প্রণোদনা সহায়তার কারণে রাজস্ব আদায় কমবে
সরকার ঘোষিত আর্থিক খাতে ঘোষিত পাঁচটি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে দুটিতে আমদানি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় কমার আশঙ্কা আছে। এর পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে পাঁচটি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজের কারণে এনবিআরের রাজস্ব আয় চলতি অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি কমতে পারে। এ দুটি প্যাকেজে আমদানি সুবিধা দেওয়ার জন্য ঋণের সুদের হার কমানো হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা কম দামে পণ্য আমদানি করতে পারবেন। পণ্যের দাম কমলে শুল্কও কমবে। স্বাভাবিকভাবে রাজস্ব আয় কম হবে। ফলে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি আরো বাড়বে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘোষিত পাঁচটি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের একটি হচ্ছে—বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ‘রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ)’ এর আকার বাড়ানো। এই প্যাকেজের মাধ্যমে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বাড়াতে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে। এর ফলে ১৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে নতুন করে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার হচ্ছে লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদের হার (লাইবর) এবং এর সঙ্গে ১ দশমিক ৫ শতাংশের যোগফল। ফলে এই সুদের হার হবে ২ দশমিক শূন্য ৭৩ শতাংশ। প্রণোদনা প্যাকেজে এই সুদের হার শূন্য ৭৩ শতাংশ কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্য একটি প্যাকেজে প্রাক-জাহাজিকরণ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি ঋণ (প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম) নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে। এর সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ শতাংশ। এখানেও সুদের হার কমানোর কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের বাজেট শাখার এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রণোদনা প্যাকেজে আমদানির ক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার কমে যাওয়ায় আমদানিকৃত পণ্যের দামও কমবে। ফলে এর ওপর আরোপিত করও কমবে। প্রাথমিকভাবে হিসাব করে দেখা গেছে, দুটি প্যাকেজের কারণে এনবিআরের আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকারও বেশি কমে যেতে পারে।
এনবিআর বলছে, করোনার কারণে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এ ক্ষতি মেনে নিতে হবে। কারণ, আগে ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের কর্মসংস্থান, পরে রাজস্ব আদায়।
এদিকে, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো নয়। অর্থ বিভাগের সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি রয়েছে। যেখানে আট মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, সেখানে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। ঘাটতির পরিমাণ ৪৫ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। ঘাটতি ২৪ শতাংশ। ঘাটতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে কাস্টমস খাতে। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি হয়েছে ২৯ শতাংশ। ভ্যাটের ঘাটতি ২১ শতাংশ এবং আয়করে ঘাটতি হয়েছে ২৩ শতাংশ।
বিদ্যমান অবস্থায় দেশ এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছে। লকডাউনের কারণে যানবাহনসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রায় ১২ দিন ধরে বন্ধ আছে। এ পরিস্থিতিতে যে বছর শেষে রাজস্ব আয়ের ঘাটতি আরো বাড়বে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন