ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সেকেন্ড হোম: চিহ্নিত ২৩ ভিআইপির সম্পদের উৎসের খোঁজে

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২৪ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সেকেন্ড হোম: চিহ্নিত ২৩ ভিআইপির সম্পদের উৎসের খোঁজে

এম এ রহমান মাসুম : সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় আবাস গড়তে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করেছেন এমন ২৩ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিদেশে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস জানতে ওই ভিআইপিদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে নামছে সংস্থাটি।

চিহ্নিত ২৩ ব্যক্তির মধ্যে রাজনীতিবিদসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে।

এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিআইএফইউ) বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, অনুসন্ধানকালে সেকেন্ড হোমে (মালয়েশিয়া) বসবাসরত বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সাক্ষ্য ও তথ্যানুসারে মালয়েশিয়ার শ্রীহারতামাসে অভিযুক্ত ৪ জনের ফ্ল্যাট আছে। মালয়েশিয়ার আমপাং তেয়ারাকুন্ডতে একজনের ফ্ল্যাট রয়েছে। আমপাং এভিনিউতে ফ্ল্যাট রয়েছে ২ জনের। ক্রাউন প্লাজায় এবং টাইমস্কয়ারে ফ্ল্যাট রয়েছে আরো দুই বাংলাদেশির।

এদের মধ্যে ১১ জনের মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ লেনদেনের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। তাই দুদকের অনুসন্ধান টিম ওই ২৩ ব্যক্তির বিনিয়োগের তথ্য নিয়ে আলাদা ফাইল খুলে অধিকতর অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালের শেষের দিকে এ সংক্রান্ত দুদকের অনুসন্ধান টিম একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করে। বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের অনুমতি প্রার্থনা চাওয়া হয়। তবে কমিশন এখন অনুমতি দেয়নি। তারা বিষয়টি আরো যাচাই-বাছাই করছেন। কারণ মালয়শিয়া সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগ মানেই অর্থপাচার নয়। আমাদের বিবেচ্য বিষয় কেউ বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে পাচার করা অর্থ দিয়ে সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ করেছেন কিনা। মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম বৈধ প্রকল্প। তাই ওখানে বিনিয়োগ করা অপরাধ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারও সরাসরি কোনো তথ্য দিতে নারাজ। তারা আগে চাইছে তাদের প্রকল্পে বিনিয়োগকারী মানুষটি অপরাধী কিনা তার প্রমাণ। তাই আমাদের আরো ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো বলার মতো সময় হয়নি।

এর আগে ২০১৮ সালে সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় আবাস গড়তে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করেছেন এমন ১০৫০ জনের একটি তালিকা করেছিল দুদক। চিহ্নিত ওই বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রবাসীদের নাম। তাদের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে মালয়েশিয়ায় মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলআর) পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও বিআইএফইউ থেকে এ বিষয়ে বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দুদক। ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে তৎকালীন উপপরিচালক ও বর্তমান পরিচালক জুলফিকার আলী একটি চিঠিতে ১০৫০ জনের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিলেন।

এর আগে কয়েকজন হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করেছিল দুদক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ার কথা বলে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ পাঠায়নি মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ।

সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগের নামে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়। অভিযোগ অনুসন্ধানে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তালিকা থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য সেকেন্ড হোম প্রকল্পে নতুন করে আবেদন করেছিলেন ৬৪৮ ব্যক্তি। পাঁচ বছরে অন্তত ৪ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে সংশ্লিষ্টরা। মালয়েশিয়া ছাড়াও কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশেও টাকা পাচার হচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব দেশ বাংলাদেশ থেকে ‘বিনিয়োগকারী’, ‘উদ্যোক্তা’ ও ‘স্ব-কর্মসংস্থান’ কোটায় সহজেই ভিসা দিচ্ছে।

গত ১২ বছরে অন্তত ৩ হাজার ৩৪৫ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছেন। এতে পাচার হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। মালয়েশিয়ার সরকার ২০০২ সালে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্প শুরু করে। ওই বছর কোনো বাংলাদেশি এ সুবিধা না নিলেও ২০০৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৯১ জন ওই সুবিধা নিয়েছেন। তালিকাভুক্ত বাংলাদেশিরা দেশ থেকে টাকা সরিয়ে সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ করেছেন; যা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধের শামিল। ১৯৪৭ সালের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্টের ৫(১) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কেউই দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাঠাতে পারেন না।

দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক (পরিচালক) মো. জুলফিকার আলীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। টিমের অপর সদস্য হলেন-সহকারী পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মঞ্জুরুল ইসলাম। টিম প্রধান জুলফিকার আলী পরিচালক পদে পদোন্নতি ও অন্যত্র বদলি হওয়ায় বর্তমানে দুদক উপপরিচালক তৌহিদুল ইসলাম অনুসন্ধান টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৯/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়