ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রিং রোড হবে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত টোল মহাসড়ক

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৬, ১৮ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রিং রোড হবে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত টোল মহাসড়ক

ছবি প্রতীকী

রাজধানীর যানজট নিরসন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নে অনেকগুলো প্রকল্পের মধ্যে আউটার রিংরোড নির্মাণ অন্যতম উদ্যোগ। এটি হবে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত টোল মহাসড়ক।  যানজট নিরসন এবং ঢাকার ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যানবাহন যাতায়াত সহজ করার জন্য আউটার রিংরোড নির্মাণ প্রকল্পে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে দশ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০২০ সালে শুরু হয়ে ২০২৩ সালে শেষ করা হবে। প্রকল্পটি জাপানি জি টু জি ভিত্তিক পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে একটি প্রাথমিক জরিপ সম্পাদন হয়েছে। জরিপে দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর একটি নিরবিচ্ছিন্ন, নিরাপদ ও দ্রুত গতিসম্পন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, হেভি ট্রাফিক লোড, ভবিষ্যৎ ট্রাফিক চাহিদা এবং ন্যূনতম ভূমি অধিগ্রহন ও পুনর্বাসন বিবেচনায় হেমায়েতপুর থেকে কালাকান্দি হয়ে মদনপুর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার মহাসড়কের উভয়পার্শ্বে ৫ দশমিক ৫০ মিটার প্রশস্ত সার্ভিস লেন রেখে মধ্যবর্তী অংশে মহাসড়ক বিভাজক ও মহাসড়কের প্রতি পাশে একটি করে মোট দুটি ইমার্জেন্সি লেনসহ ৪-লেনে উন্নীত করা হবে।

প্রস্তাবিত আউটার রিং রোডের বেশকিছু স্থানে ইন্টারসেকশন থাকায় ভেহিকাল ওভারপাস ও ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ হবে। স্থানীয় জনগণের চলাচলের সুবিধার জন্য প্রস্তাবিত প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত মহাসড়কের উভয়পাশে সার্ভিস লেনের পাশাপাশি পর্যাপ্তসংখ্যক আন্ডারপাস এবং প্রশস্ত ফুটপাথের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও মহাসড়কে বিদ্যমান সেতু ও কালভার্টগুলো চাহিদা অনুসারে প্রশস্ত করা হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। পেভমেন্টসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রকৃত পরিমাণ পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পন্ন হলে চূড়ান্তভাবে নিরুপণ সম্ভব হবে বলে জরিপে বলা হয়েছে।

প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত ও মহাসড়কে প্রবেশ ও নির্গমনের জন্য সীমিতসংখ্যক  গ্রেড-সেপারেটেড ইন্টারচেঞ্জের সংস্থান থাকবে। কেবলমাত্র এসব নির্ধারিত স্থানে যানবাহনগুলো মহাসড়ক ব্যবহারে সুবিধা লাভ করবে। উল্লেখ্য, যাত্রাকালীন সময়ে জ্বালানি সরবরাহ, যাত্রীদের বিশ্রাম ও পানাহারের জন্য একটি সার্ভিস এরিয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছ। পূর্ব-পশ্চিম দিকের তুলনায় উত্তর-দক্ষিণে বর্তমানে যান চলাচল ও সড়কের সংখ্যা বিবেচনায় যানবাহনের অত্যধিক চাপের কারণে ঢাকা মহানগরীর যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সরকারের শাসনামলে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের অত্যাধিক চাপ সামলানোর জন্য ঢাকা সিটিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী প্রস্তাবিত আউটার রিং রোডের এলাইনমেন্টের কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত রুটটি হচ্ছে-হেমায়েতপুর-কালাকান্দি-৩য়   শীতলক্ষ্যা সেতু-মদনপুর-ভুলতা (ঢাকা বাইপাস হয়ে)-কড্ডা (গাজীপুর)-বাইপাইল (ঢাকা ইপিজেড)-হেমায়েতপুর। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার সড়ক নতুন করে নির্মাণ করতে হবে এবং অবশিষ্ট ৮৪ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ক উন্নয়ন করতে হবে।

সূত্র জানায়, নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর ও পূর্বাংশের সংযোগ স্থাপন করবে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থকে মুন্সিগঞ্জ ও মাওয়া হয়ে যাত্রাবাড়ী দিয়ে অসংখ্য যানবাহন ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ করবে। ফলে রাজধানীতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এতে সংশোধিত এসটিপিতে প্রস্তাবিত এলাইনমেন্টের মধ্যে আউটার রিং রোডের দক্ষিণ অংশ হেমায়েতপুর-কালান্দি-মদনপুর অংশ) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এ অংশ অতি দ্রুত নির্মাণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ অবস্থা বিবেচনা করে আউটার রিং রোডের দক্ষিণাংশের প্রায় ৪৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে হেমায়েতপুর (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক) থেকে কালান্দি (ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক) যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮কিলোমিটার, কালান্দি থেকে ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার এবং শীতলক্ষ্যা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক থেকে মদনপুর (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক) যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা মহানগরীর ভেতরে প্রবেশ না করেই দেশের পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে যাতায়াতকারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে এবং ঢাকার যাত্রীদের একটা বড় অংশ আউটার রিং রোড ব্যবহার করে খুব সহজে ও কম সময়ে ভ্রমণ করতে পারবে। ফলে ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরের যানজট ব্যাপকভাবে কমবে এবং বিদ্যমান ট্র্যাফিক লোড রিং রোডের দিকে মোড় নেবে। যাত্রীরা আউটার রিং রোড দিয়ে ইনার রিং রোড ব্যবহার করে ঢাকা মহানগরীর যেকোনো এলাকা থেকে অন্য এলাকায় নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারবে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যানবাহনের চালক-শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্য দেশের মহাসড়কগুলোতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ বিশ্রামাগার নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্রকল্পটিতে সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পটি জাপানের সঙ্গে পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নের একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় প্রস্তাবিত আউটার রিং রোডের দক্ষিণ অংশ (রুট-১, ২ ও ৩ এর ৪৮ কিলোমিটার) নির্মাণের অর্থনৈতিক উপযোগিতা ও প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা যাচাই এবং প্রাথমিক ডিজাইন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।


ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়