রেল কর্মচারীদের সততা

কুষ্টিয়ার পোড়াদহ থেকে ট্রেনে ঢাকায় যাচ্ছিলেন সৌদি আারব প্রবাসী আকরাম আমির (৩৫)। বুধবার (২৮ আগস্ট) তার ফ্লাইট। অসাবধানতায় ট্রেনের মধ্যে হারিয়ে ফেলেন সঙ্গে থাকা পার্স (ছোট ব্যাগ)। যার মধ্যে ছিল তার নগদ টাকাসহ প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টস (নথি)। দিশেহারা হয়ে ট্রেনের বিভিন্ন স্থানে শুরু করেন তিনি পার্সটির সন্ধান। পরে এক যাত্রীর মাধ্যমে পাওয়া পার্স উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে আকারমকে ফিরিয়ে দেন রেল কর্মচারীরা।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে খুলনা থেকে ঢাকা অভিমুখী আন্তঃনগর ‘চিত্রা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে এ ঘটনাটি হয়।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সৌদি আরব প্রবাসী আকরাম আমিরের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। আগামীকাল বুধবার তার সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইটের তারিখ। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নথি নিয়ে কুষ্টিয়ার পোড়াদহ জংশন স্টেশন থেকে আজ দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ঝ’ বগিতে ওঠেন তিনি। ৭৩ নম্বর আসনের যাত্রী হিসেবে ঢাকায় যাচ্ছিলেন আকরাম। ট্রেনটি ভেড়ামারা স্টেশনে পৌঁছানোর পর আকরাম পাশের ‘ট’ বগির টয়লেটে যান। সেখানে তিনি ভুল করে তার  পার্সটি ফেলে আসেন। 

নিজের আসনে ফিরে আসার পর আকরাম দেখতে পান পার্সটি নেই। পার্সের মধ্যে ছিলো তার সৌদি আরবের আকামা, সেখানকার সিটি করপোরেশনের কার্ড, দুটি ব্যাংকের কার্ড, প্রবাসী কল্যাণ স্মার্ট কার্ডসহ নগদ টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ অন্যসব নথি। বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে সিরাজগঞ্জের মনসুরাবাদ স্টেশনে পৌঁছায় চিত্রা এক্সপ্রেস। সেখানে এক যাত্রী টয়লেট থেকে পার্সটি পান। তিনি তখন সেটি ট্রেনে দায়িত্বরত জিআরপি পুলিশের এএসআই উজ্জল বিশ্বাসের হাতে পৌঁছে দেন। এসআই উজ্জল পার্সটি পাওয়া মাত্রই ট্রেনের দায়িত্বরত টিটিই আব্দুল আলিম মিঠুকে জানান ও সেটি তার কাছে দেন।

টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু বলেন, ‘পার্সটি হাতে পাবার পর চিত্রা এক্সপ্রেসে চেকিংরত সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিও) ফারহান মাহমুদ স্যারের অনুমতি নিয়ে পিএ অপারেটর রুমে যাই। সেখানে গিয়ে যাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে কারো কিছু হারানো গেছে কিনা এমন ঘোষণা দেই মাইকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘোষণা করা মাত্রই আকরাম আমির নামে যাত্রী যথোপযুক্ত প্রমাণসহ তার পার্সটি হারিয়ে গেছে বলে আমাদের সঙ্গে দেখা করে জানান। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বঙ্গবন্ধু পশ্চিম স্টেশনে পৌঁছার পর উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা পার্সটি তার কাছে ফিরিয়ে দেই। এ সময়য় হারিয়ে ফেলা নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো  পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন আকরাম আমির।’

টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু বলেন, ‘আকরাম আমির ভাই আমাদের দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তার মতো আরো অনেক যোদ্ধার পাঠানো টাকায় আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল। তার হারানো জিনিস ফেরত এবং তার সৌদি আরব যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পেরে আমরা গর্ববোধ করছি।’

এ বিষয়ে আকরাম আমির টেলিফোনে বলেন, ‘ছুটি শেষ। আগামীকাল বুধবার আমি সৌদি আরব যাবো। আজকেই ঢাকায় চলে এসেছি। আসার পথে অসাবধানতাবশত পার্সটি হারিয়ে ফেলি। যার মধ্যে আমার সবকিছু ছিল। খুব ভেঙে পড়েছিলাম দুশ্চিন্তায়। আল্লাহর অশেষ রহমত সব আবার ফিরে পেয়েছি। যে যাত্রীর মাধ্যমে পেলাম সেই যাত্রীসহ ট্রেনের টিটিই, পুলিশ সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এটাই আমার সোনার বাংলাদেশ।’