ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

যে ৮ মুহূর্তে কার্বোহাইড্রেট খাবেন না

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৭, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে ৮ মুহূর্তে কার্বোহাইড্রেট খাবেন না

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : কার্বোহাইড্রেট আমাদের শত্রু নয়। স্বাস্থ্যকর মিশ্র কার্বোহাইড্রেট যেকোনো সুষম খাবারের জন্য প্রয়োজন, কারণ এসব অনেক উপকার সাধন করে।

কার্বোহাইড্রেট ছাড়া আপনি কম শক্তি, মানসিক অস্থিরতা, শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারেন। যদিও কিছু নির্দিষ্ট মুহূর্তে কার্বোহাইড্রেট বর্জনে আপনার ফিটনেস লক্ষ্য অর্জন হতে পারে বা কোনো ইভেন্ট সফল হতে পারে। এ প্রতিবেদনে কিছু মুহূর্তে কার্বোহাইড্রেট বর্জনের পক্ষে বিশেষজ্ঞদের মতামত বা ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হল।

১. গভীর রাতে
আপনি যদি গভীর রাতে বিনোদনের (যেমন- টিভি দেখা, সিনেমা দেখা, নাটক দেখা, ইন্টারনেটে ভিডিও দেখা ইত্যাদি) সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় হালকা খাবার বা চিপস খান তাহলে আপনি সম্ভবত নিজের স্বাস্থ্যের ওপর অবিচার করছেন। এর পরিবর্তে আপনি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- মেডিটের‍্যানিয়ান চিকেন বা একমুঠো বাদাম খেতে পারেন। নিউ ইয়র্কের লিনক্স হিল হসপিটালের ইমার্জেন্সি মেডিসিনের এমডি এবং সহকারী অধ্যাপক রবার্ট গ্লেটারের মতে, ‘স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী দিনের প্রধান প্রধান খাবার বেলায় ভারী খাবারের সঙ্গে উচ্চ গুণ সমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেট খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত।’

গভীর রাতে বিনোদনের সময় আপনি কর্মক্ষম থাকেন না বিধায় কার্বোহাইড্রেট পুড়ে না। তাই গভীর রাতে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় স্ন্যাকস বা হালকা খাবার খাওয়া উত্তম নয়, বিশেষ করে আপনি যদি ওজন কমাতে চান। কিক অ্যাট ফিফটি ফাইভের মালিক এবং প্রতিষ্ঠাতা রেবেকা গাহান বলেন, ‘এ সময়টাতে (গভীর রাত) আমরা অতিমাত্রায় ইনসুলিন সংবেদনশীল হয়ে যাই, এর ফলে ব্লাডস্ট্রিম বা রক্তস্রোতে বেশি করে গ্লুকোজ বা শর্করা মুক্ত হয় যা মেদ বৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।’

২. ওয়ার্কআউটের আগে
কার্বোহাইড্রেটের বোঝা বহনের দিন শেষ হয়ে গেছে। আপনি যদি অ্যাথলেটিক ইভেন্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান বা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে চান বা শ্রমসাধ্য ওয়ার্কআউট করতে চান তাহলে এসবের আগে কার্বোহাইড্রেট স্ন্যাকস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার যদি ওয়ার্কআউটের আগে স্ন্যাকসের প্রয়োজন হয় তাহলে সেসব খাবার খান যা পাকস্থলীকে সুস্থিত রাখে এবং পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করে। অ্যারিজোনার পুষ্টিবিজ্ঞানী জেনিফার বাওয়ারস ব্যাখ্যা করেন যে, অনুশীলনের আগে এবং অনুশীলনের সময় (যেমন- সাইকেল স্প্লিন্টস) কার্বোহাইড্রেট খেলে বমি বমি ভাবসহ জিআই উপসর্গ বেড়ে যেতে পারে। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা গবেষণায় পেয়েছেন যে, যেসব অ্যাথলেটরা ওয়ার্কআউটের আগে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করেন তাদের অত্যধিক বমি বমি ভাবের অভিজ্ঞতা হয়।

৩. বড় ইভেন্টের আগে
কোনো স্পেশাল প্রোগ্রামে (যেমন- বিয়ের অনুষ্ঠান বা ফটোশুট) অংশগ্রহণের আগে কুকিজ বা ক্রয়স্যান্ট খাওয়ার লোভ সংবরণ করুন। এসব খেলে আপনার পেট স্ফীতি হতে পারে। পার্সোনাল ট্রেইনার এবং ‘টুয়েন্টি ফাইভ ডেইজ: অ্যা প্রোভেন প্রোগ্রাম টু রিওয়্যার ইউর ব্রেইন, স্টপ ওয়েইট গেইন, অ্যান্ড ফাইন্যালি ক্রাশ দ্য হ্যাবিটস ইউ হেইট’-এর লেখক ড্রু লোগান বলেন, ‘কার্বোহাইড্রেট পানিতে আবদ্ধ থাকে এবং কোষকে হাইড্রেট করে। কোনো ইভেন্টের আগে শ্বেতসারময় কার্বোহাইড্রেট সীমিত করে ফেললে পেটের স্ফীতি কমে যাবে, কারণ এতে পানিতে দ্রবীভূত হওয়ার জন্য কম গ্লাইকোজেন থাকবে। ফলে স্ফীতিও কম থাকবে।’ মিষ্টি আলু বা পাস্তায় ডুব দেওয়ার জন্য ইভেন্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

৪. সকালের প্রথম খাবার হিসেবে
দিনের শুরুতে ভারী খাবারের সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত কার্বোহাইড্রেট খেলে সবচেয়ে ভালো হয়। এক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেট পুড়ে শক্তি উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট সময় থাকে। কিন্তু সকালের বা দিনের একদম প্রথম খাবার হিসেবে সাধারণ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার, যেমন- পাউরুটি, ডোনাট, বেগেট বা অন্যান্য পাউরুটি খাওয়া ঠিক হবে না। এনওয়াইসি সার্জিকেল অ্যাসোসিয়েটসের এমডি এবং সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেভিড গ্রেইউনার বলেন, ‘কার্বোহাইড্রেট, বিশেষ করে সাধারণ কার্বোহাইড্রেট শরীরের প্রধান অ্যানাবলিক হরমোন ইনসুলিনে স্পাইক সৃষ্টি করে। স্পাইক বিশ্রামাবস্থার উদ্রেক করে। এর ফলে ভারী খাবারের পর নিদ্রালুতা বা ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে অথবা ফুড কোমা (খাবার অচেতনবস্থা) হতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সাধারণত যখন আপনার সর্বোচ্চ মানসিক সতর্কতা প্রয়োজন তখন কার্বোহাইড্রেট (বিশেষ করে চিনি) খাওয়ার অনুপযুক্ত সময়।’ এর পরিবর্তে প্রোটিন সমৃদ্ধ নাশতার খোঁজ করুন যাতে বেশি পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে। কার্বোহাইড্রেট সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে না চাইলে এক বাটি ওটমিল বা গ্র্যানোলা দইয়ের ওপর ছিটিয়ে খেতে পারেন অথবা শণ বীজও যুক্ত করতে পারেন যাতে প্রচুর ফাইবার এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা একাগ্রতার উন্নয়ন ঘটায় এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ স্থিতিশীল রাখে।

৫. ভ্রমণের সময়
শক্তি এবং সতর্কতা বজায় রাখতে এয়ারপোর্ট বা গ্যাস স্টেশনে ভারী এবং উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার পরিহার করুন। তার পরিবর্তে হালকা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে পারেন যা কয়েক ঘন্টা ধরে আপনাকে শক্তি যোগাবে এবং পাকস্থলীকে তৃপ্ত রাখবে। ড. গ্রেইউনার বলেন, ‘বাদাম, অ্যালমন্ড বাটার, হুইট ক্র্যাকার্স, পনির, দই এবং এ জাতীয় আরো অনেক খাবার আপনাকে পরিপুষ্ট রাখবে আপনার স্বাভাবিক খাবারের সময় না আসা পর্যন্ত। এসব খাবারে অল্প পরিমাণ স্বাস্থ্যকর মিশ্র কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই এসব খাবার সঠিক মাত্রায় খেলে আপনি আলস্যপরায়ণ হবেন না এবং শরীরে শক্তি যোগান ঠিক থাকবে।’ তিনি পরামর্শ দেন, ‘দীর্ঘ যাত্রার আগে আপনি যেসব খাবার এবং তরল গ্রহণ করছেন তা নিম্ন শর্করার কিনা, কার্বোহাইড্রেট ধীরে পোড়ায় কিনা এবং পরিমিত পরিমাণে প্রোটিন আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। আমি সাধারণত হিউমাস প্যাকস, মাল্টিগ্রেইন ক্র্যাকার্স, ভেজিটেবলস, গৃহজাত ট্রেইলমিক্স এবং একটি প্রোটিন বার নেব আমার পরবর্তী স্বাভাবিক খাবারের সময় না আসা পর্যন্ত।’ ট্রেইলমিক্স এবং প্রোটিন বারে কার্বোহাইড্রেট ও শর্করার পরিমাণ কম কিনা নিশ্চিত হোন।

৬. অল্প নিদ্রার ক্ষেত্রে
একটি ঘুমহীন রাতের পর আপনার শরীর কিছু সুলভ ও সাধারণ কার্বোহাইড্রেটের কামনা করতে পারে। নিজের মধ্যে স্থিরতা ও উদ্যমশীলতা সঞ্চার করতে এই কামনাকে প্রোটিন খেয়ে প্রতিহত করুন। এনওয়াইসি সার্জিকেল অ্যাসোসিয়েটসের চিকিৎসক ড. হলিঙ্গসওর্থ বলেন, ‘একটি ঘুমহীন রাতের পর শরীরের বিপাক ভারসাম্যের বাইরে চলে যায়। যেকোনো শারীরিক পীড়নে ঘুম হারিয়ে গেলে স্ট্রেস হরমোন বৃদ্ধি পায় এবং তা করটিসলে বৃদ্ধি পেয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।’ হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকদের মতে, ‘করটিসল আপনার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ক্ষুধা জাগ্রত করবে যা শারীরিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে।’ ড. হলিঙ্গসওর্থ পরামর্শ দেন, ‘রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার আদর্শ উপায় হল নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ভেজিটেবলস এবং প্রোটিন গ্রহণে শরীরকে কর্মক্ষম রাখা ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা।’ বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে নিদ্রাহীন দীর্ঘ রাত কাটানোর পর সারা দিনব্যাপী দৃঢ় ও টেকসই শক্তি পেতে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।

৭. অনুশীলনের পরে
আপনি শরীরে শক্তি আনয়নের জন্য ফ্যাট গ্রহণ করতে চান এবং শরীরকে কার্বোহাইড্রেট থেকে বঞ্চিত করার ফলে এটি শক্তির জন্য সুপ্ত ফ্যাট কোষে রূপান্তর হবে। প্রোটিনও অবশ্য উপকারী, কারণ শরীর এটি ব্যবহার করে পেশি টিস্যু পুনর্গঠন করে এবং কোষীয় সংস্কারকার্য সম্পাদন করে। কার্বোহাইড্রেট শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী শক্তির জন্য জমা হয়। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে অনুশীলনের পর কার্বোহাইড্রেট হ্রাস করে ইনসুলিনের মাত্রা কমান। আপনি ওয়ার্কআউট পরবর্তী স্ন্যাকস হিসেবে মুষ্টি আকারের একটি ছোট আপেল, অর্ধমুঠো আখরোট এবং ১০০ ক্যালরি চিনিমুক্ত দই খান। এতে আপনার চর্বি পুড়বে, অপুষ্ট পেশি টিস্যু গঠন হবে এবং বিপাক বৃদ্ধি পাবে।

৮. শ্রান্ত বিকালে
বিকালে আপনার উপকারী ফ্যাট ও প্রোটিন এবং পরিমিত মাত্রায় মিশ্র কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন হবে। বিকালে ঘুম ঘুম ভাব, ক্লান্তি কিংবা আলস্য মুহূর্তে শর্করা এবং অতি প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট পরিহার করতে পারেন। মধ্য বিকালের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের শক্তি কমে যায় এবং এ সময়ে শর্করা ও প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার জন্য তারা ক্ষুধিত হয়। তারা যদি ক্যান্ডি (মিষ্টান্ন) বা প্রেটজেল (লবণাক্ত বিস্কুট) খায় তাহলে খুব শিগগির শক্তি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে এবং রাতে অত্যধিক পরিমাণে ভোজন করবে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়