ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বস্তিবাসীর স্বপ্নের আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির কালো ছায়া

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ২৬ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বস্তিবাসীর স্বপ্নের আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির কালো ছায়া

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লায় প্রায় দেড় লাখ বস্তিবাসী মানুষের ‘স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য উন্নত জীবন ব্যবস্থা’ নামের আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির কালো ছায়া পড়েছে।

যদিও তিন জেলার মধ্যে বর্তমানে শুধুমাত্র সিরাজগঞ্জের আটটি কমিউনিটির (বস্তি এলাকা) কাজ চলছে। অথচ শুরুতেই উঠলো দুর্নীতির অভিযোগ। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও জাতীয় গৃহায়ন অধিদপ্তরের সদস্য এ এস এম ফজলুল কবিরসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ।

সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লার প্রকল্পের টাকার একটি বড় অংশ ফজলুল কবির, গৃহায়নের বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলীর মুনিফ আহমেদ ও অফিস সহকারি মোস্তফা কামালসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর। নিয়মের তোয়াক্কা না করে এরই মধ্যে ২০ কোটি টাকা ঠিকাদারকে প্রদান করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও জাতীয় গৃহায়ন অধিদপ্তরের সদস্য এ এস এম ফজলুল কবির অভিযোগ অস্বীকার করে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এমন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বাভাবিক। কারণ বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের অগ্রগতি দেখে অর্থ ছাড় করে। এটি একটি ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি।’

চার বছর মেয়াদি ৩০৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি এরই মধ্যে পেরিয়েছে তিন বছরের বেশি সময়। অগ্রগতি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। প্রকেল্পর আওতায় তিন জেলার ১৯ কমিউনিটির এক লাখ ২০ হাজার মানুষ পাবে আধুনিক নাগরিক সকল সুবিধা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিকল্পিত এ আবাসন ব্যবস্থা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (জাগৃক) বাস্তবায়ন করছে।

অভিযোগের বিষয়ে আরো জানা যায়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য ফজলুল কবির বিপুল অর্থের বিনিময়ে পদের এক্সটেনশন নিয়েছেন। তিনি সকল টেন্ডার বাণিজ্যের মূল হোতা। সিরাজগঞ্জ ও কমিল্লা প্রকল্পের একটি অংশ ইতোমধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে। তার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য সাময়িক বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মুনিফ আহমেদ।

অভিযোগ রয়েছে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সিন্ডিকেটের মূল হোতা অ‌্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রবিউল রাশেদ, সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান ও তার ভাই শেখ সোহেলসহ একটি সিন্ডিকেট গৃহায়নের নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে একটি চক্র হয়ে কাজ করেন। এছাড়া গৃহায়নের কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শামছুদ্দোহা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল শাহীনের নেতৃত্বে অপর একটি সিন্ডিকেট অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসকল অভিযোগ ও অবৈধ সম্পদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে জুলাইয়ে ফজলুল কবির, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ কে এম সামছুদ্দোহা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনসুর এবং সিবিএ নেতা মোস্তফা কামাল শাহীনসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টিম।

বস্তিবাসীর আবাসন প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৯ কোটি ৯৩৫ লাখ টাকা আর দাতা সংস্থার সহায়তা থাকছে ২৪৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মোট পাঁচ হাজার ৭০০ আবাসনের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও সিরাজগঞ্জ পৌরসভায়। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিটি কমিউনিটিতে গড়ে ৩০০ পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

প্রথম পর্যায়ে সিরাজগঞ্জ পৌরসভাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ চলছে। সিরাজগঞ্জের ১০ কমিউনিটি হলো- কোবদাস পাড়া, প্রমানিক পাড়া, চৌধুরি পাড়া, মাসুমপুর পাগাইরা পাড়া, শহীদগঞ্জ, মালসা পাড়া, জানপুর, দিয়ার ধানঘরা, রেলী কুঠি এবং হালিম ও তারা বসতি এলাকাকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার অধীন ঋষিপাড়া, শান্তিনগর ও শহীদ নগরকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা পৌরসভার পুরাতন মৌলভিপাড়া, বাবুর্চি বাড়ি, দ্বিতীয় মুরাদনগর হাতিপুকুর পাড়, উনাইসার, কাজী বাড়ি ও রামমানিক দীঘির পাড়কে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) কর্তৃক ১৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে দেবে গৃহ নির্মাণের জন্য।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, ভূমি উন্নয়ন, সংযোগ রাস্তা নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ, জনসমষ্টিভিত্তিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নিরাপদ পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, রাস্তায় বৈদ্যুতিক বাতি ও স্কুল সংস্কার এবং মাঠ ‍উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিটি কমিউনিটিতে একটি করে তিন থেকে চার তলা বিশিষ্ট কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করে দেওয়া হবে। যেখানে মার্কেটসহ কমিউনিটি সেন্টার থাকবে। স্থানীয়দের তত্ত্ববধায়নে আশার আলো নামের একটি সমবায় সমিতি থাকবে অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে।

আরো পড়ুন :


ঢাকা/এম এ রহমান/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়