ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১০ ১৪৩১

গরমকালে পায়ের সমস্যা ও সমাধান

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৪ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১০:১৮, ৪ এপ্রিল ২০২১
গরমকালে পায়ের সমস্যা ও সমাধান

বছরের যেকোনো সময় পায়ে সমস্যা হতে পারে, তবে পায়ের চিকিৎসকদের কাছে গরমকালে রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে।

অনেকে শীতকালে পায়ের একটু যত্ন নিলেও অন্যান্য সময় বেশ উদাসীন হয়ে পড়েন। কিন্তু পায়ের সুস্থতা বজায় রাখতে সবসময় পায়ের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, ঋতু যেটাই আসুক না কেন। এখানে পায়ের কিছু সাধারণ সমস্যা ও ঘরোয়া সমাধান দেয়া হলো।

* ব্যথা লাগছে? সাপোর্ট দিন

আরো পড়ুন:

যেসব জুতায় (যেমন- ফ্লিপ ফ্লপ বা স্যান্ডেল) আর্ক সাপোর্ট নেই সেগুলো পায়ে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। একারণে চিকিৎসকেরা এসব জুতা বেশিক্ষণ পরে থাকতে অনুৎসাহিত করেন। জুতা কেনার সময় স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন, যেখানে অবশ্যই আর্ক সাপোর্ট ইনসোল থাকতে হবে। নিউইয়র্ক সিটির পোডিয়াট্রিস্ট জোহানা ইয়নার জুতায় ইনসোল ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছেন। জুতায় ইনসার্ট বা ইনসোল ব্যবহার করলে গোড়ালি, হাঁটু ও পিঠের ব্যথা কমে যায় বা এড়ানো সম্ভব হয়। আর্ক সাপোর্ট না পরলে সময় পরিক্রমায় এসব স্থানে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। আরেকটি কৌশল হলো: যেকোনো অস্বস্তি উপশম করতে পা, গোড়ালি ও কাফকে দিনশেষে প্রসারণ করুন।

* ফোসকা পড়েছে? ঢেকে রাখুন

পায়ে ফোসকার আবির্ভাব ঘটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, এমনকি যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বনের পরও ফোসকা ওঠতে পারে। কিন্তু পোডিয়াট্রিস্টের পরামর্শ হলো, এটাকে ফাটবেন না। ফোসকাকে ফাটলে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। যা করবেন তা হলো, ফোসকাতে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম মেখে একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে দিন। এটা কিছুদিনের মধ্যে সেরে ওঠবে। কিন্তু এটা অস্বাভাবিক বড় হলে অথবা ভেতরে রক্ত দেখা গেলে দ্রুত পোডিয়াট্রিস্টের কাছে যান।

* ঘষা খাচ্ছে? ব্যান্ডেজ ব্যবহার করুন

নতুন জুতা পরতে কে না পছন্দ করে? কিন্তু সমস্যা হলো, এর কিছু অংশ পায়ের সঙ্গে ঘষা খেয়ে ফোসকা ওঠে বা ছিঁড়ে যায়। কিন্তু আর দুশ্চিন্তা করবেন না, এই সমস্যা প্রতিরোধে ব্লিস্টার ব্যান্ডেজ বা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ ব্যবহার করতে পারেন। পায়ের যেখানে ঘষা খায় সেখানে এই ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিন।

* ঘামছে? অ্যান্টিপারস্পাইরেন্ট স্প্রে করুন

পা ঘামলে কেবল দুর্গন্ধই ছড়ায় না, গোড়ালি ফাটতে পারে বা ত্বক লিজার্ডের মতো হতে পারে বা ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। পায়ের আঙুলে প্রায় ২৫০,০০০ ঘামগ্রন্থি রয়েছে, যেখান থেকে প্রতিদিন ০.২৫০-০.৩০০ লিটার ঘাম বের হতে পারে। পায়ের ঘাম কমাতে প্রতি সকালে ও রাতে অ্যান্টিপারস্পাইরেন্ট বা ডিওডোরেন্ট স্প্রে করতে পারেন, পরামর্শ দেন ক্যালিফোর্নিয়ার ফুট-অ্যান্ড-অ্যাঙ্কেল সার্জন ভেঞ্জয় সাং। অ্যান্টিপারস্পাইরেন্টের মেটাল ঘামগ্রন্থিকে ব্লক করে।

* চুলকাচ্ছে? ভিনেগার বাথ নিন

পায়ে সংক্রমণ হলে বা চুলকালে ডা. সাং মল্ট বা হোয়াইট ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে পা ভেজাতে পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে এই ভিনেগার বাথ সংক্রমণটিকে নিরাময় করবে না, কিন্তু চুলকানি কমাবে।

* ক্যানসারের ভয়? সানব্লক ব্যবহার করুন

এমনকি যারা সানব্লক বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন তাদের অনেকেই পায়ে প্রোডাক্টটি ব্যবহার করেন না। কিন্তু ডা. ইয়নারের মতে, গরমকালে এটাকে পায়ের যত্নের রুটিনেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এর প্রয়োজন রয়েছে। পায়ের ওপর ও আঙুলের ফাঁকে অন্তত এসপিএফ ৩০ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

* ছত্রাক সংক্রমণ? বেবি পাউডার ছিটান

ডা. ইয়নার ছত্রাক বিনাশ করতে তার জুতায় প্রতিদিন ফুট পাউডার, বেবি পাউডার বা কর্নস্টার্চ ছিটিয়ে থাকেন। এর ফলে পায়ে ছত্রাকের সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হয়। ছত্রাকের সংক্রমণ সারাতেও এটা কার্যকরী। অনেকেই পায়ের চুলকানিকে অবহেলা করেন, কিন্তু এটা ছত্রাক সংক্রমণ অথবা অন্যকোনো সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। লস গ্যাটোসের পোডিয়াট্রিস্ট অমি শেঠ পাবলিক প্লেস ও লকার রুমে খালিপায়ে হাঁটতে নিষেধ করেছেন, কারণ উষ্ণ-আর্দ্র স্থান হলো জীবাণুর বংশবিস্তারের আদর্শ পরিবেশ।

* দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে? জুতাকে বাতাসে শুকিয়ে নিন

এটা ঠিক যে দুর্গন্ধ ছড়ানো পায়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, কিন্তু এটি বেশ বিরক্তিকর বা বিব্রতকর হতে পারে। যারা আবদ্ধ জুতা পরেন তাদের এই সমস্যা বেশি হয়। এটা এড়াতে জুতা ব্যবহারের পরপরই বাতাসে শুকাতে দিন। এতে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। টানা দু’দিন একই জুতা না পরাই ভালো।

* শিশুর পায়ে ব্যথা? রানিং সুজ পরান

শিশুর একটি স্বভাব হলো, খালিপায়ে যেখানে সেখানে দৌঁড়াদৌঁড়ি করা। হয়তো একারণে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় গরমকালে ডা. সাংয়ের কাছে শিশু রোগী বেশি আসে, বিশেষ করে গোড়ালি সংক্রান্ত ব্যথা নিয়ে। পায়ের গ্রোথ প্লেটের অতি ব্যবহারের কারণে এই ব্যথা হয়ে থাকে। সমস্যাটি প্রতিরোধে শিশুকে ভালো জুতা পরাতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় রানিং সুজ পরালে, কারণ এতে এক্সট্রা সাপোর্ট রয়েছে। জুতা কেনার আগে বেন্ড টেস্ট করুন: যত বেঁকে যাবে, এর সাপোর্ট তত কম হবে। রানিং সুজের পরিবর্তে স্পোর্ট স্যান্ডালও পরাতে পারেন, কিন্তু এতে সাপোর্ট কম।

ঢাকা/ফিরোজ/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়