ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দিচ্ছে সরকার

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২২, ২৪ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দিচ্ছে সরকার

হাসান মাহামুদ : কয়েক বছর আগেও উন্নয়ন প্রকল্পে অনুদান সংগ্রহ এবং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বাংলাদেশের কূটনীতিক আবর্তন ছিল। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশে এখন পাল্টেছে কূটনীতিক উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টায় কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সময়ের সঙ্গে পাল্টে গেছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশলও। দল এবং সরকারপ্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কূটনীতিতে সফলতার পর অর্থনৈতিক কূটনীতি নিয়ে এগুচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কূটনৈতিক তৎপরতা ছিল রাজনৈতিক। এতে ক্ষমতাসীন দলটি অনেকটাই সফল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন কূটনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। বহির্বিশ্বে ‘এক্সপোর্ট বাস্কেট’ বাড়াতে চায় সরকার। এজন্য তৈরি করা হয়েছে কর্মপরিকল্পনা। বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি কূটনীতিকদের সেসব দেশের পণ্যের চাহিদা বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে দেশের রপ্তানির আকার ও পরিধি বাড়ানো যায়। একইভাবে সেসব দেশের ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করার জন্য কাজ করতেও বাংলাদেশি কূটনীতিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। 

অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও বাণিজ্য স্বার্থ রক্ষায় বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়ন, গৃহীত নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনায় সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এই কূটনীতির বড় দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে বৈশ্বিক বাণিজ্য সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।

একই সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি বাজার সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন স্তরের যোগাযোগ বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতেও।

অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব (আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ) ড. খলিলুর রহমান বলেন, নতুন কূটনৈতিক মিশনের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্দারণ করা হয়েছে- ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরের যে লক্ষ্য, তা পূরণ। এরপর, সরকারের নির্বাচনী ইশতিহার অর্জন এবং উন্নত দেশে উন্নীত করা। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কূটনীতিক বলিষ্ঠ অবদান রাখতে পারে। সে লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কাঙ্খিত উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি গ্রহণযোগ্য, মানসম্মত ও উপযুক্ত দাপ্তরিক নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। নীতিমালাটির ভিত্তিতেই বিভিন্ন খাতকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করা হবে।

২০২১ থেকে ২০৪১ অর্থাৎ ২০ বছর বাংলাদেশকে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ৯ শতাংশ ধরে রাখার নতুন লক্ষ্য সরকারের। এই সময়ের মধ্যে বিনিয়োগের হার জিডিপির ৪০ শতাংশে উন্নীত করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সীমিতসংখ্যক পণ্য ও বাজারের ওপর নির্ভর করে রপ্তানি সম্প্রসারণ কঠিন। তাই রপ্তানিতে আরো নতুন বাজার তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। পাশাপাশি রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য খাতভিত্তিক সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সরকার যেসব সহায়তা দেয়, তার মধ্যে রয়েছে শুল্ক-কর-মুসক রেয়াত, নগদ প্রণোদনা ইত্যাদি। এসবের সামগ্রিক কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনে সংস্কার এবং সমন্বয়েরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

অর্থনীতিক কূটনীতিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করার জন্য এরই মধ্যে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন বছরে কোন দেশ কী পরিমাণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে পারে তার একটি রূপরেখা দিতে মার্চ মাসে বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এতে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের নতুন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কূটনীতিক তৎপরতা জোরদারের প্রয়োজন রয়েছে। এখন প্রথাগত কূটনীতির বাইরে গিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে কাজ করা সরকারি আমলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।

তিনি আরো বলেন, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক। পুরনো বাজারে অবস্থান ধরে রাখা ও নতুন বাজারে সম্ভাবনা সৃষ্টির জন্য তাই প্রয়োজন হয় প্রচারণার। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কূটনীতি যুগপোযোগী।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৯/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়