ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

লিবিয়ায় গিয়ে ছেলে নিখোঁজ, সর্বস্বান্ত বাবা-মা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ১৪ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
লিবিয়ায় গিয়ে ছেলে নিখোঁজ, সর্বস্বান্ত বাবা-মা

রাকিব লিবিয়ায় গিয়ে মারা গেছে না জীবিত—জানে না বাবা-মা। ঋণ করে ছেলেকে পাঠিয়ে এখন দিশেহারা তার পরিবার।

রাকিব ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। বাবা-মায়ের অভাবের সংসার। তাই তো বাধ্য হয়ে এলাকায় কৃষি কাজ করতেন রাকিব।  একদিন বাবা জানতে পারেন পাশের ইউনিয়নের একজন লিবিয়ায় লোক পাঠায়। বেতনও ভালো দেয়। ঋণ করে ছেলেকে পাঠিয়ে দেন লিবিয়ায়। যেতে খরচ সাড়ে তিন লাখ টাকা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতারক চক্র আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা দাবি করে। না হলে রাকিবকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ছেলেকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে বাড়ির জায়গায় বিক্রি করে প্রতারক চক্রকে টাকা দেন বাবা।

গত ২৮ মে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদাহ শহরে মানবপাচারকারীদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত হন। এর ১৫ দিন আগে লিবিয়ার বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ত্রিপলিতে নেওয়া হচ্ছিল ৩৮ বাংলাদেশিকে। পথেই তাদের জিম্মি করে সন্ত্রাসীরা। এর মধ্যে ২৬ জনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে নিহতদের তালিকায় রাকিবের নাম নেই। এ ঘটনায় রাকিবের বাবা মান্নান মুন্সি গত ৫ জুন পল্টন থানায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

আসামিরা হলেন—মনির হাওলাদার, মহসিন হাওলাদার, খোকন হাওলাদার, জাহাঙ্গীর, বাদশা ফকির, কবীর, শরীফ, লিবিয়ায় অবস্থানকারী মুন্না, রহিম বেঙলি, আলামিন, রুবেল, আরিফ, শাকিল, সাইফুল, মানিক, আব্দুল্লাহ।

মান্নান মুন্সি বলেন, ক্ষেত খামারে কাজ করে খাই। আমার কিছুই নাই। বড় আশা নিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমার সঙ্গে প্রতারণা করলো।

তিনি বলেন, রাকিবকে লিবিয়ায় পাঠাতে সাড়ে তিন লাখ টাকা টাকা চায় আসামিরা। তাদের কথামত জমি বন্ধক রেখে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টাকা দেই। কিন্তু পরে তারা আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা চায়। টাকা না দিলে ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাকে অমানসিক নির্যাতন করে। পরে বাধ্য হয়ে বাড়ির জমি বিক্রি করে তাদের আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা দেই।

রাকিব মারা গেছে না জীবিত—এই চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা সোহাগী বেগম। দৃষ্টি শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন কিছুটা। অপেক্ষায় আছেন ছেলেকে ফিরে পাবার।

সোহাগী বেগম বলেন, রাকিবকে ফেরত চাই। আমার বুকের ধন আমার কাছে ফিরে আসুক। আমি আর কিছু চাই না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক এস এম গফফারুল আলম বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন। এখন পর্যন্ত তিন আসামিকে (মহসিন হাওলাদার, জাহাঙ্গীর হোসেন ও বাদশা ফকির) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহসিন হাওলাদার দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ৮ জুন জাহাঙ্গীর হোসেন ও বাদশা ফকিরের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রোববার (১৪ জুন) তাদের আবারও ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।



মামুন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ