ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সুপারশপ, ওষুধ ও মোবাইল সেবায় এনবিআরের চোখ

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ২১ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুপারশপ, ওষুধ ও মোবাইল সেবায় এনবিআরের চোখ

সারাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণে স্থবির প্রায় অর্থনীতির চাকা।  সংক্রমণ প্রতিরোধে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটির আওতায় রয়েছে পুরো দেশ। এর সঙ্গে থমকে আছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের কর্মকান্ডও।

তবে এতো হতাশার মধ্যে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছে সুপারশপ, ওষুধ, মোবাইল সেবা কিংবা সিগারেটের বিক্রয় বৃদ্ধি। কারণ অবরুদ্ধ অবস্থায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সুপারশপে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া জীবন রক্ষাকারী ওষুধের পাশাপাশি মোবাইল কল ও ইন্টারনেটের ব্যবহার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া থেমে নেই সিগারেটের উৎপাদন ও বিপণন।

আর তাই অবরুদ্ধ এ সময়ে খাতগুলোতে বাড়তি চোখ রাখতে চায় এনবিআর। এরই মধ্যে এপ্রিল মাসে কী পরিমাণ রাজস্ব আদায় হতে পারে, তা জানতে চেয়ে এলটিইউ (মূসক) ও সব ভ্যাট কমিশনারেটে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট বিভাগ।  গত ১৮ এপ্রিল মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি বিভাগ থেকে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. জামাল হোসেন সই করা চিঠিতে এ বিষয়ে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে চাহিদাকৃত তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও কিছু শিল্প ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান চালু রাখা হয়েছে। যেমন-সিগারেট, ঔষধ, সুপারশপ ইত্যাদি। ধরে নেওয়া যায়, এসব প্রতিষ্ঠান এপ্রিল মাসেও খোলা থাকবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কী পরিমাণ রাজস্ব আসে বা আসতে পারে, সে বিষয়ে একটি আগাম ধারণা প্রয়োজন। বিশেষ করে চালু প্রতিষ্ঠান, যাদের লেনদেন এক লাখ টাকা বা তার বেশি, তাদের তথ্য আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে পাঠাতে হবে।

এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই রাজস্ব আদায় কমে যাবে। জরুরি প্রয়োজনে কিছু শিল্প ও সেবা খাত খোলা আছে। তাই সুপারশপ, সিগারেট, ঔষুধসহ খোলা থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কী পরিমাণ রাজস্ব আসছে, চলতি মাসে কত আসতে পারে, এর ধারণা থাকা প্রয়োজন।  তাই এসব তথ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সবকিছু বন্ধ থাকলেও নিত্যপণ্য বিক্রয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের বিভিন্ন সুপারশপ খোলা রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি যথাসম্ভব মেনে এসব সুপারশপে বেচাকেনা চলছে। ব্যবসায়ীদের মতে, বর্তমানে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় সুপারশপের বিক্রি ২০-৩০ শতাংশ বেড়েছে।

তবে সুপারশপ থেকে ভ্যাট আদায় করতে আলাদা নজরদারির দরকার নেই।  কেননা সকল সুপারশপ অটোমেশনের আওতায় যথাযথ ভ্যাট আদায় করেই বিক্রি করে থাকে।  এমন দাবি করে সুপারমার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘দেশের এই দূর্যোগে আমার অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।  সুপারশপে বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ ও কর্মীদের বাড়তি সুবিধা দেওয়াসহ নানা খরচও বেড়েছে।  এতে সরকারের উচিত আমাদের বাহবা দেওয়া।  নতুন করে নজরদারির কিছু নেই।  কারণ আমরা আগে থেকেই সরকারকে ভ্যাট দিয়ে আসছি।  বরং আমাদের দাবি থাকবে অন্তত দুই মাসের জন্য হলেও তাদের বিদ্যমান ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা হোক।’

সুপারশপ মালিক সমিতি সূত্র বলছে, বর্তমান রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে কার্যক্রম পরিচালনাকারী দুইশ’র মতো সুপারশপ আছে। বছরে এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। সুপারশপ থেকে এনবিআর বছরে গড়ে একশ কোটি টাকার মতো ভ্যাট পায়।  শুধু সুপারশপ নয়, করোনা পরিস্থিতিতে সিগারেট ও ওষুধ প্রস্তুতকারকসহ যেসব শিল্প ও সেবাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে মার্চ মাসে কত রাজস্ব আদায় হয়েছে, তা সব ভ্যাট অফিসের কাছে জানতে চেয়েছে এনবিআর। এপ্রিল মাসে কত রাজস্ব পাওয়া যেতে পারে, তারও একটি ধারণা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিগারেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও দেশের রাজস্ব আদায়ের বড় খাত। প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে এ খাত থেকে। যার সিংগভাগই আসে সিগারেটের ব্যান্ডরোল বিক্রি করে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ও বাজারে বিপণন অব্যাহত আছে। করোনার মধ্যে সিগারেটের উৎপাদন ও বিপণনে সহায়তা করতে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে লকডাউনে বন্ধ নেই মোবাইল অপারেটরদের সেবা। এসময় মানুষ অনেকটাই মোবাইল নির্ভর। বিশেষ করে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বেড়েছে মোবাইল কলসহ সব ধরনের সেবা। মোবাইল খাত থেকে সরকার প্রতিবছর প্রায় ২৫-২৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করে। 

এছাড়া ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি কয়েকগুণ বেড়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। এছাড়া ইন্টারনেট সার্ভিস, বিভিন্ন পণ্যের পরিবেশক, খাদ্য সরবরাহ, মিডিয়া, এনজিওসহ আরো বেশ কিছু খাত থেকে রাজস্ব এসময় রাজস্ব আসবে বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

অপরদিকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধে ভ্যাট না থাকলেও উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। আর এই ভ্যাটের টাকা যোগ করেই ওষুধ প্রশাসন কর্তৃক বেঁধে দেওয়া মূল্য ঘোষণা হয়। সেখান থেকেও আদায় বাড়ার সুযোগ রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রথম আট মাসে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা।


ঢাকা/এম এ রহমান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়