ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মলত্যাগ নিয়ে সাত প্রশ্নের উত্তর (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ৩০ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মলত্যাগ নিয়ে সাত প্রশ্নের উত্তর (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : এটা সত্য যে মলত্যাগ কোনো গ্ল্যামারাস টপিক নয়, কিন্তু এটি কোনো হালকা টপিকও নয়। প্রত্যেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মলত্যাগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জন করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি মলের মাধ্যমে জানতে পারেন যে আপনার শরীরে কি ঘটছে। মলত্যাগের অভ্যাস অথবা মল দেখেই একজন মানুষ আভাস পেতে পারেন যে, তার ছোটখাট স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে নাকি প্রাণনাশক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। মলত্যাগ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* পিরিয়ডের সময় ঘনঘন মলত্যাগ করতে হয় কেন?

একটি বিব্রতকর বিষয় হলো পিরিয়ডের সময় ঘনঘন মলত্যাগ করা। পিরিয়ডের সময় একজন নারীর ক্র্যাম্প বা পেট ব্যথা, পেটফাঁপা ও ঘনঘন বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ডা. গাঞ্জু বলেন, ‘এসব সমস্যার সঙ্গে হরমোনের যোগসূত্র রয়েছে। অনেক নারী অভিযোগ করেন যে মাসিকের সময় তাদের মল নরম হয়ে যায়।’

বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে মাসিকের সময় নারীর শরীরে নিঃসরিত হরমোন প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনসের কারণে ঘনঘন মলত্যাগের জন্য বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। এই হরমোনটি সাধারণত জরায়ুকে সংকুচিত করে, কিন্তু কখনো কখনো প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস অন্ত্রে প্রবেশ করে তাদেরকে সংকুচিত করতে পারে। সংকুচিত অন্ত্রের মানে হলো অধিক বাওয়েল মুভমেন্ট বা ঘনঘন মলত্যাগ।

* স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগ করতে কতক্ষণ সময় লাগে?

একজন মানুষের কতক্ষণের মধ্যে মলত্যাগ করা উচিত? যদি আপনি দ্রুত অথবা ধীরে মলত্যাগ নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন, তাহলে আপনার জন্য খুশির সংবাদ হলো মলত্যাগের জন্য আদর্শ সময় কতক্ষণ এটারও কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে দ্রুত অথবা ধীরে মলত্যাগে কোনো ভুল নেই। ডা. গাঞ্জু বলেন, ‘আপনার পাঁচ মিনিট লাগলে ঠিক আছে। যদি আপনার ২০ মিনিট লাগে, তাহলেও ঠিক আছে।’ ডা. স্কনোল-সাসম্যান বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনার এ বিষয়ে চিন্তা না করলেও চলবে। আপনার কোলন জানে যে কখন এটি খালি হয়েছে।’

কিন্তু আপনার মলত্যাগ করতে খুব দীর্ঘ সময় লাগলে অথবা চাপ প্রয়োগ করতে হলে অথবা কোনো অস্বাভাবিক পজিশনে বসতে হলে অথবা অ্যানাসে আঙুল ঢুকাতে হলে একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ডা. স্কনোল-সাসম্যান বলেন, ‘কিছু লোকের মলত্যাগ করতে খুব কষ্ট হয়। এর কারণ হলো, তাদের শারীরিক গঠনসংক্রান্ত কিছু না কিছু অস্বাভাবিকতা রয়েছে, যা রেক্টাম বা মলদ্বারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’

* মলত্যাগের জন্য কোনো আদর্শ পজিশন রয়েছে?

ডা. স্কনোল-সাসম্যান বলেন, ‘যদি আপনার মলত্যাগ করতে খুব দীর্ঘসময় লাগে, তাহলে এর কারণ হতে পারে যে আপনি টয়লেটে সঠিকভাবে বসেন না।’ বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী মলত্যাগের জন্য আদর্শ পজিশন হলো ৩৫ ডিগ্রি কোণে বসা অথবা স্কোয়াটিং পজিশন। আপনি বাংলা কমোডে যেভাবে বসেন সেটা স্কোয়াটিং পজিশনের অন্তর্ভুক্ত। স্কোয়াটিং পজিশনে শরীরের ওজন পায়ের ওপর পড়ে, যেখানে হাঁটু ও নিতম্ব বাঁকানো থাকে। স্কোয়াটিং আপনার রেক্টামের অবস্থান এমনভাবে পরিবর্তন করে যে মলত্যাগের জন্য আপনাকে বাড়তি কোনো চাপ প্রয়োগ করতে হয় না। গবেষণায় পাওয়া গেছে, হাই কমোডে কোনোকিছুর সহায়তা ছাড়া বসলে (তখন ৯০ ডিগ্রি কোণ তৈরি হয়) কিছু সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। তাই এসব সমস্যা এড়াতে বাংলা কমোডের ব্যবহার তুলনামূলক ভালো। আপনার বাসায় মলত্যাগের জন্য একমাত্র অপশন হাই কমোড থাকলে স্কোয়াটিং পজিশন তৈরির জন্য স্কোয়াটি পটি কেনার প্রয়োজন হবে। আপনার মলত্যাগে কষ্ট না হোক। শুভ কামনা।

* কেন ছুটির দিনে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়?

আপনার পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে গেলেন, সমুদ্র সৈকতে সূর্যের নিচে আনন্দে মেতে ওঠেছেন, কিন্তু একটি বিষয় আপনাকে ভাবাচ্ছে- কয়েকদিন ধরে মলত্যাগের তাড়না আসছে না। সমস্যাটা কোথায়? এ প্রসঙ্গে ডা. স্কনোল-সাসম্যান বলেন, ‘বিমানে কয়েক ঘন্টা বসলেই আপনার কোলন শুকিয়ে যেতে যথেষ্ট। বিমানের ভেতরের বায়ুচাপ বাইরের বায়ুচাপ থেকে ভিন্ন, এর ফলে আপনার শরীর ও অন্ত্রের পানি ধীরে ধীরে শোষিত হয়ে পড়ে।’

সৈকতে হই-হুল্লোড় করা কিংবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে নিমগ্ন হয়ে পড়লে পর্যাপ্ত পানি পানের কথা ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়, একারণে পানিশূন্যতা আরো বেড়ে যায়। অবকাশযাপনের সময় আপনি প্রচুর পরিমাণে এমন খাবার (সম্ভবত ভাজা ও চর্বিবহুল খাবার) খেতে পারেন, যা সাধারণত বাসায় খান না। এসবকিছু আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগাতে পারে। এছাড়া অপরিচিত স্থান অথবা ভিন্ন টাইম জোনও আপনার কোলনকে অতিরিক্ত লাজুক করতে পারে!

তথ্যসূত্র : প্রিভেনশন

পড়ুন : 




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়