ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: যা জানা জরুরি

দেহঘড়ি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৯, ৩ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৮:৩৫, ৩ জুলাই ২০২১
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট: যা জানা জরুরি

বলিউড চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজ কৌশল গত ৩০ জুন নিজ বাসায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে ৪৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। সম্প্রতি ইউরো ফুটবল টুর্নামেন্টে ২৯ বছর বয়সী ডেনিশ তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন খেলার মাঠেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার আগে খেলার মাঠেই জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ ‘সিপিআর’ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জানা যায়, এই ফুটবল খেলোয়ার কার্ডিয়ার অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

এই ঘটনা দুটো কেবল একটি ব্যাপারেই সতর্ক করছে- তরুণ কিংবা বয়স্ক যেকারো কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে। সুতরাং নিজের এবং প্রিয়জনের জীবনরক্ষায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সতর্কতামূলক লক্ষণ ও সঠিক পদক্ষেপ সম্পর্কে সচেতনা হওয়া খুব জরুরি।

গুরুতর অবস্থার লক্ষণ

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলো খুব কমন একটি হৃদরোগ, সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে এটি প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। হৃৎপিণ্ড যখন হৃৎকম্পন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তখন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। হৃৎপিণ্ডে হঠাৎ গোলযোগের ফলে এটি হয় এবং এর ফলে হার্টবিট অনিয়মিত হতে শুরু করে। হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্প বন্ধ করে দেওয়ায় শরীরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যায় না। অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া না গেলে, এমনকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার মানুষের মাত্র কয়েক মিনিটেই মৃত্যু হতে পারে।

কারো যখন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, তখন সে বিভিন্ন উপসর্গের সম্মুখীন হতে পারে। পি.ডি হিন্দুজা হসপিটাল অ্যান্ড এমআরসি’র কলসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. আমেয়া উদয়ভার বলেন, ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আর হার্ট অ্যাটাক দুই ধরনের রোগ। দুটোর মধ্যে পার্থক্য বোঝাটা জরুরি। কার্ডিয়ার অ্যারেস্ট হলে হার্টবিট খুব দ্রুত বা ধীর হয়ে যেতে পারে এবং হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায়। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে হার্টের কোনো অংশের মাংসপেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার ফলে ওই অংশটি আর রক্ত পাম্প করতে পারে না। এতে হার্টের যথেষ্ট ক্ষতি হলেও হার্টবিট একেবারে বন্ধ হয় না।

ডা. উদয়ভার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সতর্কতামূলক লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলেছেন। একটি লক্ষণ হলো অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং আরেকটি হলো একটানা বুকে ব্যথা। তার মতে, যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়েন, তাহলে এটি হার্টবিট সম্পর্কিত সতর্কতামূলক লক্ষণ হতে পারে। অর্থাৎ হার্টবিট খুব দ্রুত বা ধীর হয়ে যেতে পারে।

এছাড়া বিশেষ করে বিশ্রামকালীন সময়ে কেউ যদি বার বার বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ইসিজি করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. উদয়ভার। তার মতে, এক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ ইসিজি করুন। হার্টে কোনো ব্লক থাকলে অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করুন এবং ব্লক খুলুন। এতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।

ঝুঁকি যাদের

হার্ট বা করোনারির রক্তনালীজনিত সমস্যা থাকলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সম্ভবনা রয়েছে, এছাড়াও হার্টের সমস্যার পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, রক্তে বেশিমাত্রায় কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি, টাইপ টু ডায়াবেটিস, হরমোন ঘটিত সমস্যা, সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, ধূমপান, মদ্যপান। মূলত মধ্যবয়স্কদের ঝুঁকি বেশি হলেও বর্তমানে কমবয়সীরাও যথেষ্ট ঝুঁকির মুখে রয়েছেন।

প্রতিরোধে করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে চাইলে আপনার ফিট এবং সুস্থ থাকা জরুরি। খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর, কম তৈলাক্ত, কোলেস্টেরল এবং শর্করা কম রয়েছে এমন খাবার রাখুন। অস্বাস্থ্যকর, ওজন হতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে এমন মিষ্টিজাতীয় খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার শরীরকে ফিট রাখবে এবং দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক অসুস্থতা এড়ানোর সুবিধা দেবে ।

আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন, বিশেষ করে যদি আপনি ধূমপায়ী এবং অ্যালকোহলিক হয়ে থাকেন। মদ্যপান এবং ধূমপান হার্টের স্বাস্থ্যের জটিলতা বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত পদক্ষেপ হিসেবে, আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং হার্টের স্বাস্থ্য বিষয় জানতে নিয়মিত চেকআপ ও স্ক্রিনিং করানো উচিত। 

কারো কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে আপনার যা করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আকস্মিকভাবে হতে পারে। এর বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে, যা অন্যান্য সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। কাউকে হঠাৎ অচেতন হয়ে যেতে দেখলে এবং তার নাড়ি ও শ্বাসের স্পন্দন পাওয়া না গেলে, আপনাকে দ্রুত যা করতে হবে তা হলো-

* জরুরি চিকিৎসা সহায়তার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে। 

* জরুরি চিকিৎসার আগপর্যন্ত তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) শুরু করতে হবে।

জীবন বাঁচাতে সিপিআর যেভাবে করবেন

অচেতন হওয়া ব্যক্তির বুকের মাঝখানে আপনার দুই হাত একসঙ্গে করে ৩০ বার চাপ দিতে হবে। জোরে জোরে এবং দ্রুতভাবে চাপ দিয়ে যেতে হবে। রোগীর প্রতিক্রিয়া না পাওয়া পর্যন্ত এবং জরুরি চিকিৎসা সেবা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সিপিআর করা চালিয়ে যেতে হবে।

ঢাকা/ফিরোজ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়