ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্বাস্থ্য পরিচালকের সম্পদেরও বেজায় স্বাস্থ্য!

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাস্থ্য পরিচালকের সম্পদেরও বেজায় স্বাস্থ্য!

এম এ রহমান মাসুম : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এইডস এন্ড এসটিডি কন্ট্রোল বিভাগের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম মিঞা। সহকারী সার্জন থেকে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে পরিচালক হয়েছেন।

নিজের পদোন্নতির পাশাপাশি তার সম্পদের স্বাস্থ্যেরও বেশ উন্নতি হয়েছে। স্ত্রীর নামে ঢাকার গুলশান ও মিরপুরে একাধিক প্লট, উত্তরায় ফ্ল্যাট, গাড়ি এবং বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দু্র্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যা তার আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বলেই মনে করছে সংস্থাটি।

গত ২৮ আগস্ট আমিনুল ইসলামের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ প্রদান করে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। আগামি ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। নোটিসে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধানে কমিশনের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, তারা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে/বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তাই নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের নিজের, নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে বলা হয়।

আমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তুহিন জাহান কলির সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই দম্পতি অর্জিত সম্পদের মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ দান সূত্রে পেয়েছেন। নথিপত্র বিশ্লেষনে দেখা যায় স্ত্রী সৈয়দা তুহিন জাহান কলির নামে রয়েছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ক্রয়কৃত সাড়ে ৪ শতাংশ জমি, একই এলাকায় তার দুই বোন মালেকা বেগম ও জাহানারা বেগমের নিকট হতে দানসূত্রে প্রাপ্ত ১৮.৪২ শতাংশ জমি এবং দুই ভাইয়ের কাছ থেকে টাঙ্গাইলের রতনপুরে দানসূত্রে প্রাপ্ত ১৭.৭৫ শতাংশ জমি।

এছাড়াও আমিনুলের স্ত্রীর নামে আরো রয়েছে ক্রয়সূত্রে গুলশানের বেরাইদ মৌজায় সাড়ে ৪ শতাংশ জমি ও মিরপুরের বাউনিয়া মৌজায় সাড়ে ৬ কাঠা জমি। পিতার কাছ থেকে দানসূত্রে তুহিন জাহান কলি টাঙ্গাইলে আরো ৬ শতাংশ জমির মালিক। ঢাকার উত্তরায় ২১০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটও আমিনুল করেছেন তার স্ত্রীর নামে। নথিপত্র হিসাবে তার স্থাবর সম্পত্তির মূল্য আনুমানিক ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। যদিও বাস্তবে এই সম্পদের মূল্য আরো অনেক বেশি। রূপালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে আমিনুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর নামে সঞ্চয় হিসাবে প্রায় সোয়া কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে দুদক। রয়েছে একটি গাড়ি (গাড়ি নং-গ-২২-৪১৮২)।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ২০০১-০২ থেকে ২০১৮-১৯ কর্যবর্ষ পর্যন্ত আয়কর রিটার্ণ দাখিল করেছেন।  আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী তিনি বেতনাদি, পেশার আয়, করমুক্ত আয়, ব্যাংক সুদ ইত্যাদি খাতে মোট ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা আয় করেন। যেখানে ব্যয় দেখিয়েছেন ৩৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা। ব্যয় বাদ দিলে তার নীট আয় পাওয়া যায় ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। কিন্তু নথিপত্রের হিসাবে উক্ত আয়ের বিপরীতে তার অর্জিত নীট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।  অর্থ্যাৎ নীট সম্পদ থেকে আয় বাদ দিলে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস নেই। যা দুদকের চোখে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বলে মনে হয়। বাকিটা তার হিসেব পওয়ার পর পরিস্কার ধারণা পাওয়া যাবে।

ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম মিঞা ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর সহকারী সার্জন হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিববার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ২০১৫ সালে সহকারী পরিচালক, ২০১৭ সালে উপ-পরিচালক এবং ২০১৯ সালে পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (জাতীয় এইডস এন্ড এসটিডি কন্ট্রোল) পদে কর্মরত আছেন। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তার পরিবার। দুদক উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে আমিনুল ইসলামের অফিস নাম্বার এবং ই-মেইলে লিখিতভাবে যোগাযোগ করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯/এম এ রহমান/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়