ঢাকা     শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩১

তিন নারীর দুই যুগ

বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২১, ১১ জানুয়ারি ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তিন নারীর দুই যুগ

শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া ‍ও রওশন এরশাদ

জাহাঙ্গীর আলম বকুল
ঢাকা, ১১ জানুয়ারি : দশম জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদ। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি বর্জিত এ সংসদে বিরোধী দলের আসনে থেকেও মন্ত্রিসভায় থাকছেন জাতীয় পার্টির সাংসদরা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম।

গত ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩১টি আসনে বিজয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জাতীয় পার্টি জয়ী হয়েছে ৩৩টি আসনে। গত বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সাংসদরা শপথ নিয়েছেন। এর পরই আওয়ামী লীগের দলীয় সভায় সংসদীয় দলের নেতা এবং সংসদ নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনে তার সিদ্ধান্তের কথা জানান। রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগের প্রধানকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। এর ফলে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

এ হিসাব থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের গত দুই যুগের ইতিহাসে যতবার সংসদ গঠিত হয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী হয়েছেন নারীরা। আর এবার সরকারে থেকেও বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে জাতীয় পার্টি।

১৯৯০ সালের এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর দেশে নতুন করে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪০টি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সেবার ভোট পড়েছিল ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী হন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আর ৮৮টি আসন পেয়ে বিরোধীদলীয় আসনে বসে আওয়ামী লীগ। বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

পরবর্তী ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। একতরফা এ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে সব কয়টিতে জয়ী হয়ে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ভোট পড়ে মাত্র ২১ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সংসদে কার্যত কোনো বিরোধী দল ছিল না। এ সরকারের মেয়াদ ছিল ৩৯ দিন।

এরপর ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেয় বিএনপি সরকার। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ১৪৬টি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা। আর ১১৬টি আসনে জয়ী হয়ে প্রধান বিরোধী দলে বসে বিএনপি। বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

পরবর্তী অষ্টম সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর। এ নির্বাচনে ১৯৩টি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৬২টি আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করে আওয়ামী লীগ। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেন শেখ হাসিনা।

অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৬ সালের অক্টোবরে। সংবিধান অনুসারে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল ২০০৭ সালের জানুয়ারির মধ্যে। পরে জরুরি অবস্থা জারি, সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করার পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে ২৩০টি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। আর ২৭টি আসনে জয়ী হয়ে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট বিরোধী দল ছিল এটি।

এ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে নারীদের নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান দীপু মনি। সরকারের শেষ সময়ে এসে স্পিকার নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। এ নির্বাচনের এখনো পর্যন্ত গেজেটে ঘোষিত ২৯০টি আসনের মধ্যে ২৩১টি আসনে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। প্রধান বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবে জাতীয় পার্টি। তারা ৩৩ আসনে জয়ী হয়ে সংসদে এসেছে।

এবারের সংসদে ভিন্ন আঙ্গিকে বিরোধী দলকে দেখা যাবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হলেও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করবেন দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য, এরশাদপত্নী রওশন এরশাদ। এতে গত দুই যুগের বাংলাদেশের ইতিহাসে নারী বিরোধীদলীয় নেতার ধারা অব্যাহত থাকল। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা শপথ নেওয়ার পর নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ধারাও অব্যাহত থাকবে।  

জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলে থাকলেও তারা সরকারেও থাকবে। তাদের চার-পাঁচজন নেতা মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। এটাও বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন ঘটনা। এর ফলে তারা সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা কার্যত পালন করতে পারবে কি না, সেটা দেখার জন্য জাতিকে অপেক্ষা করতে হবে।

 

রাইজিংবিডি/ বকুল / আবু    

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়