ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রুট পারমিট ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার, চলত সদরঘাট-গাজীপুরা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ৫ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রুট পারমিট ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার, চলত সদরঘাট-গাজীপুরা

মামুন খান : বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী সু-প্রভাত পরিবহনের যে বাসের চাপায় নিহত হন সেই বাসটির রুট পারমিট ছিল ঢাকা (মহাখালী)-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। কিন্তু সু-প্রভাত বাস কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে যোগসাজশে সু-প্রভাত ব্যানারে সদরঘাট (ভিক্টোরিয়া পার্ক)-গাজীপুরা রুটে বাসটি চালনা করতেন মালিক ননী গোপাল সরকার।

শুক্রবার সু-প্রভাত পরিবহনের বাসের মালিক ননী গোপাল সরকারের তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম। রিমান্ড আবেদনে তিনি এমনটাই উল্লেখ করেছেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, বাসের মালিক ননী গোপাল সরকারকে ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মুগদা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ননী গোপাল জানান, তার বাসটির ঢাকা (মহাখালী)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটের পারমিট থাকলেও সু-প্রভাত বাস কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে যোগসাজশে সু-প্রভাত ব্যানারে সদরঘাট (ভিক্টোরিয়া পার্ক)-গাজীপুরা রুটে চালাতেন। একটি দুর্ঘটনা ঘটার পর বাস মালিক বা কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। কিন্তু বাস মালিক ননী গোপাল সে দায়িত্ব পালন না করে একজন অদক্ষ ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন বাসের কন্ডাক্টরকে দ্রুত বাস চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

আবেদনে বলা হয়, ননী গোপাল দুই থেকে আড়াই বছর আগে বাসটি কিনেছেন। এখন পর্যন্ত বাসের মালিকানা পরিবর্তন করেননি। এ মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি ইয়াছিন এবং ইব্রাহিম রিমান্ডে শেষে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। ননী গোপালের নির্দেশে তারা বাসটি চালিয়েছিলেন মর্মে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ননী গোপাল কেন তাকে দ্রুত বাস চালানোর আদেশ দিয়েছিলেন তা জানা, মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্তের স্বার্থে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

আসামিপক্ষে মোহাম্মদ ইয়ার খান, মো. মফিজুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন। তারা বলেন, এজাহারে তার নাম নেই, গাড়ির মালিক হিসেবে সন্ধিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, এজন্য আমরা সবাই দুঃখিত। এতে মালিকের অপরাধ কী? মালিককে কেন রিমান্ডে নেবে?

তখন বিচারক ননী গোপালের কাছে জানতে চান, তার কয়টি গাড়ি আছে। ননী গোপাল জানান, তার চারটি গাড়ি আছে।

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, বাসের চালক, হেলপার, কন্ডাক্টর অপরাধ করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিচার হবে। উনি মালিক, গাড়ি নিরাপদের কথা বলেছেন। এ হলো তার বিরুদ্ধে অভিযোগ। গাড়ি চালিয়েছে ড্রাইভার, তাকে (ননী গোপাল) রিমান্ডে নিলে কি তথ্য পাওয়া যাবে?

তখন রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মো. রকিব বলেন, একজন মালিক ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যেতে বলতে পারেন না।

তখন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, রিমান্ডে নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। তাকে রিমান্ডে নিলে নতুন তথ্য পাওয়া যাবে না। আমরা তার রিমান্ড নামঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।

এরপর বিচারক তদন্ত কর্মকর্তার কাছে রিমান্ড আবেদন বিষয়ে জানতে চান। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ড্রাইভারের লাইসেন্স ছিল হালকা যান চালানোর। সে গাড়ি চালানোর উপযুক্ত নয়। আর কন্ডাক্টরের কোনো লাইসেন্স ছিল না। তারপরও মালিক কন্ডাক্টরকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দিয়ে অপরাধ করেছেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ জামিন নামঞ্জুর করে ননী গোপালের তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মুগদার একটি বাসা থেকে ননী গোপাল সরকারকে আটক করে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

মামলাটিতে গত ২০ মার্চ সু-প্রভাত বাসের চালক সিরাজুল ইসলামের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ২৮ মার্চ তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ২৭ মার্চ কন্ডাক্টর মো. ইয়াছিন আরাফাত এবং হেলপার মো. ইব্রাহীম হোসেনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ২ এপ্রিল তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

গত ১৯ মার্চ রাতে আবরার আহাম্মেদ চৌধুরীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফ আহাম্মেদ চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, আবরার ১৯ মার্চ সকাল ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হয়। বসুন্ধরা গেটে এসে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে ওঠার জন্য বসুন্ধরা সিটি গেটের সামনে প্রগতি সরণি জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে আইকন টাওয়ারের সামনে একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫) চালক সিরাজুল ইসলাম আবরারকে চাপা দেয়। বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে আবরার ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এর আগে সকাল ৭টা ২০ মিনিটের দিকে সিরাজুল ইসলাম প্রগতি সরণি বাড্ডার দিক থেকে দ্রুত গতিতে বাস চালিয়ে এসে গুলশান থানাধীন শাহজাদপুরের বাঁশতলায় পথচারী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তাকে চাপা দেয় এবং গুরুতর আহত করে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ এপ্রিল ২০১৯/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়