মেঘনা গিলছে কমলনগর, দুই যুগেও থামেনি কান্না
রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম
জোয়ারের পানির চাপ বাড়ছে। উচ্চ জোয়ারে নদীর পানি সড়ক ছুঁয়েছে। লুধুয়া বাজারের ছবি
ছোট হয়ে যাচ্ছে কমলনগরের মানচিত্র। প্রায় দুই যুগে উপজেলার আয়তন কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। বাস্তুচ্যুত হয়েছে উপজেলার ৭০ সহস্রাধিক মানুষ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের উপকূলের জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মানুষ ক্রমাগত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করছে। মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙন, উচ্চ জোয়ারের চাপ এবং লবণাক্ততার প্রভাব উপজেলার বাসিন্দাদের চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
মাত্র ১৪ বছরের ব্যবধানে স্বচ্ছল গৃহস্থ থেকে দিনমজুর মাকসুদ আলম, ৪২। ৮০ শতাংশ জমি ছিল তার। চাষাবাদ করেই পরিবারের সদস্যদের খাদ্য চাহিদা মেটাতেন। অন্যান্য কাজ করে উপার্জন করতেন বাড়তি অর্থ। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার কালকিনি ইউনিয়নে ছিল তার বসতভিটা। গত কয়েক বছরে মেঘনা সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। বাড়ি নদীভাঙনে হারিয়েছেন তিনি চারবার। মাকসুদ আলমের ঠিকানা বদলেছে। এখন তিনি পার্শ্ববর্তী মারটিন ইউনিয়নের বাসিন্দা। দৈনিক উপার্জন কমেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আগে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেত; এখন তাদের লেখাপড়া বন্ধ। পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মাকসুদ তিন ছেলে রাসেল হোসেন, শরীফ হোসেন এবং আরিফ হোসেনকে স্কুল ছেড়ে কাজে পাঠিয়েছেন।
নদীর ভাঙন কবলিত মানুষেরা চিন্তিত।বসবাসের জন্য তাদেরকে বার বার নতুন স্থান খুঁজতে হয়
মাকসুদ আলমের সঙ্গে দেখা হয় বাত্তিরখালে। এটি একটি মাছের বাজার। সমুদ্র ও নদী থেকে মাছধরা ট্রলারগুলো এখানে আসে। মাকসুদ এই বাজারকেন্দ্রিক কাজে সম্পৃক্ত। বাজারের খুব কাছেই পরিবারসহ বাস করেন। মেঘনা নদীর তীরে এই এলাকায় জমি ভাড়া দেওয়া হয়। নদী ভাঙনে নিঃস্ব মানুষ সম্পদশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে ঘর তৈরি করে বাস করেন। মাকসুদ আলম বাৎসরিক ৩ হাজার টাকায় জমি ভাড়া নিয়েছেন।
বাত্তিরখাল এলাকায় দেখা হয় মাকসুদ আলমের মতো আরো অনেকের সঙ্গে। কালকিনি ইউনিয়নের পুরনো বাসিন্দা আবদুল বারেক, ৭০। এখন তার ঠিকানা বাত্তিরখালে। পুরনো বাড়ি চর কালকিনি থেকে পাঁচবার বাড়ি বদল করেছেন। বর্তমান ঠিকানা থেকে তার পুরনো বাড়ি প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে; এখন মেঘনা নদীর মাঝখানে। জীবনব্যাপী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার আবদুল বারেক শেষ বয়সে একেবারেই নিঃস্ব। অনিশ্চিত এক জীবনের পথে যাচ্ছেন তিনি।
কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহ জানান, তার ইউনিয়ন নদী ভাঙনে ক্ষতবিক্ষত। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড-এর মধ্যে তিনটি ওয়ার্ড (৬, ৭, এবং ৮) নদী ভাঙনে চিরতরে হারিয়ে গেছে। আংশিক বিলীন হয়েছে তিনটি ওয়ার্ড (৫, ৪ এবং ৯)। বাকি তিনটি ওয়ার্ড (১, ২ এবং ৩) অবশিষ্ট আছে। নতুন জনশুমারিতে ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ৩৫ হাজার থেকে কমে ১২ হাজারে নেমেছে। ফলে ইউনিয়নের বরাদ্দও কমে যাবে।
কমলনগরের বাকি ইউনিয়নগুলোর মধ্যে সাহেবেরহাট সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এখন ওই ইউনিয়নের মাত্র ১৫% অবশিষ্ট আছে। নদী ভাঙন কবলিত চর ফলকন ইউনিয়ন এবং পাটারীরহাট ইউনিয়ন অবশিষ্ট আছে ৪৫% করে। এছাড়া চর লরেঞ্চ ইউনিয়ন ৮৫% শতাংশ, চর মার্টিন ইউনিয়ন ৯৫% অক্ষত আছে। উপজেলার হাজিরহাট, চর কাদিরা এবং তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন এখানো নদী ভাঙনের মুখে পড়েনি।
গ্রামের পর গ্রাম মেঘনায় ডুবছে। কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া
সূত্র বলছে, লক্ষ্মীপুর জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণের উপজেলা কমলনগরের আয়তন ছিল ৩১৫ বর্গকিলোমিটার। মেঘনা নদীর ভাঙনে দুই যুগে উপজেলাটি অন্তত ৭০ বর্গকিলোমিটার ছোট হয়েছে। এখন কমলনগরের আয়তন অবশিষ্ট আছে ২৪৫ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার লোকসংখ্যা ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৯১৫ জন। এর মধ্যে অন্তত ৭০ হাজার মানুষ নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষদের মধ্যে অনেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে জীবিকার তাগিদে বড় শহরে চলে গেছে।
‘নদী আমাকে ভিক্ষুক বানিয়েছে’
কমলনগরের কালকিনি গ্রামের রাস্তা দিয়ে মেঘনা নদীর তীর ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় আমার কানে এলো কয়েকটি শব্দ; একটি হৃদয়বিদারক বাক্য। পারুল বিবি বলছিলেন, ‘নদী আমাকে ভিক্ষুক বানিয়েছে। আমরা বারবার বাস্তুচ্যুত হয়ে এখন একেবারে শূন্যে পৌঁছেছি। আমাদের আগের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবেন? আপনারা আমাদের কষ্টের গল্প লিখলে ফিরে আসবে আমাদের সেই জীবন?’
পারুল বিবির স্বামী নূর ইসলাম প্রয়াত হয়েছেন অনেক আগে। ফলে তার জীবনের লড়াই আরো কঠিন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে তার জীবন বিপন্ন। তার বাড়ি কমলনগরের কালকিনি গ্রামে। নদী ভাঙনের গ্রামের আরো অনেকের মতো পারুল বিবিও নিঃস্ব হয়েছেন। পারুল বিবি তার জীবনে আটবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
পারুল বিবির প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নাই। আমি ওই নারীকে আশা দিতে পারিনি। আমি বাংলাদেশের উপকূলের মেঘনা নদীর তীরের মানুষের কষ্ট দেখছি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। নদীর এই ভাঙন থামছে না। সেখানে হাজারো পারুল বিবি নীরবে কাঁদছে। নিঃস্ব মানুষের খোঁজ কেউ নেয় না। পরিকল্পনায় এদের কণ্ঠ প্রতিফলিত হয় না।
মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙন। কমলনগর উপজেলার মারটিন ইউনিয়নের বাত্তিরখাল থেকে তোলা ছবি
পারুল বিবির প্রতিবেশী হালিমা বিবি, ৪৯। স্বামী আশরাফ আলী গ্রামে ওষুধ বিক্রি করেন। জীবনের বড় একটি সময় এই পরিবারটি ভিটেমাটি হারা। বাড়ি স্থানান্তর করতে করতে পরিবারটির এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। সব হারিয়েছেন নদীতে। পরের বসবাস কোথায় হবে, জানেন না হালিমা।
কালকিনি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল মালেক, ৭০। তীরে দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে নদীর মাঝখানে তার বাড়ির সীমানা আঁকার চেষ্টা করছিলেন। বাড়ি অনেক আগে হারিয়েছেন। অর্থ সংকটের কারণে নদীর গা ঘেঁষে বাস করছেন। অন্যত্র যেতে পারছেন না। এক সময় নিজের জমিতে চাষাবাদ করতেন তিনি। কিন্তু এখন তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।
কালকিনি গ্রামে নাছিরগঞ্জ বাজার প্রসিদ্ধ। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন আসতো বাজারে। বাজারের নিকটে ভিড়ত মাছধরার ট্রলার। বাজারটি ছিল এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। কিন্তু গত কয়েক বছরে নাছিরগঞ্জ বাজার স্থানান্তর করতে হয়েছে কয়েকবার। বাজারের ব্যবসায়ীরা এখন দুশ্চিন্তায়। বাজার এবং গোটা এলাকা রক্ষার জন্য এলাকাবাসী অনেকবার নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ‘জংলা বাঁধ’ (বিকল্প পন্থায় নদীর ভাঙন প্রতিরোধ) দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তাতে সাময়িকভাবে নদীর ভাঙন প্রতিরোধ হলেও দীর্ঘমেয়াদি ফল আসেনি।
নাছিরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন ঋণে আবদ্ধ। নদী ভাঙনের কারণে দোকান পরিচালনা করতে পারছেন না। ক্রেতাদের কাছে অনেক বকেয়া জমেছে, যা তুলতে পারছেন না। তার নিজের বাড়ি স্থানান্তর করতে হচ্ছে, দোকান স্থানান্তর করতে হচ্ছে। এই স্থানান্তরের জন্য দরকার অনেক টাকা। এত টাকা কোথায় পাবেন আনোয়ার? ফারুক হোসেনের দোকানটি নাছিরগঞ্জ বাজার থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। মেঘন নদী এখন তার দোকানের গা ঘেঁষে বয়ে যাচ্ছে। অতি দ্রুত দোকান সরাতে হবে। ক্রেতাদের কাছে তার বকেয়া আছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। দোকান বন্ধ করে দিলে এই বকেয়া পাওয়া যাবে না। নদী ভাঙনে ফারুক হোসেন সব হারিয়েছেন।
শুধু আনোয়ার কিংবা ফারুক নন, একই অবস্থা নাছিরগঞ্জ বাজারের আরো অনেক ব্যবসায়ীর। ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে তারা চিন্তিত। দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তা এদের জীবন ঘিরে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মনসুনে মেঘনা নদীর ভাঙন অস্বাভাবিক বাড়ে। অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে ভাঙন আরো তীব্র হয়। প্রতি মনসুনে নতুন করে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। তবে বছরের সব সময়ই মেঘনা নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকে। কমলনগর এবং রামগতি উপজেলা খুবই ভাঙনপ্রবণ। এই দুই উপজেলা ঘিরে আছে ভয়াল মেঘনা নদী, যা সবকিছু নিয়ে যাচ্ছে। মেঘনা নদীর ভাঙন বাড়ছে এবং পারুল বিবি ও হালিমা বিবিসহ আরো অনেক মানুষের জীবনের বোঝা বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এই মানুষগুলো দায়ী নন। তবুও তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দুর্দশা ভোগ করছে সারা জীবন।
আশা নিয়ে বেঁচে থাকা
হয়তো দ্রুতই মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হবে। হয়তো দ্রুতই প্রতিরোধ হবে নদীর ভাঙন। কমলনগরের প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেঁচে এই আশা নিয়ে। প্রায় দুই যুগ ধরে নদী ভাঙন রোধের জন্য লড়াই করছে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে সরকারি যথাযথ কার্যক্রম না থাকায় ভাঙন থামছে না। মেঘনা নদীর তীর রক্ষায় নেই সমন্বিত পরিকল্পনা। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শুধু আশা নিয়েই বেঁচে আছে। তারা প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছে।
একে একে নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে সব।কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া
সূত্র বলছে, মতিরহাট থেকে কমলনগরে মেঘনা নদীর ভাঙন রোধের কাজ প্রথম শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। তখন ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল ৮০০ মিটার (এক কিলোমিটারের কিছু কম)। এরপর ২০০৭ সালে কমলনগরের কালকিনি ইউনিয়নের মতিরহাট এলাকায় এক্সটেনশন বাঁধ নির্মাণ করা হয় ৬০০ মিটার (আধা কিলোমিটারের কিছু বেশি)। ২০১৬ সালে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয় ১৯৮ কোটি টাকা। ওই টাকায় রামগতি অংশে ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও কমলনগর অংশে কাজ হয়নি। কমলনগরে ২০১৭ সালে ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ হয় এক কিলোমিটার। একইসঙ্গে ২০১৮ সালে রামগতি বাজারে আরো এক কিলোমিটার বাঁধের কাজ হয়। চলতি বছর কমলনগরে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩১০০ কোটি টাকা। কিন্তু এখনো কাজ শুরু হয়নি। মেঘনা নদীর ভাঙন রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা না থাকায় কমলনগরে নদীর ভাঙন অব্যাহত আছে।
কমলনগরের মেঘনার তীরে কান পাতলে শোনা যায় ভাঙন কবলিত মানুষের কান্না। চর ফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া বাজারের ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা একটাই দাবি করছি- মেঘনার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিন। কিন্তু দুই যুগেও ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আশা নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। আমাদের জীবন তো শেষ হলো আশায় আশায়। আমাদের পরের প্রজন্মও হয়তো আশা নিয়ে বাঁচবে। কিন্তু এই আশা পূরণে আমরা সরকারের উদ্যোগ চাই।’
২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস জাতীয় কমিটির ৯৩তম সভায় লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলাকে বিভাজন করে ‘কমলনগর’ নামে দেশের ৪৭২তম উপজেলা গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ২০০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এই উপজেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সী একটি উপজেলা বিকাশের আগেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এ সম্পর্কিত আরেকটি প্রতিবেদন: জোয়ারের চাপ বাড়ছে, শঙ্কিত উপকূলের মানুষ
/তারা/