ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

রোবট তৈরি করলেন লালমনিরহাটের যুবক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪১, ৬ জুন ২০২২   আপডেট: ১২:৫৭, ৬ জুন ২০২২
রোবট তৈরি করলেন লালমনিরহাটের যুবক

আহসান হাবিব ও তার তৈরি করা রোবট চিটি

মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন লালমনিরহাটের আহসান হাবিব। প্রায় ৭ মাসের চেষ্টো শেষে তৈরি করেছেন রোবট। এই রোবট বাংলা ও ইংরেজিতে কোনো প্রশ্ন করলে যেমন উত্তর দিতে পারে তেমনি সামনে ও পেছনে হাঁটতেও পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের অনেক মন্ত্রী-এমপির নাম বলতে পারে রোবটটি। এ ছাড়া এটি হাত দিয়ে ভারী জিনিসপত্র বহন করতে পারবে।

এদিকে হাবিবের এমন সফলতায় আনন্দিত স্থানীয় বাসিন্দারা। তার তৈরি রোবটটি দেখতে তাই প্রতিদিনই শত শত মানুষ ভিড় করছেন হাবিবের বাড়িতে।

হাবিবের বাড়ি জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহরি গ্রামে। ২০১৭ সালে হাবিব স্কুল থেকে বিজ্ঞান মেলায় রকেট বানিয়ে বাগিয়ে নেন পুরস্কার। ২০১৮ সালে হাবিবের বাবা মজু মিয়া মারা যান। মজু মিয়া ছিলেন টিভি মেকানিক। দোকানও ছিলো তার। সেখানেই স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতেন হাবিব। মজু মিয়া চাইতেন তার ছেলে লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। 

আরো পড়ুন:

তুসভান্ডার আরএমপি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ‘এ’ গ্রেড পান হাবিব। ২০২০ সালে তিনি কালিগঞ্জ কেইউপি মহাবিদ্যালয় থেকে  মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। টিউসনি করিয়ে চলছে তার পড়ালেখার খরচ। দুই ভাইয়ের সংসারের বড় ভাই পৃথক থাকেন। ধার দেনা আর আত্মীয়দের কাছ থেকে পাওয়া উপহারের টাকা জমিয়ে হাবিব তৈরি করেছেন রোবট। আমেরিকান, চাইনিজ, ভারতীয় সার্কিট ব্যবহার করে বানানো এই রোবটটির নাম দিয়েছেন চিটি। 

হাবিবের দাবি, চিটি নামের এই রোবটটির মেমোরি অনেক শক্তিশালী। এটি কাউকে দেখে ভুলে যাবেনা। এছাড়া এর চোখে লাগানো হয়েছে লেন্স।

আহসান হাবিব বলেন, ‘আমি দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। একটি সিনেমাতে রোবটকে খাবার পরিবেশন করতে দেখেছি। চায়নাতে রোবট রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। ওরা পারলে আমি কেনো পারবোনা। এটাই ছিলো অনুপ্রেরণা। এ পর্যন্ত চিটিকে তৈরি করতে এক লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। যা সবই ছিলো প্রায় ধার করা। দুই লাখ টাকা হলে খুব ভালো মানের রোবট তৈরি করতে পারতাম।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, আহসান হাবিবের ঘরে মাত্র একটি চৌকি। একটি চেয়ার টেবিল আর কিছু বইপত্র ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই।

হাবিবের মা হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার ছেলে এগুলোই করে। আমি চাই প্রধানমন্ত্রী যদি সহযোগীতা করেন তবে আমার ছেলেটার একটি কর্মসংস্থান হতো।’

প্রতিবেশী ছবির মিয়া বলেন, ‘আর্থিক অবস্থা ভালো না হাবিবদের। নিজে টিউসনি করে লেখাপড়া করেছে। তার বাবা মারা গেছে। সে একদিন অনেক বড় হবে। আল্লাহ যেনো তার চলার পথ সুগম করেন।’

এশরাফুল হক বলেন, ‘খুব ভালো লাগতেছে। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে সে। তার বাবা প্রথমে মাদরাসায় ভর্তি করেছিল।পরে হাবিব স্কুলে ভর্তি হয়। সে অনকে মেধাবী।’

সুন্দ্রাহার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমাম আলী বলেন, ‘হাবিব আমার ছাত্র। আমি আজ গর্বিত। প্রথমে একটি রোবট তৈরি করেছিলো। এখন সে আবারো একটি রোবট তৈরি করলো।’ 

ফারুক আলম/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়