ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অজ্ঞান হওয়ার ৮ পূর্ব লক্ষণ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ৯ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অজ্ঞান হওয়ার ৮ পূর্ব লক্ষণ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : অজ্ঞান হওয়া বা ফেইন্টিংকে সিনকোপও বলে। এটি তখন ঘটে যখন রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন কমে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে হঠাৎ রক্ত বা অক্সিজেন বা উভয়ের মাত্রা হ্রাস পায়।

নিউ ইয়র্ক মেডিক্যাল কলেজের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজির অধ্যাপক জুলিয়ান স্টুয়ার্টের মতে, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, অত্যধিক তাপ অথবা অন্যান্য কারণে ৩০ শতাংশ লোক তাদের লাইফটাইমে অন্তত একবার সংজ্ঞাহীন ঘটনার শিকার হয়। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক যে কারো ক্ষেত্রে এটি ঘটতে পারে।

এ প্রতিবেদনে উল্লেখিত অজ্ঞান হওয়ার লক্ষণগুলো জেনে নিন ও ইনজুরি এড়াতে পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন।

* আপনি প্রচন্ড মাথাঘোরা অনুভব করছেন
যদি আপনি হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েন ও এক মুহূর্তের জন্য প্রচন্ড মাথাঘোরা অনুভব করেন, তাহলে আপনি সিনকোপের হালকা ভার্সনের সম্মুখীন হয়েছেন। ডা. স্টুয়ার্ট বলেন, ‘যখন আপনি শুয়ে থাকেন তখন রক্ত সমানভাবে বণ্টন হয় এবং যখন দাঁড়ান তখন গ্রাভিটির কারণে মস্তিষ্ক থেকে রক্ত দ্রুত হ্রাস পায়।’ যেহেতু আপনি দাঁড়ালে মস্তিষ্ক থেকে রক্ত নেমে যায়, তাই আপনার রক্তচাপ কমে যায় ও আপনি মাথাঘোরা অনুভব করেন। যদি আপনি দাঁড়ানোর পর প্রায় সময় মাথাঘোরা অনুভব করেন, তাহলে দাঁড়ানোর পূর্বে আপনার নিম্ন শরীরের (যেমন- উরু, কাফ, নিতম্ব) মাংসপেশী স্কুইজ করুন- এটি আপনার শরীরের উপরের অংশে রক্ত পাম্প করবে ও আপনি দাঁড়ালে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া প্রতিরোধ করবে।

* আপনি চোখের সামনে উজ্জ্বল ফ্ল্যাশ দেখছেন
আপনার চোখ প্রথম সংকেত দিতে পারে যে আপনি সংজ্ঞাহীন হতে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ডা. স্টুয়ার্ট বলেন, ‘কারণ আপনার আইবলে চাপ পড়ে, যখন রক্ত নিচের দিকে নামে তখন এসব রক্তনালী প্রথমে কলাপ্স করে।’ যদি আপনি চোখের সামনে স্পট বা উজ্জ্বল ফ্ল্যাশ দেখতে আরম্ভ করেন, তাহলে শুয়ে পড়ুন বা বসুন এবং আপনার মাথা দুই হাঁটুর মাঝখানে রাখুন। এটি মস্তিষ্কের দিকে রক্তপ্রবাহ ব্যাক করাবে এবং যদি আপনি সংজ্ঞা হারান আপনার মাথা ও ঘাড়কে রক্ষা করবে।

* আপনার হাইপারভেন্টিলেশন আরম্ভ হয়েছে
ডা. স্টুয়ার্ট বলেন, ‘সিনকোপের পূর্বে লোকজনের হাইপারভেন্টিলেশন (অস্বাভাবিক দ্রুত হারে শ্বাসকার্য) শুরু হয়। মস্তিষ্ক অক্সিজেনের নিম্নমাত্রা শনাক্ত করলে আপনার শরীর আপনাকে অধিক জীবন-রক্ষাকারী বাতাস গ্রহণ করার জন্য দ্রুত শ্বাস নিতে প্ররোচিত করবে। যদি আপনার হাইপারভেন্টিলেশন আরম্ভ হয়, তাহলে বসা বা শোয়ার জন্য স্থান খুঁজুন, চোখ বন্ধ করুন এবং পেটের ওপর একটি হাত রাখুন। তারপর ধীর ও গভীর শ্বাস নিন, আপনার পাকস্থলীকে বেলুনের মতো প্রসারিত করুন- কারণ নাক দিয়ে শ্বাসগ্রহণ হবে ও শ্বাসত্যাগ মুখ দিয়ে। যোগ হওয়া অক্সিজেন শরীরের প্রত্যেকটি কোষকে প্রাণবন্ত করবে ও মস্তিষ্কের বিপর্যয় উপশম করবে। আপনি স্নিফিং বা গ্যাসপিংও ট্রাই করতে পারেন- ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজির একটি পরীক্ষিত টেকনিক, যেসব রোগীরা রক্তচাপ কমে যাওয়ায় নাক ডেকে শ্বাস নিয়েছেন (স্নিফিং) অথবা মুখ দিয়ে শ্বাস নিয়েছেন (গ্যাস্পিং) তারা সিনকোপ এড়াতে পেরেছিলেন।

* আপনার ফিঙ্গারটিপ বা ঠোঁটে শিহরণ হচ্ছে
আপনার মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ হ্রাস পেলে রক্তনালীর ক্যালসিয়ামও হঠাৎ কমে যেতে পারে। যখন এরকম ঘটবে আপনি এক্সট্রিমিটিতে টিংলিং বা শিহরণ অথবা অসাড়তা অনুভব করবেন, বিশেষ করে ফিঙ্গারটিপ ও ঠোঁটের চারপাশে- কারণ এসব জায়গা থেকে অপরিহার্য মিনারেল চলে যায়। আপনার বায়ুপথ খুলতে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও রক্ত ব্যাক করতে বসে পড়ার আগে আপনার বেল্ট, কলার ও অন্যান্য চাপ সৃষ্টিকারী পোশাক লুজ বা ঢিলা করুন।

* আপনি গরম অনুভব করছেন
সংজ্ঞা হারানোর পূর্বে আপনি হেড রাশ অথবা শরীরে উষ্ণ প্রবাহ অনুভব করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে আপনি যা অনুভব করেন তা হচ্ছে শরীরের অন্যান্য অংশে রক্তপ্রবাহ দ্রুত বেড়ে যাওয়া, কারণ মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেনের ঘাটতি হওয়ার কারণে আপনার হৃদপিণ্ড ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করে। ডা. স্টুয়ার্ট বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে শরীরের ভুল জায়গায় রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যেমন- বাহু ও পা। যদি আপনার ঘাম ঝরে, তাহলে ছায়াযুক্ত বা ঠান্ডা স্থানে বসুন ও কিছু পানি পান করুন- এটি করলে আপনার হার্ট রেট স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসতে পারে।

* আপনার টানেল ভিশন হচ্ছে
ক্যামব্রিজ ডিকশনারি অনুসারে, টানেল ভিশন হচ্ছে একটি মেডিক্যাল দশা যেখানে কেউ কোনো জিনিস সরাসরি চোখের সামনে না থাকলে দেখে না। যদি আপনার পেরিফেরাল ভিশন সংকুচিত হয়, তাহলে এটি একটি লক্ষণ যে আপনার রক্তচাপ কমে গেছে, যা সংজ্ঞাহীন হওয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। ডা. স্টুয়ার্ট বলেন, ‘এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকবেন না কিংবা টানেল ভিশন দূর করার জন্য চোখ মিটমিট করবেন না।’ এর পরিবর্তে অবিলম্বে কোনো চেয়ারে বসুন বা শুয়ে পড়ুন।

* আপনার বমিবমি ভাব হচ্ছে
বমিবমি ভাব অনেক দশার লক্ষণ হতে পারে (যেমন- প্রেগন্যান্সি, ফুড পয়জনিং ও অ্যালকোহল টক্সিসিটি), কিন্তু যদি আপনার বমিবমি ভাবের সঙ্গে সিনকোপের অন্যান্য উপসর্গ যেমন- টানেল ভিশন অথবা হাইপারভেন্টিলেশন থাকে, তাহলে বসুন কিংবা শুয়ে পড়ুন এবং অবিলম্বে মেডিক্যাল সেবার অনুসন্ধান করুন। ডিহাইড্রেশন বমিবমি ভাব ও সংজ্ঞাহীন উভয়কে উদ্দীপিত করতে পারে, তাই তরল পান নিশ্চিত করুন ও সূর্য থেকে দূরে ঠান্ডা স্থানে বিশ্রাম নিন।

* আপনার ত্বকে নীলচে ছোপ দেখা দিয়েছে
ধীর ও দুর্বল পালসের মানে হচ্ছে, রক্ত আপনার আউটার স্কিনের সবখানে পৌঁছছে না, যার ফলে ত্বক বিবর্ণ দেখাতে পারে এবং কখনো কখনো নীলচে। যখন আপনি বসবেন, সংবহন বাড়াতে ও রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে বাহু ও পায়ের মাংসপেশী বৃত্তাকারে ঘষুন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট


 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়