এমপক্স প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ছবি: প্রতীকী
মাঙ্কিপক্সের নতুন ভ্যারিয়েন্টের নামকরণ হয়েছে এমপক্স। এই রোগ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই আতঙ্ক রযেছে বাংলাদেশিদের মধ্যেও।
এই রোগ বিষয়ে রাইজিংবিডির সাথে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এর সংক্রামক বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলীম, পিএইচডি।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) আফ্রিকায় চলমান Mpox (এমপক্স), Monkeypox (মাঙ্কিপক্স) প্রাদুর্ভাবকে একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা (global health emergency) ঘোষণা করেছে, কারণ আরও গুরুতর একটি স্ট্রেন, ক্লেড Ib (clade Ib), দ্রুত আফ্রিকার একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রাদুর্ভাবটি কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে (Democratic Republic of Congo) কেন্দ্র করে হয়েছে এবং এতে ১৩টি আফ্রিকান দেশে ১৭,০০০-এরও বেশি মানুষের সংক্রমণ এবং ৫০০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। WHO— সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় টিকা কর্মসূচি, নজরদারি (surveillance) বৃদ্ধি এবং গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলীম আরও বলেন, ‘মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স একটি ভাইরাসজনিত জূনোটিক রোগ যা মাঙ্কিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট—একটি অর্থোপক্সভাইরাস যা স্মলপক্স (Small pox) ভাইরাসের সাথে সম্পর্কিত। বিশেষ করে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে। ১৯৮০ সালে স্মলপক্স নির্মূল হওয়া সত্ত্বেও মাঙ্কিপক্স এখনও বিদ্যমান। যা ২০২২ সালের মে মাস থেকে আফ্রিকার বাইরের অঞ্চলে দেখা দিয়েছে।’
ভাইরাসটি দুটি ক্লেডে বিভক্ত: ক্লেড (কঙ্গো বেসিন), যা সাধারণত আরও গুরুতর রোগ সৃষ্টি করে, এবং ক্লেড (পশ্চিম আফ্রিকান) সংক্রমণ, যা সংক্রমিত প্রাণী বা মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগের (direct contact) মাধ্যমে শরীরের তরল (body fluids), শ্বাসের ফোঁটা (respiratory droplets) এবং দূষিত বস্তু দ্বারা ঘটে।
মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলো হলো – জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, পেশীর ব্যথা এবং একটি বৈশিষ্ট্যযুক্ত ফুসকুড়ি (rash) যা কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় এবং সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়।
মাঙ্কিপক্স কীভাবে নির্ণয় করা যায়
এ সম্পর্কে ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলীম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে পিসিআর (PCR) পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসকুড়ির নমুনা নিয়ে মাঙ্কিপক্স নির্ণয় করা হয়। যদিও মাঙ্কিপক্সের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, স্মলপক্সের টিকা প্রায় ৮৫% সুরক্ষা প্রদান করে। বিশেষ করে আফ্রিকার বাইরের অঞ্চলে মাঙ্কিপক্সের পুনরুত্থান বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য প্রস্তুতি, নজরদারি এবং টিকাদানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। এর ক্রমবর্ধমান ঘটনা আংশিকভাবে নিয়মিত স্মলপক্স টিকাদান বন্ধ হওয়ার সাথে যুক্ত। যা পূর্বে মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করেছিল।’
মানকিপক্স কিভাবে শরীরে অগ্রসর হয়? প্রশ্নের জবাবে ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলীম বলেন, ‘রোগটি সাধারণত ১ থেকে ৩ দিনের জন্য জ্বরের পর্যায় দিয়ে শুরু হয়। তারপর একটি চর্মরোগের পর্যায় আসে যেখানে ক্ষতগুলো ম্যাকিউল (macules) থেকে স্ক্যাব (scabs) বা খোসায় (crusts) রূপান্তরিত হয়।’
মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুহার সম্পর্কে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘মৃত্যুহার ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। ছোট শিশুদের মৃত্যুহার উচ্চতর দেখা যায়, যা নথিভুক্ত ক্ষেত্রে ০% থেকে ১১% পর্যন্ত হতে পারে। চিকিৎসা মূলত সাপোর্টিভ (supportive) হয় এবং লক্ষণ ব্যবস্থাপনার জন্য কাস্টমাইজ করা হয়, যদিও নতুন ওষুধগুলো বিকাশ ও পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলীমের পরামর্শ—
এই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সংক্রমিত ব্যক্তি বা দূষিত বস্তুগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ (contact) এড়ানো উচিত এবং প্রাণিজাত পণ্যগুলো সঠিকভাবে রান্না করা প্রয়োজন। নিয়মিত স্মলপক্স টিকাদান বন্ধ হওয়ার ফলে মাঙ্কিপক্সের সংবেদনশীলতা বেড়েছে। তবে, ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে উন্নত এবং নিরাপদ টিকা এখন পাওয়া যাচ্ছে যা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে।
/লিপি