ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মলত্যাগ নিয়ে সাত প্রশ্নের উত্তর

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২০, ২৯ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মলত্যাগ নিয়ে সাত প্রশ্নের উত্তর

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : এটা সত্য যে মলত্যাগ কোনো গ্ল্যামারাস টপিক নয়, কিন্তু এটি কোনো হালকা টপিকও নয়। প্রত্যেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মলত্যাগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জন করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি মলের মাধ্যমে জানতে পারেন যে আপনার শরীরে কি ঘটছে। মলত্যাগের অভ্যাস অথবা মল দেখেই একজন মানুষ আভাস পেতে পারেন যে, তার ছোটখাট স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে নাকি প্রাণনাশক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। মলত্যাগ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* সবসময় খাবার খাওয়ার পরপরই মলত্যাগ কি খারাপ?

সবসময় খাবার খাওয়ামাত্রই মলত্যাগের জন্য বাথরুমে ছোটার মানে এই নয় যে, আপনার অতি-কার্যকর পরিপাকতন্ত্র রয়েছে। এর কারণ হতে পারে, আপনার ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট ভালোভাবে বিকশিত হয়নি, বলেন এনওয়াইইউ ল্যানগোন মেডিক্যাল সেন্টারের সহকারী অধ্যাপক ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ লিসা গাঞ্জু। তিনি যোগ করেন, ‘খাবার খাওয়ার ঠিক পরই মলত্যাগ হলো একটি রিফ্লেক্স, যা শিশুদের রয়েছে।’ কিছু লোকের ক্ষেত্রে এই রিফ্লেক্স কখনো চলে যায় না।

নিউ ইয়র্ক-প্রেসবাইটেরিয়ান অ্যান্ড ওয়েইল কর্নেল মেডিসিনের অন্তর্গত জে মোনানহান সেন্টার ফর গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল হেলথের পরিচালক ফেলিস স্কনোল সাসম্যান বলেন, ‘যেসব লোকের এই রিফ্লেক্স রয়েছে তাদের খাবার খাওয়ার পর বাথরুমের কাছে থাকা ভালো এবং এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।’ ডিনারের পর আপনার শরীর থেকে যে মল বেরিয়ে যায় তা এইমাত্র মুখে যে খাবার পুরেছেন তা নয়, তাই আপনার শরীর পুষ্টি শোষণের জন্য প্রচুর সময় পায়।

কিন্তু তরল মল, পানিতে ভাসমান মল ও তীব্র দুর্গন্ধময় মল এটা ইঙ্গিত দিতে পারে যে, আপনার শরীরে ফ্যাট ভালোভাবে শোষিত হয়নি অথবা আপনার ডায়রিয়া রয়েছে- বলেন ডা. স্কনোল-সাসম্যান। ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে বাওয়েল মুভমেন্টের ওপর শরীরের নিয়ন্ত্রণ থাকে না বললেই চলে এবং অবিলম্বে বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, আপনি এইমাত্র খাবার খেলেও কিংবা না খেলেও। ডায়রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধারণ উপসর্গগুলো হলো:

* তরল মল

* পেট ব্যথা

* পেটফাঁপা

* বমিবমি ভাব

* জরুরি ভিত্তিতে বাথরুমে যাওয়া

* মলে রক্ত।

যাদের মধ্যে শিশুদের মতো এই রিফ্লেক্স রয়েছে তাদের এটা মনে রাখা ভালো যে, খাবার খাওয়ার পর মলত্যাগের জন্য কোনো স্বাভাবিক সময় নেই, যখন তখন মলত্যাগের তাড়না আসতে পারে। কিছু পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞের মতে, উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার (যেমন- মসুর ডাল, শাকসবজি ও গোটা শস্য) হজম হতে অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশি সময় নেয়।

যেসব লোকের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস), ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ বা অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ (আইবিডি), ক্রন’স রোগ অথবা সেলিয়াক রোগের মতো মেডিক্যাল কন্ডিশন রয়েছে, তাদের খাবার খাওয়ার পর অন্যদের চেয়ে বেশি ঘনঘন বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, কারণ কিছু খাবার উপসর্গকে উদ্দীপ্ত করে।

* প্রতিদিন মলত্যাগ না করা খারাপ? মলত্যাগের স্বাভাবিক সময় কী?

এমন কোনো নিয়ম নেই যে আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিন একবার মলত্যাগ করতে হবে। ডা. স্কনোল-সাসম্যান বলেন, ‘গড়ে লোকজন দিনে একবার অথবা দু’বার মলত্যাগ করেন। কিন্তু অনেক লোকের বাথরুমে যাওয়ার সংখ্যা এর চেয়ে বড়।’ একদিন, দুইদিন অথবা এমনকি তিনদিন পরপর মলত্যাগের তাড়না আসলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই, যদি আপনার কোনো সমস্যা না থাকে, যেমন- পেট ব্যথা অথবা পেটে অন্যকোনো সমস্যা অথবা মলত্যাগের জন্য চাপ প্রয়োগ করা কিংবা ল্যাক্সাটিভ সেবন করা।

ডা. স্কনোল-সাসম্যান বলেন, ‘সকলের জন্য মলত্যাগের কোনো স্বাভাবিক শিডিউল নেই, ব্যক্তিভেদে মলত্যাগের স্বাভাবিক শিডিউল ভিন্ন হতে পারে।’ আপনি প্রতিদিন সাধারণত একবার মলত্যাগ করেন, কিন্তু হঠাৎ করে ৩/৪ বার মলত্যাগের কারণ কি? এর কারণ হতে পারে আপনার ডায়েট (যেমন- ভালোভাবে রান্না হয়নি এমন মাংস খাওয়া) অথবা আপনার ইনফেকশাস ডায়ারিয়াল ডিজিজের মতো জটিল রোগ রয়েছে।

এমনকি আপনার লাইফস্টাইলে ভালো পরিবর্তন আনার ফলেও মলত্যাগের শিডিউলে পরিবর্তন আসতে পারে- উদাহরণস্বরূপ, আপনি বেশি করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শুরু করেছেন। কিন্তু মলত্যাগের নতুন শিডিউল আপনাকে পেটের সমস্যায় ভোগালে অথবা ঘনঘন বাথরুমে যাওয়া সামাজিকভাবে বিব্রত করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

* নিয়মিত মলত্যাগ হওয়া ভালো কিছু?

হ্যাঁ, অবশ্যই। নিয়মিত মলত্যাগ হচ্ছে কিনা অথবা কখন কতটুকু মলত্যাগ হচ্ছে তা খেয়াল করা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেট সিটে বসার মানে হলো আপনার পরিপাকতন্ত্র ঠিক আছে। আপনার দিনের যেকোনো সময় টয়লেট সিটে বসার প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে বেশিরভাগ মানুষ সকালেই মলত্যাগ করেন।

ডা. স্কনোল-সাসম্যান বলেন, `অধিকাংশ লোকই সন্ধ্যায় বা রাতে ভারী খাবার খান। রাতে ভারী খাবার খেয়ে ঘুমানোর পর সকালে মলত্যাগের তাড়না আসে, কারণ ভোজনকৃত খাবারগুলো হজম হওয়া ও অন্ত্রের নির্দিষ্ট অবস্থানে চলে আসার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পেয়ে থাকে। সমতলভাবে শুয়ে ঘুমালে আপনার অন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে, তাই আপনি মলত্যাগের জন্য জেগে ওঠতে যথেষ্ট চাপ অনুভব করবেন না। কিন্তু যখন আপনি বিছানা থেকে ওঠে দাঁড়ান, তখন অন্ত্র খুলে যায় এবং সবকিছু নিম্নগামী হয়।’

মলত্যাগের আরেকটি সর্বাধিক কমন সময় হলো কর্মস্থল থেকে ঘরে ফেরার পর। এর সঙ্গে বায়োলজির সম্পর্ক নেই, কিন্তু মানব প্রকৃতির যোগসূত্র রয়েছে: লোকজন কর্মস্থল থেকে ঘরে ফিরে শিথিল হতে চান, এসময় অনেক লোক মলত্যাগের কাজটা সেরে নেন, বলেন ডা. গাঞ্জু।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : প্রিভেনশন

পড়ুন :


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুলাই ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়