কে হচ্ছেন পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল
মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম
ছবির বাম দিক থেকে উপরে অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন, মনসুরুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, নিচে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, এস এম মুনীর ও ব্যারিস্টার নিহাদ কবির
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক সময় দায়িত্ব পালন করেছেন সিনিয়র আইনজীবী মাহবুবে আলম। প্রজ্ঞা এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে অভাবনীয় দক্ষতার কারণে বিভিন্ন সময় গুঞ্জন শোনা গেলেও মাহবুবে আলমের বিকল্প খোঁজার প্রয়োজন মনে করেনি সরকার। তবে রোববার তাঁর মৃত্যুর পর আইনজীবীদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে- কে হচ্ছেন পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল? রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক এই পদে সরকার কাকে নিয়োগ দেবে এ নিয়েও রয়েছে কৌতূহল।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক আইন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, বর্তমানে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং এস এম মুনীর দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে সিনিয়রিটির দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ করার আগ পর্যন্ত তিনিই ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করবেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
ওই আইন কর্মকর্তা আরো বলেন, মুরাদ রেজা অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও নিয়োগ পেতে পারেন। কারণ তাঁর দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় অ্যাটর্নি জেনারেলের অবর্তমানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া অতীতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার নজিরও রয়েছে।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিনের নাম সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে। দীর্ঘ দিন বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দখলে থাকা সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিয়ে তিনি পরপর দুইবার সভাপতি হয়েছেন। ফলে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তাঁর নিয়োগের সম্ভাবনার কথাও বলছেন অনেকে। কমপক্ষে পাঁচজন আইনজীবী রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদককে ‘এ এম আমিন উদ্দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বিকল্প হতে পারেন’ বলে মন্তব্য করেছেন।
সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র আইনজীবী যিনি বিট্রেনের কুইন্স কাউন্সিল থেকে কিউসি পদধারী। আজমালুল হোসেন কিউসি আলোচিত মুন সিনেমা হলের মামলা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছেন এবং আপিল বিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণের আদেশও পেয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন মামলায় তিনি আইনজীবী হিসেবে ছিলেন।
বিভিন্ন সময় অ্যাটর্নি জেনারেল পরিবর্তনের গুঞ্জনে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকীর নামও আলোচনায় এসেছে। এই আইনজীবীর সততা ও দক্ষতার সুনাম রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরীও অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন। ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ মনসুরুল হক চৌধুরীর সংশ্লিষ্ট মহলে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এছাড়া এই তালিকায় নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কিছুদিন আগে নিয়োগ পাওয়া অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকার (এমসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবিরের নামও শোনা যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস এম মুনীর করোনাকালে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বিষয়টিকে অনেকে তাঁর ওপর সরকারের সুদৃষ্টি হিসেবে বিবেচনা করছেন।
এদিকে নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ব্যারিস্টার নিহাদ কবিরের নামও বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে আইনজীবীদের বিভিন্ন আলোচনায়। নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী সরকার দেশের প্রথম নারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ব্যারিস্টার নিহাদ কবিরকে নিয়োগ দিলে আশ্চর্যের কিছু হবে না। এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ সুপ্রিম কোর্টে সিভিল প্র্যাকটিস করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ১১ বছর ৮ মাস ১৪ দিন তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে সাংবিধানিকভাবে ‘অ্যাটর্নি জেনারেল’ পদটি শূন্য হয়েছে।
ঢাকা/তারা