স্বল্পমূল্যে উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’র মাধ্যমে কর্মশালা হচ্ছে। চাষিদের সমস্যা সমাধানে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, রোগবালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেওয়া হয়।’

পঞ্চগড়/ মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়