করোনায় আটকে আছে নুসরাত হত্যা মামলার আপিল শুনানি
করোনাভাইরাসের কারণে বহুল আলোচিত ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিল শুনানি আটকে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হলেই নুসরাত হত্যা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হবে। শুনানির জন্য বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি শাহেদ নুর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মার্চ মাস থেকে নুসরাত হত্যা মামলা হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আছে। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এ মামলার শুনানি আটকে আছে। হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চের কার্যক্রম শুরু হলে আমরা নুসরাত হত্যা মামলার আপিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য আদালতে উপস্থাপন করব। আশা করছি, হাইকোর্ট খুললেই নুসরাত হত্যা মামলার আপিল শুনানি শুরু হবে।’
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী আরো বলেন, ‘নুসরাত হত্যা মামলায় ফেনীর বিচারিক আদালত ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। উচ্চ আদালতেও যেন আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে, সে বিষয়ে আইনি যুক্তি তুলে ধরব। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত আছি।’
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নুসরাত হত্যা মামলাটি হাইকোর্টে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুতের পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নিম্ন আদালতের রায়ের পর এ মামলা চার মাসের মাথায় হাইকোর্টে শুনানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। উপযুক্ত সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হবে।’
নুসরাত হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ চার আসামির আইনজীবী অ্যাডভোকেট জামিউল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসেই মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আসামিদের পক্ষে আপিল দায়ের করেছি। আমরা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত আছি।’
নুসরাত হত্যা মামলায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর রায় দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে হত্যার দায়ে বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ২৯ অক্টোবর ডেথ রেফারেন্সের জন্য নুসরাত হত্যা মামলার রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আসে। নুসরাত হত্যা মামলায় দণ্ডিত সব আসামি আপিল করেছেন।
গত বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় সোনাগাজী থানায় নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের করা মামলায় অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা। গত বছরের ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
এ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলেন—সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
ঢাকা/মেহেদী/রফিক
রাইজিংবিডি.কম