রাজশাহীর ব্যাটে খেলবে বিশ্ব, আইসিসির অনুমোদন
শিরিন সুলতানা কেয়া, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম
হুসাইন মোহাম্মদ আফতাব শাহিন
বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের কোনো খেলোয়াড়ের ব্যাটের সমস্যা হলে ভরসা রাজশাহীর হুসাইন মোহাম্মদ আফতাব শাহিন। ব্যাট মেরামতের কাজ করতে করতে পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘ব্যাট ডক্টর’ নামে। এক যুগের বেশি সময় ধরে রাজশাহী থেকেই তিনি ব্যাটের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি বিদেশ থেকে কাঠ এনে তৈরি করছেন ব্যাটও।
মাঝপথে তার সঙ্গী হয়েছেন ইমরুল কায়েস আর মেহেদী হাসান মিরাজ। রাজশাহীতে এখন তিনজনের ব্যাটের কারখানার নাম ‘এম কে এস স্পোর্টস’। এখন এটি একটি ব্র্যান্ডের নাম। ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসি এই ব্র্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন থেকে এম কে এসের তৈরি ব্যাট নিয়ে আন্তর্জাতিক আসরে খেলতে পারবেন ক্রিকেটাররা।
গত মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) আইসিসি ‘এম কে এস স্পোর্টস’- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুসাইন মোহাম্মদ আফতাব এক চিঠিতে তার ব্র্যান্ডের অনুমোদনের বিষয়টি জানান। এখন থেকে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার বারোরাস্তার মোড়ে এম কে এসের কারখানায় তৈরি হবে বিশ্বমানের ক্রিকেট ব্যাট। ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস এখন এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। আছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। তবে শুরুটা করেছিলেন হুসাইন মোহাম্মদ আফতাব একাই।
এখন এই তিনজনের প্রতিষ্ঠান আইসিসি অনুমোদিত দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের ব্যাট তৈরির প্রতিষ্ঠান। আইসিসির অনুমোদনের চিঠিটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন ইমরুল কায়েস। এরপরে মূলত বিষয়টি জানাজানি হয়।
যোগাযোগ করা হলে হুসাইন মোহাম্মদ আফতাব শাহিন জানান, আইসিসির চিঠি তারা ইতোমধ্যে হাতে পেয়েছেন। এটি দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বড় খবর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যাটের স্টিকার দিয়ে খেলতে হলে আইসিসির অনুমোদন লাগত। ওদের কিছু গাইডলাইন আছে। সেগুলো ছাড়া স্পন্সর সম্ভব হতো না। কিছুদিন আগেই আইসিসির কাছে আবেদন করেছিলাম। তারা কিছু ডকুমেন্ট চেয়েছিল। সেগুলো তাদের কাছে মেইলে পাঠিয়েছিলাম। এখন থেকে চাইলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের স্পন্সর হতে পারব।’
হুসাইন মোহাম্মদ আফতাবের দাদা-বাবার বাড়ি খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায়। বাবার চাকরির সুবাদে থাকতেন খুলনায়। ভর্তি হয়েছিলেন খুলনা পলিটেকনিকে। ১৯৯২ সালে বদলিজনিত কারণে বাবা রাজশাহী পলিটেকনিক চলে আসেন রেজিস্ট্রার হিসেবে। শাহিনও পরবর্তীতে ভর্তি হন রাজশাহী টিটিসিতে। সেখানে এসএসসি (ভোকেশনাল)। টিটিসিতে উড (কাঠের কাজ) বিভাগে ভর্তি হন।
মূলত অষ্টম শ্রেণি থেকেই তার কাঠ নিয়ে পাড়ালেখা শুরু হয়। সে সময় শিমুল কাঠের তৈরি একটা ব্যাট কিনে আনেন। বাড়িতে নিয়ে মনে হয় ব্যাটটি আরও ভালো হওয়া উচিত। ব্যাটের পেছনে লেগে যান। শেষ পর্যন্ত একটা ভালো ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করে ছাড়েন। এরপর ধীরে ধীরে পলিটেকনিকের সবার ব্যাট নিয়ে এসে নিজেই ঠিক করে দিতেন। পরবর্তীতে ভর্তি হন ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। ক্যাম্পের কারও ব্যাটের সমস্যা হলে তিনিই ঠিক করার জন্য বাড়িতে নিয়ে যেতেন। তারাও আগ্রহ করে শাহিনকে ব্যাটগুলো দিতেন। ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে। পেতে থাকেন কাজ।
শাহিন বলেন, ‘ব্যাটের খুঁটিনাটি নিয়ে আমি ২২ বছর ধরে সাধনা করে আসছি। আমার জীবনের সিংহভাগ সময় ব্যাট ও ব্যাটের হ্যান্ডেল নিয়ে গবেষণায় চলে গছে। জাতীয় দলের মিরাজ ভাই আমাকে কোম্পানি করার কথা বলেছিলেন। তারপরে অনেক ভেবে এগিয়েছি। এখন আমাদের স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন। আমরা এখন আমাদের কারখানার পরিধি বাড়াব। আন্তর্জাতিক মানের বেশি বেশি ব্যাট তৈরি করব।’
মাসুদ