ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

সেই ‘মাসুদের’ দক্ষতায় বদলে গেছে খুলনা বিআরটিএ

নাজমুল হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ৯ মার্চ ২০২৩   আপডেট: ২০:৫৯, ৯ মার্চ ২০২৩
সেই ‘মাসুদের’ দক্ষতায় বদলে গেছে খুলনা বিআরটিএ

‘‘মাসুদের সঙ্গে দেখা হলেই প্রায় আমি বলি, ‘মাসুদ তুমি ভালো হয়ে যাও’, কিন্তু সে এখনও পুরোপুরি ভালো হয়নি। মাসুদ দীর্ঘদিন বিআরটিএ’তে আছে। ব্যবহার ভালো, মধুর মতো। কিন্তু যা করার একটু ভেতরে ভেতরে করে।”— সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিআরটিএ মিরপুরের তৎকালীন উপ-পরিচালক মাসুদ আলমকে কথাগুলো বলেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর থেকেই নেটজগতে ভাইরাল তিনি। সেই ‘ভাইরাল মাসুদ’ এখন বিআরটিএ খুলনা বিভাগীয় পরিচালক। আর তার দক্ষতায় বদলে গেছে খুলনা বিআরটিএ।

২০২২ সালের ২১ জুন মাসুদ আলম আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনা বিআরটিএ’র বিভাগীয় পরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার হাত ধরেই স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে প্রবেশ করেছে খুলনা বিআরটিএ। 

কিছুদিন আগেও খুলনায় নির্দিষ্ট দিনে ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাওয়া ছিল অনেকটাই স্বপ্নের মতো। লাইসেন্সের আশায় বিআরটিএ অফিস ঘুরতে হতো বছরের পর বছর। থাকতো দালালদের দৌরাত্ম্য। তবে এখন বদলে গেছে সেই দুর্ভোগের চিত্র। ড্রাইভিং লাইসেন্সের আশায় এখন আর গ্রাহককে বারবার আসতে হবে না অফিসে। ঘরে বসেই অনলাইনে করা যাবে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন। এরপর তাদের দেওয়া সময় অনুযায়ী তিনটি কাজ শেষ করে ঘরে বসেই পাওয়া যাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স। 

উদ্বোধনী দিনে সেবাগ্রহীতা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যেই খুলনা বিআরটিএ থেকে ডিজিটাল সিস্টেমে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন। যা আগে অ্যানালগ সিস্টেমে প্রায় একমাস সময় লেগে যেতো। 

আরেক সেবাগ্রহীতা খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘একই দিন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এবং প্রাক্টিক্যাল ও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট গ্রহণ করে লাইসেন্স সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে গ্রাহক দিনে দিনেই সেবা পাচ্ছেন। এতে গ্রাহকদের সময় এবং অর্থ দুটি সাশ্রয় হচ্ছে।’ 

পড়ুন: ‘ভালো হয়ে যাও মাসুদ’ এখন বিআরটিএ খুলনার পরিচালক 

তবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহে একটিমাত্র কাউন্টার থাকায় কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জানান অনেকে। এখানে কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হলে সেবাপ্রাপ্তি আরও সহজ হবে বলেও উল্লেখ করেন তারা।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে আবেদন করলেই মোবাইলে ফিরতি বার্তা পাবেন গ্রাহকরা। আর সেটা দেখেই সড়কে পরীক্ষা করা যাবে কে লাইসেন্সের আবেদন করেছেন, কে করেননি। এতে আইনগতভাবে যান চলাচলে ভোগান্তি হবে না।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার বিমল কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, ‘বায়োমেট্রিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করলে গ্রাহকের কাছে একটি ডকুমেন্ট থাকবে। সেটা দেখালেই আমার তাকে ছাড় দেবো। তাকে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হবে না। সহজেই রাস্তায় চলাফেরা করতে পারবেন।’ 

বিআরটিএ’র খুলনা বিভাগীয় পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদ আলম জানান, এখন থেকে হয়রানি ছাড়াই গ্রাহকরা তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পেয়ে যাবেন। টেস্ট দেওয়ার পর ওইদিনই ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হবে। যদি টেস্টে পাস করেন, পরবর্তীতে ফি জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। গ্রাহককে আর বিআরটিএ অফিসেও আসতে হবে না। 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি বিআরটিএ’র মিরপুর কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেসময় মাসুদ প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক ছিলেন। তখন সড়কমন্ত্রীর কাছে সেবাগ্রহীতারা লাইসেন্স সময়মত না পাওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন। পরিদর্শনকালে সড়কমন্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন মাসুদ আলম। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ শুনে তিনি তখন মাসুদকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘ভালো হয়ে যাও মাসুদ, ভালো হয়ে যাও। তোমাকে আমি অনেক সময় দিয়েছি। তুমি ভালো হয়ে যাও। তুমি কি এখানে আবার পুরানো খেলা শুরু করেছ? তুমি কি কোনোদিনও ভালো হবে না?’ 

তারপর থেকে মাসুদকে নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। লোকে একে-অপরকে এখনও রসভরা সুরে বলে থাকেন, ‘মাসুদ ভালো হয়ে যাও’। ফেসবুকে এখন কোড ল্যাঙ্গুয়েজ ‘মাসুদ, তুমি কি ভাল হবা না?’ ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আশপাশে থাকা অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, সেসময় প্রায়ই হঠাৎ করেই বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শনে যেতেন ওবায়দুল কাদের। তখন মন্ত্রীর সঙ্গে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক মাসুদ আলমও থাকতেন। কাদের তখন অনেকটা হাসি-ঠাট্টা করেই কথাগুলো বলতেন।

খুলনা/নূরুজ্জামান/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়