ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিতে প্রভাব পড়বে না’

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ২২ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিতে প্রভাব পড়বে না’

ফাইল ফটো

হাসান মাহামুদ : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার বাংলাদেশবিরোধী অসত্য অভিযোগে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান কূটনীতির দেশ। সে ক্ষেত্রে এসব অভিযোগ কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। কিন্তু বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

প্রিয়া সাহার বক্তব্যের বিষয়ে এমনটিই বলছেন কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব দেখা যায় না, তবে পরবর্তীতে প্রভাবের আশঙ্কা থাকে। তাই ইস্যুভিত্তিক কূটনীতিক তৎপরতার প্রয়োজন রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন সোমবার রাইজিংবিডিকে বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই বাংলাদেশের মতো সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত নেই। প্রিয়া সাহার অভিযোগ এক্ষেত্রে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মতো বলা যায়।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ বিষয়টি যেমন আলোচিত হয়েছে, সরকারেরও দৃশ্যমান কিছু বক্তব্য ও কূটনীতিক কার্যক্রম থাকা উচিত।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রিয়া সাহার এই অসত্য অভিযোগের কোনো প্রভাব আছে বলে এই মুহূর্তে আমি মনে করছি না।’

তিনি বলেন, কোনো একজন ব্যক্তি যেকোনো একটি বিষয় নিয়ে নালিশ করলেই তো তার একটা নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয় না। নালিশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে গেলে আগে তদন্ত করতে হয়। মার্কিনীরা প্রিয়া সাহার নালিশের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করলে প্রকৃত তথ্য পেয়ে যাবে।

সাবেক রাষ্টদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক হুমায়ুন কবির বলেন, প্রিয়া সাহার অভিযোগ একেবারেই অনৈতিক। অসত্য এবং ভিত্তিহীন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বিবৃতি প্রদান করেছে। সরকার এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে মনে হচ্ছে। আর, ব্যবস্থা নেওয়া দরকারও।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, প্রিয়া সাহা নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে যে যুক্তিগুলো দিয়েছেন, তা কিন্তু পরিষ্কার নয়। তার ওই অভিযোগের সরাসরি কোনো নেতিবাচক প্রভাব আমি দেখছি না। কারণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি উজ্জল।

তিনি বলেন, তবে তার বক্তব্য এবং কারো ইন্ধন রয়েছে কী না, তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত প্রয়োজন।

সরকারি প্রতিনিধিদলে ছিল না প্রিয়ার নাম:

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন য্ক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি চূড়ান্ত করে। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিদলে প্রিয়া সাহার নাম ছিল না। প্রিয়া সাহা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা বেসরকারি প্রতিনিধি (এনজিও) হিসেবে ওয়াশিংটন সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন।

ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন সম্মেলনে মূলত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের নেতৃত্বে দেশের প্রধান চার ধর্মের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। ওই দলে হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট নির্মল চ্যাটার্জি। তিনি হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা।

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব নির্মল রোজারিও। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে যান হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অশোক বড়ুয়া।

মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন শোলাকিয়ার খতিব মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ পুত্র মাওলানা জুনুদ উদ্দিন মাকতুম। তিনি জমিয়তুল উলামা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।

বাংলাদেশ সরকারের ওই প্রতিনিধিদলে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির পুত্র তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারিও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুলাই ২০১৯/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়