ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দালালদের ‘গেম’, লেনদেন হুন্ডিতে

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৫, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দালালদের ‘গেম’, লেনদেন হুন্ডিতে

আহমদ নূর : আটক হলেই সব স্বপ্ন শেষ, পার হলে নতুন সম্ভাবনা। অবৈধভাবে একটি দেশের সীমানা পার হতে নানান ঝুঁকি থাকে। সীমান্তরক্ষীদের কাছে আটক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে ইউরোপগামীদের কাছে ‘গেম’ নামে একটি শব্দ খুব পরিচিত। গেম শব্দটি সীমানা পার করিয়ে দেয়া দালালদের সাংকেতিক শব্দ।

‘গেম’ নামের এ ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষদের প্রতিনিয়ত ফেলেন দালালরা। কেউ সীমানা পার করে ঢুকে যান নতুন সম্ভাবনায়। আবার কেউ আটক হয়ে যান ক্যাম্পে বা কারাগারে। আর ইউরোপে প্রবেশের ক্ষেত্রে এ কাজটি করে দালালরা।

অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়া কয়েকজন বাংলাদেশি জানিয়েছেন, দালালরা সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সব দেশের সীমানা পার হতে দালাল পাওয়া যায় (বেশিরভাগই ভারতীয়)। তারাই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দালাল এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ‘গেম’ করায়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ইউরোপ যেতে হলে প্রথম চুক্তি হয় বাংলাদেশি দালালদের সঙ্গে। এটাকে ‘বডি কন্ট্রাক’ বলে। টাকার চুক্তি হয় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। পরে কৌশলে টাকার অংক বাড়ায় দালাল চক্র। চুক্তি হলে পাসপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে নেয় দালালরা। এরপর বৈধভাবে প্রথমে একটি মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকার কোনো এক দেশে পাঠায়। এক্ষেত্রে দালালদের পছন্দ ওমান, লিবিয়া, মরক্কো, ইরাক ও ইরান। সেখানে গেলে ইউরোপ অভিবাসন প্রত্যাশী ব্যক্তিকে তুলে দেওয়া হয় অন্য দালালের হাতে। ওই দালাল পরে ভারতীয় দালালের সহায়তায় সীমানা পার করায়। কখনো কখনো দালালরা সামনাসামনি হয়, কোনো সময় আড়ালে থেকে কাজ করে।

অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের জন্য মরোক্কতে অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশি ফয়েজ আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশি দালালরা ভারতীয় দালালদের এজেন্ট হয়ে কাজ করে। তাদের কাছেই আমার পরিবার টাকা দিয়েছে। সে কিছু টাকা ইউরোতে কনভার্ট করে আমাকে দিয়েছিল। সেগুলো আমি মরক্কোতে এসে দালালকে দিয়েছি। এগুলো আমার থাকা খাওয়ার জন্য। বাকি টাকা কীভাবে লেনদেন হবে জানি না।

দুর্গম এলাকায় নিয়ে জিম্মি:

অবৈধভাবে ইউরোপে অভিবাসী প্রত্যাশীদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে। এজন্য ওই ব্যক্তিকে রাখা হয় দুর্গম এলাকায়। বিশেষ করে ইরাক, লিবিয়া ও ইরান হয়ে যারা অবৈধভাবে ইউরোপে যেতে চান, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই জিম্মিদশায় পড়েন। পরে দেশ থেকে টাকা সংগ্রহ করে দালালদের কাছ থেকে মুক্তি পান অনেকে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশি দালালরা ভারতীয় দালালদের মাধ্যমে অভিবাসী প্রত্যাশীদের জিম্মি করে। এক্ষেত্রে যে দেশে জিম্মি করা হয়, সেদেশের নাগরিকদেরও সঙ্গে রাখে দালালরা। জিম্মি করার পর তাদের অমানবিক নির্যাতন করা হয়। পরে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা দেশে থাকা দালালদের দিলেই মুক্তি পায় জিম্মিদশায় থাকা ব্যক্তি। নিজের কমিশনের টাকা রেখে বাকি টাকা বিদেশে থাকা দালালদের টাকা পাঠিয়ে দেয় দেশে থাকা দালালরা। পরে কেউ আবারো বাড়তি টাকা দিয়ে ইউরোপ যায়। কেউ হতাশ হয়ে দেশে ফিরে আসেন।

লেনদেন হুন্ডিতে:

বাংলাদেশে থাকা দালালরা অন্য দেশে থাকা দালালদের কাছে মূলত হুন্ডিতে টাকা পাঠায়। সেগুলো ডলারে বা ইউরোতে রূপান্তর হয়ে বিদেশে থাকা দালালের হাতে পৌঁছায়।

এছাড়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে লুকিয়ে ডলারে বা ইউরোতে রূপান্তর করে টাকা বিদেশে পাঠানো হয়। জিম্মি করে যে টাকা আদায় করা হয়, সেগুলোও হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশি দালাদের কাছে পাঠানো হয়।

ঢাকায় ‘খান’ নামে পরিচিত দালাল টাকা লেনদেনের বিষয়ে বলেন, প্রত্যেক দেশে দালাল রয়েছে। বড় অংকের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে আমরা তাদের কাছে পাঠাই। আবার ছোট অংকের টাকা হলে, বিদেশে থাকা বাংলাদেশি দালালের নির্ধারিত ব্যক্তির কাছে দিলেই হয়। এ টাকার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দেশের বাইরে থাকা দালালরা সমন্বয় করে নেয়।

অবৈধ পথে ফ্রান্সে যাওয়া পাভেল আহমেদ জানান, অন্যান্য দেশের সীমানা পার হওয়ার সময় তার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা ছিল। লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় তিনি দালালের (ভারতীয়) হাতে পড়েছিলেন। ওই সময় কিছু টাকার সংকট তৈরি হয়। পরে দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দালালকে টাকা দেন তিনি।

আরো পড়ুন: **

                **

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ সেপ্টেম্বর ২০১৯/নূর/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়