‘ভার্চুয়াল কোর্ট ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ’
রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির পরই করোনাকালীন সময়ে দেশের বিচার ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন ভার্চুয়াল কোর্ট। সংবিধান প্রদত্ত নাগরিকদের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার নিশ্চিতে ভার্চুয়াল কোর্টে বিচারকাজ শুরু হয়েছে।
করোনাকালীন এই সময়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষায় ভার্চুয়াল কোর্টের প্রবর্তন হওয়াকে সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আপদকালীন সময়ের জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট গঠন হলেও এটাকে ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ বলে অ্যাখায়িত করেছেন বিচার সংশ্লিষ্টরা।
তবে অনেকে বলছেন, করোনার বিশেষ পরিস্থিতে ভার্চুয়াল আদালত উপযোগী হলেও সব সময়ের জন্য অনলাইনে বিচারকাজ পরিচালনা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
ভার্চুয়াল কোর্টে বিচার শুরুর প্রথম দিনেই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ভার্চুয়াল কোর্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশে ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে এই ভার্চুয়াল আদালত।
ভার্চুয়াল কোর্ট ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা ও বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ভার্চুয়াল আদালতে শুরুতে একটু সমস্যা হতে পারে। তবে আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই তা শিখতে হবে এবং আমরা তা ওভারকাম করে যাবো। এটা অবশ্যই যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
ভার্চুয়াল কোর্ট বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনার ভয়ে মানুষ এখন আদালতে যেতে পারছেন না। নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে ভার্চুয়াল আদালতে বিচার চলছে। এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা। প্রথম আমি বলবো, নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানি নিয়ে আদালত জামিন দিচ্ছেন। এটা ঠিক আছে। কিন্তু কনটেস্টটেড ম্যাটার, যেখানে সাক্ষী প্রয়োজন রয়েছে, সেসব মামলায় ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি সম্ভব না।
দ্বিতীয়ত, উচ্চ আদালতে রিট ম্যাটার বিশেষ করে পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন বিষয়ে যে ভার্চুয়াল আদালত যে আদেশ দিচ্ছেন এটা আমি এপ্রিশিয়েট করি। নাগরিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হলেও ভার্চুয়াল আদালতে আসতে পারে। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ভার্চুয়াল আদালতে কার্যক্রম শুরু হলেও এখন থেকে আইনজীবীরা তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হবে। ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠায় ভার্চুয়াল আদালত চালু পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবে।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, আপদকালীন সময়ের জন্য ভার্চুয়াল আদালত শুরু হলেও স্বাভাবিক সময়েও এই অধ্যাদেশটি ক্রিমিনাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। যেমন ক্রিমিনাল মামলায় অনেক সাক্ষী না আসার কারণে বা দেশের বাইরে থাকার কারণে বিচারে বিলম্ব হয়। ভার্চুয়াল আদালত নিয়ে অধ্যাদেশ জারির ফলে এখন ভিডিও কনফারেন্সে বা অনলাইনে এসব ক্ষেত্রে সাক্ষী গ্রহণ করতে পারবেন আদালত। আইনজীবীরা সাময়িকভাবে অসুবিধার সম্মুখীন হলেও ধীরে ধীরে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ভার্চুয়াল কোর্ট একটি সাময়িক ব্যবস্থা। করোনাকালীন সময়ের জন্যই এটা গঠন করা হয়েছে। তবে সাময়িক সময়ে জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট গঠন করলেও বাংলাদেশে ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠায় এই সিদ্ধান্ত মাইলফলকের ভূমিকা রাখবে। এছাড়া বিচার সংশ্লিষ্ট সবাইকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তুলবে।
ভার্চুয়াল কোর্ট নিয়ে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, করোনাকালীন এই বিশেষ সময়ের জন্য ভার্চুয়াল আদালত গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশেই এটা বলে দেওয়া হয়েছে। অন্য সময়ে তো এ ধরনের আদালতের প্রয়োজন নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আবার স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থায় ফিরে যাবো। ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হওয়ার কারণে অনেকে জামিন পাচ্ছেন, বিচার পাচ্ছেন। এটাকে আমি এপ্রিশিয়েট করি। আইনজীবীদের একটি বিরাট অংশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করতে অভ্যস্ত নয়। তারা ভার্চুয়াল আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। আমি মনে করি, সব সময়ের জন্য অনলাইনে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার সময় এখনও বাংলাদেশে আসেনি। এটা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
উল্লেখ্য, গত ৯ মে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে করোনাকালীন সময়ে জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার অনুমতি দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল চেম্বার আদালত, হাইকোর্ট বিভাগের ৪ টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ ও সারা দেশের জজ কোর্টের ভার্চুয়াল আদালতে জরুরি বিষয়ে বিচার চলছে।
মেহেদী/সাইফ/নাসিম
রাইজিংবিডি.কম