ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৪৩৭৮ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি, আদায়ে তাগিদ

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৪৩৭৮ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি, আদায়ে তাগিদ

মোবাইল অপারেটর, ব্যাংক, বিমা, ওষুধ, সিমেন্ট, খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারীসহ বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/মূসক) ফাঁকিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

একই সঙ্গে ফাঁকির রহস্য উন্মোচন ও ফাঁকিকৃত রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেয়া চিঠিতে তাগিদ দিয়েছে দুদক।

সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বরবার পাঠানো চিঠিতে দ্রুত সময়ে বিষয়টি তদন্ত করে দুদককে অবহিত করারও অনুরোধ করা হয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছে।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছর শেষে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ, ভ্যাট) ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্ক, দাখিলপত্র যাচাই ও প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষার মাধ্যমে মোট ৪ হাজার ৩৭৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করে। যা দুদকের নজরে আসে। এজন্য রাষ্ট্রীয় স্বার্থে দুদক থেকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত্ রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে থাকি। এটা অনেকটা রুটিন ওয়ার্ক বলতে পারেন। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।

অন্যদিকে এ বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান দপ্তর চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করলেও কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

এনবিআর ও দুদক সূত্রে জানা যায়, এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (ভ্যাট) দেশের মোট ভ্যাটের ৫৬ শতাংশ আহরণ করে থাকে। গত অর্থবছরে প্রায় ৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করে। এর মধ্যে আদায় করেছে ১৭৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। শুধু দাখিলপত্র যাচাই করেই তিন হাজার ৩৯১ কোটি টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ৩০ প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করে উদঘাটন হয়েছে ৭৯৩ কোটি টাকার ফাঁকি। আর ফাঁকি দেয়া ওই রাজস্বের প্রায় ১৮০ কোটি টাকা আদায় হলেও বাকি টাকা আদায়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পরেছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর, ব্যাংক, বিমা, ওষুধ, সিমেন্ট, খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী এবং বড় করপোরেটসহ ১৭০ প্রতিষ্ঠান এলটিইউয়ের আওতায় রয়েছে।

সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদান করলেও এলটিইউ প্রতি বছর বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে  প্রতিষ্ঠানগুলোর ফাঁকি উদ্ঘাটন কর থাকে। কিছু প্রতিষ্ঠান ভুল স্বীকার করে রাজস্ব পরিশোধ করে। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ভুল স্বীকার করে না।  এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে রাজস্ব আদায় করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো দাখিলপত্রে তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সেজন্য এলটিইউ বিদায়ী অর্থবছরে দাখিলপত্র যাচাইয়ে বেশি নজর দিয়ে বেশ ভালো তথ্য পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তবে কৌশলগত কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করতে চায়নি এলটিইউয়ের কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করেছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান না জেনে ভুল করেছে। এছাড়া কিছু নন কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠানও রয়েছে; যারা সব সময় ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে। এর আগে দাখিলপত্র যাচাই করে এত বিপুল পরিমাণ রাজস্ব উদ্ঘাটন হয়নি। ফাঁকি দেয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটর, ব্যাংক, বিমা, ওষুধ, সিরামিক ও এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানও। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৯ প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করে এক হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা ফাঁকি উদ্ঘাটন করে ৪৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয় এলটিইউ।

যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে মোবাইল ফোন অপারেটরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। নিরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি মোবাইল অপারেটরের নাম উঠে এসেছে। এছাড়া পেট্রোবাংলাসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে ৩২ ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্কের মাধ্যমে ১৯৪ কোটি তিন লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭টি ওয়ার্কের মাধ্যমে ৯৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা উদ্ঘাটন ও ৮৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। এছাড়া বিদায়ী অর্থবছরে এলটিইউ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে ১৬টি আবেদন নিষ্পত্তির মাধ্যমে ১৪২ কোটি ১২ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে। যদিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আটটি আবেদন নিষ্পত্তি করে ছয় কোটি ৫৬ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এলটিইউয়ের ৫৯ হাজার ৭৮৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। ২০০৪ সালের ১ অক্টোবর ১৬৬টি ইউনিট (প্রতিষ্ঠান) নিয়ে এলটিইউয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল।


ঢাকা/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়