ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এক যুগেও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার বাজারে আসেনি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২০ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক যুগেও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার বাজারে আসেনি

কেএমএ হাসনাত : বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে আনতে আবার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দেশের পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে ভিত্তিশীল কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে আনার তাগিদ দীর্ঘদিনের। এ তাগিদ থেকেই বাংলাদেশে কার্যরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

প্রায় এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনা সম্ভব হয়নি। ২০০৫ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের সময় পর্যন্ত এসব কোম্পানিকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন দেশের পুঁজিবাজারে তাদের শেয়ারের কিছু অংশ অবমুক্ত করে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে আবার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। খুব শিগগির এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বান করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এসব কোম্পানিতে সরকারেরও শেয়ার রয়েছে। সেই শেয়ার থেকে কিছু শেয়ার পুঁজিবাজারে ছেড়ে দেবে সরকার। বহুজাতিক কোম্পানির নিজস্ব শেয়ার বা সেসব কোম্পানিতে থাকা সরকারি শেয়ার, কোনোটাই আজও পুঁজিবাজারে আসেনি। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যখনই শেয়ার বাজারে ছাড়ার কথা বলা হয়েছে, তারা বলেছে, শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে বাধ্য করা হলে তারা এ দেশে করা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেবে। তাই শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ বিষয়ে আবার তাদের অনুরোধ করা হবে।

সূত্রে জানায়, বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান দুই বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভারে ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ ও অ্যাভেন্টিসে ৪৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ সরকারের শেয়ার রয়েছে। এই কোম্পানি দুটোকে দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার জন্য বেশ কয়েকবার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই অনুরোধে কোনোরকম সাড়া দেয়নি।

২০০৫ সালে ২৬টি কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এই কোম্পানিগুলোতে সরকারের শেয়ারও ছিল। এখানে ইউনিলিভার ও অ্যাভেন্টিস কোম্পানিও ছিল। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এই কোম্পানিতে সরকারের অংশের শেয়ার থেকে ৫ ভাগ শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে। অন্যদিকে, কোম্পানি দুটোকে অনুরোধ করা হয়, তারা যেন নিজ শেয়ারের অংশ থেকে আরো ৫ ভাগ শেয়ার বাজারে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর অনীহার কারণে সে সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়ন হয়নি।

বিদেশি এই কোম্পানিগুলো যে শুধু শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেছে তা নয়, তারা এও প্রস্তাব দিয়েছে, সরকার প্রয়োজন বোধ করলেও কোম্পানিতে থাকা সরকারি অংশের শেয়ার পুঁজিবাজারে নয়, তাদের কাছে বিক্রি করে দিতে পারে।

এর আগে সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তা সফলতার মুখ দেখেনি। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মিজ্র্জা আজিজুল ইসলাম একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানির অসহযোগিতায় তা আর সম্ভব হয়নি। সে সময় তিনি বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে অভিহিত করেন।

উল্লেখ্য, অ্যাংলো-ডাচ কোম্পানি হিসেবে খ্যাত ইউনিলিভার ১৯৬৪ সাল থেকে এ দেশে ব্যবসায় পরিচালনা করছে। আগে এই কোম্পানির নাম ছিল লিভার ব্রাদার্স লিমিটেড। ২০০৪ সালে নাম পরিবর্তন করা হয়। কোম্পানিটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানেও ব্যবসায় পরিচালনা করে আসছে। এই দুই দেশেরর শেয়ার বাজারে তাদের অংশগ্রহণ থাকলেও ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে।

সূত্র জানায়, সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়ে ২০০৮ সালের এপ্রিলেও একবার উদ্যোগ নেয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়ে তিন দফা নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে ২০১০ সালের জুনে এবং ডিসেম্বরে দুই দফায় এবং পরবর্তীতে ২০১১ সালের মার্চে সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেন তিনি। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি কেম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার নির্দেশনা দেন। কিন্তু প্রতিবারই নানা অজুহাতে কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়ে নিরুত্তাপ থাকে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জুলাই ২০১৯/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়