ঢাকা     বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫ ||  চৈত্র ২০ ১৪৩১

ভাসমান স্কুল

ইয়েল ইউনিভার্সিটির ফেলোশিপ পেলেন রেজোয়ান

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ২৯ মার্চ ২০২৫  
ইয়েল ইউনিভার্সিটির ফেলোশিপ পেলেন রেজোয়ান

স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান

স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান ২০২৫ সালের ‘ইয়েল বিশ্ব ফেলো’ নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের বন্যাপীড়িত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ভাসমান শিক্ষাব্যবস্থা’ উদ্ভাবনের জন্য তিনি এই সম্মান অর্জন করেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ভাসমান স্কুলের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ এবং টেকসইকরণের কাজ করছেন।  

চলতি বছর বিশ্বের ৪ হাজার দুইশ জনের অধিক মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে থেকে ১৬ জনকে ‘ইয়েল বিশ্ব ফেলো’ নির্বাচিত করা হয়। তারা শাসনব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন, ব্যবসা, গণমাধ্যম, আইন, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। 

ইয়েল ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টারের পরিচালক এমা স্কাই বলেন, ‘‘ভাসমান স্কুল শুধু বাংলাদেশের নয়, এখন সারা বিশ্বের আশা। কেননা রেজোয়ানের উদ্ভাবিত ভাসমান শিক্ষার টেকসই মডেল জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত দুই দশকে তার নেতৃত্বে পরিচালিত উদ্যোগ দেখিয়েছে যে, জলবায়ু অভিযোজনে স্থানীয় উদ্ভাবন কেবল একটি দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে প্রভাব ফেলতে পারে।’

স্থপতি রেজোয়ান চলনবিলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে বন্যার কারণে প্রতিবছর স্কুল বন্ধ হয়ে যেত, মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত হতো, একইসঙ্গে বাধাগ্রস্ত হতো মানুষের মৌলিক সেবা। রেজোয়ান এই সমস্যাকে কেবল সংকট হিসেবে দেখেননি, বরং এরই মাঝে একটি নতুন সমাধানের পথ খুঁজেছেন। তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা-২০০২ সালে বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুলের ধারণা বাস্তবায়ন করে। সৌরবিদ্যুৎ চালিত নৌকায় পরিচালিত এসব স্কুলে বন্যার মধ্যেও শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পায়। 

শুধু শিক্ষা নয়, রেজোয়ানের উদ্যোগ সম্প্রসারিত হয়েছে ভাসমান গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্লে গ্রাউন্ড ও ভাসমান কৃষি খামার। বাংলাদেশ সরকার তার উদ্ভাবনকে (ভাসমান স্কুল) জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০)-তে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তার উদ্ভাবনী মডেল এখন পর্যন্ত এশিয়া ও আফ্রিকার আটটি দেশে অনুসরণ করা হচ্ছে। 

রেজোয়ান বলেন, ‘‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের সমস্ত সংগ্রামী মানুষদের জন্য যারা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করেছেন। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রেরণার কারণেই আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, নতুন সমাধান বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকেই আসতে পারে। আশা করি, ইয়েল ইউনিভার্সিটির এই স্বীকৃতি জলবায়ু অভিযোজন ও শিক্ষার উন্নয়নের সিধুলাই ভাসমান স্কুল মডেলকে বৈশ্বিক পর্যায়ে আরো ব্যাপক আকারে বিস্তারের সুযোগ করে দেবে।’’

রেজোয়ানের ভাসমান স্কুলের ধারণাকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা উদ্ভাবন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে ব্রিটিশ বই ‘আর্থ হিরোস’ তাকে বিশ্বের ২০ জন ‘আর্থ হিরো’র একজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। রেজোয়ান ও তার ভাসমান স্কুল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। 

রেজোয়ান ‘সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’র প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক। তার ভাসমান স্কুল দেশ-বিদেশে খ্যাতি পেয়েছে ‘রেজোয়ানের নৌকাস্কুল’ নামে। বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত নৌকায় ডিজিটাল শ্রেণীকক্ষের পাশাপাশি রয়েছে ভাসমান লাইব্রেরি, খেলার মাঠ ও স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক এবং কিশোরী-তরুণীদের জন্য রয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।  

‘ইয়েল বিশ্ব ফেলো’ প্রোগ্রাম হলো চার মাসের একটি পূর্ণকালীন রেসিডেনসিয়াল প্রোগ্রাম, যা ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টার থেকে পরিচালিত হয়। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি এই ফেলোশিপ প্রদান করে, যা বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ ফেলোশিপ প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম।
 

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়