বদলি নেই: হতাশায় পাঠদানে মনোযোগ হারাচ্ছেন শিক্ষকরা
ফাইল ফটো
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে সনদপ্রাপ্ত ইনডেক্সধারী (নিবন্ধিত) শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেতেন। কিন্তু, সর্বশেষ চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সে সুযোগ স্থগিত করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে চরম হতাশ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এতে পাঠদানে মনোযোগ হারাচ্ছেন তারা।
বদলির জন্য নিয়োগ নীতিমালার ৭ নম্বর ধারা স্থগিতের পর থেকে বদলি নিয়ে শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে তাদের দাবি জানিয়ে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি দাবি করছেন। দ্রব্যমূল্য বাড়ায় স্বল্প বেতন দিয়ে পরিবার চালানো ও কর্মস্থলের কাছে ভাড়া বাসায় বসবাস করা কঠিন হয়ে যাওয়ায় বদলি চান তারা। এ দাবি নিয়ে শিক্ষকরা মানববন্ধন করছেন, এনটিআরসিএতে যাচ্ছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছেন। তবে, সমাধান মিলছে না।
জাহিদলু ইসলাম নামের এক শিক্ষক বলেন, বাড়ি থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করছি। পরিবারের কেউ মারা গেলেও সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারি না। বড় কোনো ছুটি না পেলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ নেই। যে বেতন পাই, সে বেতন দিয়ে আসলে পরিবার নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকারও সুযোগ নেই।
তাসনিম সুলতানা নামের আরেক শিক্ষক বলেন, আমার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। আমি নিয়োগ পেয়েছি চট্টগ্রামে। আমার স্বামী একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। তিনিও চাকরিটা ছেড়ে আমার সঙ্গে এখানেই থাকেন। শুধু আমি একা না, আমার মতো অনেকেই এ পরিস্থিতির শিকার। সরকারের কাছে দাবি, তারা আমাদের বিষয়টিকে বিবেচনায় নেবেন।
রাইসুল ইসলাম (ছদ্মনাম) বলেন, অনেক দূরে চাকরি। নেই ভালো বেতন-ভাতা। পরিবার ছাড়া থাকলে খুব হতাশ লাগে। সত্যি বলতে, চরম হতাশা থাকায় পাঠেও মনোযোগ বসে না।
বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিও নীতিমালা নিয়ে গতকাল রোববার (১ জুলাই) আলোচনা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে, কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। ঈদুল আজহার পর এমপি নীতিমালা নিয়ে পুনরায় সভা হবে, সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এমপিও সংক্রান্ত যে বৈঠকগুলো হয়, সেখানে বদলির বিষয়টি যেন আসে। শিক্ষামন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা যেন বিষয়টিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা এম এ খায়ের বলেন, বদলি নিয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। এটি মন্ত্রণালয় অবগত। দেখা গেছে, অনেকে প্রথমে একটা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নেয়। পরে এলাকায় যাওয়ার চেষ্টায় থাকে। আসলে এটি জটিল প্রক্রিয়া।
এনটিআরসিএ’র সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের সদস্য সচিব হাবিবুল্লাহ রাজু বলেন, একজন শিক্ষকের পক্ষে পরিবার ছেড়ে নিজ বাড়ি থেকে ৪০০-৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে চাকরি করা খুবই কষ্টকর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে বাড়ি ভাড়া করাও দুঃসাধ্য। কারণ, বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়িভাড়া মাত্র ১ হাজার টাকা দেয় সরকার। দূরত্বের কারণে অনেকেই বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা-মা থাকলেও তাদের সেবা করার সুযোগ পান না। এর ফলে ওই শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করানোর মনোযোগ অনেকটা হারিয়ে ফেলেন।
তিনি বলেন, এমপিও নীতিমালার ৭ নম্বর ধারায় ছিল, ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকরা গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে পারবেন। কিন্তু, মন্ত্রণালয় চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির আগে এ ধারাটি সাময়িক স্থগিত করায় শিক্ষকদের মাঝে চরম হাতাশা বিরাজ করছে। তাই, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ, দ্রুত শিক্ষকদের বদলি বা নীতিমালার ৭ নম্বর ধারা পুনরায় বহাল করা হোক।
বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক শান্ত আহমেদ বলেন, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের মতোই সব রকম মান বজায় রাখা হচ্ছে। অথচ, বেসরকারি শিক্ষকরা বেতন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে, বদলির ব্যবস্থা না থাকা বেসরকারি শিক্ষকদের চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তিনি বলেন, এনটিআরসিএ প্রার্থীদের জেলা কোটায় উত্তীর্ণ করে জাতীয় মেধাতালিকার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করছে, যা অযৌক্তিক। আমরা চাই, এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে বদলি করুক বা ইনডেক্সধারীদের জন্য আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যথাযথ মানদণ্ড বজায় রেখে বদলির সুযোগ চালু করুক।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কিন্তু আমরা নিয়োগ দেই না। তারাই শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন করে যোগ দেন। এগুলো যেহেতু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সেহেতু বদলির সুযোগ নেই।
ইয়ামিন/রফিক