ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনাভাইরাস: যেসব খাবার বেশি বেশি খেতে হবে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১০ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাস: যেসব খাবার বেশি বেশি খেতে হবে

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে মানুষের আতঙ্ক। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের মনে ভাইরাসটি সম্পর্কিত অনেক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারিতে কিভাবে সুস্থ থাকা যায়? কোন খাবার খেলে কোভিড-১৯ এড়ানো যাবে?

এটা ঠিক যে, পুষ্টিকর খাবার ইমিউন সিস্টেম তথা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে, কিন্তু কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করবে এমন কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিটিক্সের মুখপাত্র মেলিসা মজুমদার বলেন, ‘করোনাভাইসের সংক্রমণ এড়াতে সহায়তা করে এমনকোনো জাদুকরী খাবার বা পুষ্টির সাপ্লিমেন্ট নেই।’

কিন্তু আপনার জন্য আশাপ্রদায়ক খবর হচ্ছে, কিছু পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খেয়ে ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্রম উন্নত করা যায়, যা এই মহামারিতে আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। যাদের ইমিউন সিস্টেম যথেষ্ট শক্তিশালী তাদের মধ্যে করোনাভাইসের উপসর্গ তীব্র হওয়ার সুযোগ পায় না অথবা কোভিড-১৯ এর মারাত্মক জটিলতার ঝুঁকি কমে যায়। কোভিড-১৯ এর বেশিরভাগ কেসে মৃদু উপসর্গ দেখা গেছে। এসব মৃদু উপসর্গের রোগীদের ইমিউন সিস্টেম অন্যদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী ছিল। উন্নত ইমিউন সিস্টেমের রোগীরা করোনাভাইসের সংক্রমণ থেকে আরোগ্যলাভ করে ঘরে ফিরছেন।
ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। ইমিউন সিস্টেমের কাজ নির্ভর করে পুষ্টির যোগানের ওপর। পুষ্টির ঘাটতিতে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল ইমিউন সিস্টেম নিয়ে সংক্রমণ বা রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করা যায় না। ফলে শরীর মারাত্মক জটিলতায় ভুগতে থাকে। এখানে ইমিউন সিস্টেম বা শরীরের রোগপ্রতিরোধ তন্ত্রকে শক্তিশালী করতে পারে এমনকিছু খাবার দেয়া হলো।

গাজর, মিষ্টি আলু ও মিষ্টি কুমড়া: বিটা ক্যারোটিন শরীরে রূপান্তরিত হয়ে ভিটামিন এ হয়ে যায়, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজন। এটি বিষাক্ত পদার্থ ও জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখাতে অ্যান্টিবডিকে সাহায্য করে, বলেন ডা. মজুমদার। বিটা ক্যারোটিনের কিছু ভালো উৎস হচ্ছে: মিষ্টি আলু, গাজর, আম, পালংশাক, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, মিষ্টি কুমড়া ও খরমুজ।

লেবু, কমলা ও কাঁচামরিচ: ভিটামিন সি রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং লিম্ফোসাইট বা শ্বেত রক্তকণিকাকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা শরীরকে কোন ধরনের সুরক্ষা প্রয়োজন তা নির্ধারণে সহায়তা করে, বলেন ডা. মজুমদার। কিছু গবেষণা সাজেস্ট করছে, উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি (কমপক্ষে ২০০ মিলিগ্রাম) করোনাভাইস সংক্রমণ জনিত উপসর্গের স্থায়িত্ব কমাতে পারে।ভিটামিন সি সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবারের সমন্বয় থেকে খুব সহজেই ২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পেয়ে যাবেন, যেমন- লেবু, কমলা, মোসাম্বি, স্ট্রবেরি, কাঁচামরিচ, ব্রোকলি, বাঁধাকপি ও ফুলকপি।

ডিম, তৈলাক্ত মাছ ও পনির: বোস্টন ইউনিভার্সিটির ভিটামিন ডি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ  মাইকেল হলিক বলেন, ‘ভিটামিন ডি শ্বেত রক্তকণিকার কার্যক্রম ও সংখ্যাও পরিবর্তন করে, যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার হ্রাস করতে পারে। ভিটামিন ডি ঘাটতি ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দিয়ে উর্ধ্ব শ্বাসতন্ত্রে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।’ ভিটামিন ডি এর কিছু ভালো উৎস হচ্ছে: তৈলাক্ত মাছ, ডিম, মাশরুম, পনির, ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার এবং ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড জুস।

শিমের বিচি, বাদাম ও সামুদ্রিক খাবার: ডা. মজুমদার বলেন, ‘জিংক আপনার ইমিউন সিস্টেমের কোষের বৃদ্ধিসাধন করে ও শরীরের শত্রু-মিত্র নিরূপণে সহায়তা করে।’ একটি মেটা অ্যানালাইসিস থেকে জানা গেছে, জিংক সাপ্লিমেন্টের ব্যবহারে ঠান্ডা জনিত উপসর্গের স্থায়িত্ব কমেছে। এই বিষয়টি এটা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেলে করোনাভাইস সংক্রমণ জনিত উপসর্গের স্থায়িত্বও কমতে পারে। জিংকের কিছু উল্লেখযোগ্য উৎস হচ্ছে: শিমের বিচি ও অন্যান্য বিনস, ছোলা, মসুর ডাল, জিংক ফর্টিফায়েড সিরিয়াল, গম, চিংড়ি, ঝিনুক, কাঁকড়া, বাদাম, বীজ জাতীয় খাবার, দই, গরুর মাংস ও মুরগির মাংস।

তরমুজ ও স্যূপ: ভাইরাসের বিপক্ষে ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্রম সঠিকভাবে সচল রাখতে উচ্চ পরিমাণে পানি রয়েছে এমন খাবারও খেতে হবে। ডা. মজুমদার বলেন, ‘শরীরে মৃদু পানিশূন্যতাও ইমিউন সিস্টেমের কাজে বিঘ্নতা ঘটাতে পারে।’ পুরুষ ও নারীদের প্রতিদিন যথাক্রমে ৩.৭ ও ২.৭ লিটার পানি পানের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। শরীরে পানিশূন্যতা রোধে পানি-সমৃদ্ধ খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার খাদ্যতালিকায় তরমুজ ও পেঁপের মতো ফল, শসা ও টমেটোর মতো সবজি এবং স্যূপ রাখুন।

মুরগির মাংস, মসুর ডাল ও ছোলা: ইমিউন কোষ ও অ্যান্টিবডির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে প্রোটিন। ইমিউন সিস্টেমের কাজ সম্পাদনে প্রোটিন অসামান্য অবদান রাখে। প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয় উৎস থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রোটিনের কিছু উল্লেখযোগ্য উৎস হচ্ছে: গরুর মাংস, দুধ, পনির, মুরগির মাংস, ডিম, মাছ, বাদাম, বীজ জাতীয় খাবার, মসুর ডাল, ছোলা এবং শিমের বিচি ও অন্যান্য বিনস।

কলা ও দই: প্রোবায়োটিক হলো শরীরের জন্য উপকারী জীবন্ত অণুজীব। অন্যদিকে প্রিবায়োটিক হলো খাবারের একপ্রকার আঁশ, যা মানব শরীর হজম করতে পারে না, কিন্তু এটি পরিপাকতন্ত্রের অণুজীবদের জন্য আদর্শ খাবার। প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক পরিপাকতন্ত্রে উপকারী অণুজীবের ভারসাম্য ও সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, এর ফলে আমাদের ইমিউন সিস্টেমও উপকৃত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব খাবার খেলে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ে। প্রোবায়োটিকের ভালো উৎস হচ্ছে গাঁজানো খাবার, যেমন- দই। প্রিবায়োটিকের কিছু উল্লেখযোগ্য উৎস হলো: গোটা শস্য, কলা, পেঁয়াজ, রসুন, শতমূলী ও শিমের বিচি/বিনস।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

 

ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়