ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

রাজধানীতে খুলেছে কিছু মার্কেট, ক্রেতার দেখা নেই

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ১০ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজধানীতে খুলেছে কিছু মার্কেট, ক্রেতার দেখা নেই

করোনার ভয়কে দূরে সরিয়ে দোকানের কর্মচারীরা রোববার (১০ মে) সকালে রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে এলেও শেষ পর্যন্ত চাবি নিয়ে আসেনি মার্কেট কর্তৃপক্ষ। ফটক আর খোলা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত হলেও শনিবার বিকেলে পুনরায় বন্ধ রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছে মার্কেট কমিটি।

তবে রাজধানী সুপার মার্কেটের আশপাশের কিছু দোকান খোলা হয়েছে। এসব দোকানের কর্মচারীরা বলেন, ‘নতুন কোনো পণ্য আনা হয়নি, পুরাতনেই ভরসা। ক্রেতাদের ভাব বুঝতে দু-এক দিন লাগবে। সময় খুবই কম। আশা করি, বিক্রি হবে, কাস্টমারও আসবে। সে আশায় কিছু কিছু পণ্যে ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষার ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’

ষোলআনা শোরুমের কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রেতাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। একসঙ্গে দুজনের বেশি মানুষকে দোকানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’

আজ থেকে মার্কেট খোলার কথা ছিল, তাই কিছু দোকানের মালিক, কর্মচারীরা মার্কেটের সামনে এসে ভিড় করেন। এসে জানতে পারেন, ঈদের আগ পর্যন্ত মার্কেট খুলছে না। এতে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তারা বলেন, ‘দেড় মাস দোকানে ঢুকতে পারিনি। দোকানের মালামালের কী অবস্থা হয়েছে, তাও দেখতে পারিনি। মালগুলো দেখার জন্য মার্কেটের ঢোকার অনুমতি পাচ্ছি না। আমরা গরিব মানুষ। মার্কেট বন্ধ, কোনো ইনকাম নাই। কিন্তু দোকানের ভাড়া তো ঠিকই দিতে হবে। সামনে ঈদ, ক্যামনে চলব?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানী সুপার মার্কেট কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘অনেক মার্কেটই খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু দেখেন, অনেকেই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মার্কেট খোলেনি। আমরাও মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টার, বঙ্গবাজার হকার মার্কেট, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, সুন্দরবন স্কোয়ার সুপার মার্কেট না খুললেও গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, পাতাল মার্কেট ও সড়কের পাশের কিছু শোরুম খোলা হয়েছে। তবে এসব দোকান অনেকটাই ক্রেতাশূন্য। মার্কেট কিংবা দোকানে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাত ধোয়া, জীবাণুনাশক স্প্রে, তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়েছে।

গুলিস্তান পাতাল মার্কেটে দায়িত্বরত কর্মকর্তা আব্দুল খালেক বলেন, ‘মার্কেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবাই যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে, এজন্য গোল চিহ্ন এঁকে দেওয়া হচ্ছে। মার্কেটে প্রবেশের আগে মাপমাত্রা মাপা হচ্ছে, স্প্রে করা হচ্ছে। আর মার্কেটে একমুখী রাস্তা করে দেয়া হয়েছে।’

গুলিস্তানের বাটা শো-রুমের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সামনে বড় উৎসব, ঈদুল ফিতর। এই ঈদকে ঘিরে মূলত আমাদের ব্যবসা। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট এমন যে, কী হবে, বুঝতে পারছি না। শো-রুম তো খুলেছি। কাস্টমারের দেখা নাই। জানি না বিক্রি কেমন হবে। অজানা আশঙ্কা কাজ করছে মনের ভিতর। মানুষ কি আদৌ মার্কেটে আসবেন?’

এদিকে, গুলিস্তানে বাস না চললেও অন্য সব ধরনের যান চলাচল অব্যাহত রয়েছে। মানুষও অবাধে বিচরণ করছেন। ফুটপাতে হকাররা বিচ্ছিন্নভাবে পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এসব স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কারো কোনো পদক্ষেপ নেই। অন্য স্বাভাবিক দিনের মতো মানুষ বিচরণ করছে। হকারদের ডাক-চিৎকারে মুখরিত কিছু কিছু স্থান।

হকাররা বলেন, ‘পেটের জ্বালায় রাস্তায় নেমেছি। করোনার চেয়ে বড় চিন্তা অন্ন জোগানো।’

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর তাজ সুপার মার্কেটসহ কয়েকটি মার্কেট খোলা হলেও ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ। সামনের অংশের কিছু দোকান খোলা হলেও কর্মচারী ছাড়া তেমন কোনো ক্রেতা চোখে পড়েনি।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, অধিকাংশ দোকান কর্মচারীর অভাবে খোলা হয়নি। সাধারণ ছুটি ঘোষণার শুরুতেই বেশিরভাগ কর্মচারী গ্রামে চলে গেছেন।

সরকার অনুমতি দিলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় বসুন্ধরা সিটি শপিংমল, যমুনা ফিউচার পার্কসহ অনেক মার্কেট খোলা হয়নি।


ঢাকা/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়