ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩১

‘মাউথওয়াশে মরবে করোনা’

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১৬ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘মাউথওয়াশে মরবে করোনা’

মাউথওয়াশে ভাইরাস মরে। কিন্তু করোনাভাইরাস মরে কি না তা জানতে গবেষণা শুরু করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) কয়েকজন চিকিৎসক। 

ঢামেকের ভাইরোলজি ও ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকরা যৌথভাবে এক মাস আগে এ গবেষণা শুরু করেছেন। তবে শেষ হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। যে মাউথওয়াশ নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে সেটির নাম পভিডোন আয়োডিন। যে মাউথওয়াশটি দিয়ে স্টাডি করা হচ্ছে সেটির নাম পভিডোন আয়োডিন। পভিডোন ০.৪ %, ০.৫%, ০.৬% ব্যবহার করে দেখছেন, কোনটায় ভালো কাজ করে।

ঢামেকের বিশেষজ্ঞরা প্রথমে দেখতে চান, এতে করোনাভাইরাস মরে কি না। যদি মরে তাহলে এই মাউথওয়াশ কতক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর থাকে বা ভাইরাস মুক্ত রাখে।

২ থেকে ৩ চামচ পভিডোন সমপরিমাণ পানিতে মিশিয়ে ঢামেকের করোনা ইউনিটে ভর্তি পজেটিভ রোগীদের গার্গল করানো এবং দুই তিন ফোঁটা পানির সঙ্গে দুই তিন ফোটা পভিডোন মিশিয়ে নাকে দেওয়ার আগে রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ৩০ সেকেন্ড গার্গল করার পর ৫ মিনিটের মধ্যে ফের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এটি ব্যবহারের আগে এবং পরে কী অবস্থা হয় তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

এ পর্যন্ত অন্তত ২০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও নমুনা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ শেষে সুনির্দিষ্ট ফলাফল জানাবেন এই চিকিৎসক দল। মাউথওয়াশ নিয়ে এ ধরনের স্টাডি আগে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেটা করছি এটা কখনো করা হয়নি। তবে এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, ‘আয়োডিন সল্যুশন ১৯৫৫ সাল থেকে মানুষ গলার সংক্রমণে ব্যবহার করে আসছে। ফলও ভালো। ইনফেকশন কন্ট্রোলে তখন থেকে এটা ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন দেখা হচ্ছে, নোবেল করোনাভাইরাসে পভিডোন আয়োডিন ০.৪%, ০.৫%, ০.৬% কাজ করে কি-না? 

তিনি আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ও কয়েকটি উন্নত দেশে ল্যাবরেটরিতে প্রমাণ হয়েছে যে এটা করোনাভাইরাসকে কিল করতে পারে। কিন্তু মানুষের শরীরে অ্যাপ্লাই করার পরে কাজ করে কিনা তা দেখার জন্য গবেষণা শুরু করেছি।’

ড. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, মাউথওয়াশটি ব্যবহারের পরে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে পজেটিভ না নেগেটিভ আসে। পজেটিভ না হয়ে নেগেটিভ হলে বোঝা যাচ্ছে করোনাভাইরাস মারা গেছে। সেক্ষেত্রে আমার বলতে পারি, এটা করোনাভাইরাস মারতে পারে। তবে পভিডোন ব্যবহারের পর কতক্ষণ পর্যন্ত ভাইরাস মুক্ত বা নেগেটিভ থাকে, এটা পরে পরীক্ষা করে দেখা হবে। আগে দেখবো নেগেটিভ হয় কি না।’

কয়ঘণ্টা পভিডোনের অ্যাকশান থাকতে পারে তা দেখার প্রক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, এটা করতে আরও ঘণ্টা খানেক পরে একটা স্যাম্পল নিতে হবে। তারপর আরও একটা স্যাম্পল নিতে হবে। পর পর কয়েকটা স্যাম্পল নিতে হবে। আমরা এটা আগে করবো না। এটা করবো পরে। আগে দেখবো আসলে এটা কাজ করে কি-না?

যদি কাজ না করে তাহলে এতোগুলো নমুনা নিয়ে এতো পরীক্ষা করিয়ে তো লাভ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেখতে হবে মানব দেহে কাজ করে কি না। যদি কাজ করে তখন আমার স্ট্যাডি এক্সটেনশন করব।’

সময়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মোটামুটি একটা হিসাব করে দেখেছি ৯৬টি নমুনা লাগবে। আবার প্রমাণ করার জন্য কিছু নেগেটিভ কন্ট্রোল লাগবে। সেই কন্ট্রোলগুলোতে শুধু আমরা পানি ব্যবহার করবো। বিশ্লেষণ করে ফল ভালো হলে আমার বলে দেবো এটা করোনাভাইরাস কিল করতে পারে। করোনার জন্য ব্যবহার করা যাবে।’

প্রাথমিকভাবে কী মনে হচ্ছে জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘গবেষণা শেষ না হলে অনুমান করে কিছু বলা যাবে না। তবে যতগুলো করেছি- তাতে আমরা ভালো ফল পেয়েছি। ভালো কিছু আশা করছি।’

এ চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. মো. গাউছুল আজমও এ ব্যাপারে ভালো ফল প্রত্যাশা করছেন বলে জানিয়েছেন।

একজন জানিয়েছেন, গার্গল করার পর গলার মধ্যে হালকা ঠাণ্ড ঠাণ্ডা অনুভূতি হয়। স্বস্তি লাগে। আরামদায়ক মনে হয়েছে।

বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পভিডোনের যথেষ্ট সরবরাহ আছে এবং দামও বেশি না।

 

ঢাকা/সাওন/ইভা

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়