বিশ্ব যুব দিবস
যুবকদের ‘সবুজ দক্ষতা’য় উপকূলে জ্বলবে সবুজ বাতি
অ্যাডাপটিভ লার্নিং ক্লাসে শিক্ষার্থীরা। ছবি সংগৃহীত
‘আমরা ছোটবেলা থেকে প্রাকৃতিক বিপদের মুখোমুখি। আমাদের পরিবারের সাথে দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমরা বেড়ে উঠেছি। দুর্যোগগুলো আমাদের পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত করেছে। আগে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা গ্রীনহাউজ প্রসঙ্গে ততটা জানতে পারিনি। এখন এ বিষয়ে অনেক তথ্য জানতে পারছি। সবুজ দক্ষতা দিয়ে আমরা সবুজ পৃথিবী গড়তে এগিয়ে যাব।’
কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরা জেলার বড়দল ইউনিয়নের বড়দল বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। তার বাবা ফারুক হোসেন গাজী গ্রামীণ জরিপকারক এবং কৃষক। ঘন ঘন সাইক্লোনসহ নানামুখি প্রাকৃতিক বিপদের মুখে এই পরিবারটি সংকটের মধ্য দিয়েই জীবন অতিবাহিত করে আসছে। ঘূর্ণিঝড় সিডর, ঘূর্ণিঝড় আইলা, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ আরো অনেক প্রাকৃতিক বিপদ মোকাবিলা করতে হয়েছে ফারুক হোসেনের পরিবারকে। সংকটের ধকল সইতে হয় খাদিজাতুল কুবরা এবং তার অন্যান্য ভাইবোনদেরও। খাদিজাতুল কুবরা এখন শিখছে দুর্যোগের পাঠ; যা এই শিক্ষার্থীকে এমনকি দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষদের সাহায্য করতে পারে।
জলবায়ু সংকটাপন্ন এলাকার ছেলেমেয়েদের দুর্যোগ মোকাবিলা এবং সবুজ দক্ষতা বাড়িয়ে তুলতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের উপকূলের কয়েকটি এলাকায়। যা আন্তর্জাতিক যুব দিবসের এবারের প্রতিপাদ্যর সঙ্গে সম্পৃক্ত। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য- ‘যুবদের জন্য সবুজ দক্ষতা: একটি টেকসই বিশ্বের দিকে‘।
যুব দিবস, যুবকদের প্রেরণা
আজ ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সুপারিশের পরে ১৯৯৯ সালে প্রথম বারের মতো পালিত হয় এই দিবসটি। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রথম বিশ্ব যুব ফোরাম অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে। সেই ফোরামে যুব সমাজের এক প্রতিনিধি প্রথম এই বিশেষ দিবসটি পালন করার প্রস্তাব দেন। তখনই সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত না হলেও, ১৯৯৮ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ আয়োজিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যুবকল্যাণ মন্ত্রীদের সমাবেশে এই দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক যুব দিবস' পালন করার ব্যাপারে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
যুব দিবসের মূল উদ্দেশ্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঘটনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে যুবকদের অংশগ্রহণ এবং মতামত আলোচনা করা। বিশ্বব্যাপী নানামুখি সংকটের মধ্যেও যুবসমাজ জাতিগত বৈষম্যের মতো ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়াও তারা জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এমনকী মহামারির মতো বিভিন্ন ঘটনা পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। বাংলাদেশের তরুণ-যুবকেরাও দেশের বিভিন্ন ধরনের সংকটকালে দায়িত্ব পালন করেছে। বিশেষ করে, তারা বাংলাদেশের জলবায়ু আন্দোলনকে বিশ্ব আঙ্গিনায় পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে যুব সমাজের এই অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক যুব দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। অন্যান্য বছরের মতো এ বারও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে জলবায়ু সংকট বাড়ছে
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে তীব্র ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে স্বাদু পানির এলাকাসমূহে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে উপকূলীয় বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর পানীয় জলের সহজলভ্যতা, স্বাদু পানি নির্ভর কৃষি কাজ ও জীবিকার উপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাব এই অঞ্চলের নারী ও শিশুদের উপর আরো মারাত্মক।
স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জীবনেও জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বহু কিশোরীর বিয়ে হয়ে যায় অল্প বয়সে। তারা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। পরিবারের সংকটের কারণে বহু কিশোর কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়। সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে এমন অনেক ঘটনা পাওয়া যায়। প্রতাপনগর ইউনিয়নের তালতলার বাসিন্দা ফারুক হোসেন ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপদের মুখে পড়ে তার ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া কিশোরী কন্যাকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তার ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে স্কুল ছেড়ে কাজে যোগ দিয়েছে। বড় ছেলে অনেক কষ্টে অনার্স পাস করেছিল। কিন্তু চাকরির অভাবে সে এখন রাজমিস্ত্রির কাজ করে। ফারুক হোসেন বলেন, ‘প্রাকৃতিক বিপদে পড়ে আমি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছি। বড় ছেলে অনার্স পাস করলেও চাকরি পায়নি। চাকরি পেতে টাকা লাগে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে।’
আশাশুনির প্রতাপনগরের সাংবাদিক মাছুম বিল্লাহ, যিনি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সর্বনাশা ঘটনাগুলো খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর প্রায় দুই বছর এই এলাকার মানুষ জোয়ার-ভাটার সাথে বসবাস করেছে। এই এলাকায় নতুন নতুন অনেক সংকট তৈরি হয়েছে। বড়দের সাথে ছোটরাও পরিবারের সংকটগুলো মোকাবিলা করে। জরুরি সময়ে সংকট উত্তরণে যুবকদের স্থানীয় উদ্যোগ দেখেছি। কিন্তু তাদের রয়েছে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার অভাব। দক্ষতা বাড়াতে পারলে তরুণ-যুবকেরা সংকট উত্তরণে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে।’
সবুজ দক্ষতা জ্বালাবে সবুজ বাতি
জলবায়ু সংকটাপন্ন এলাকায় অ্যাডাপটিভ লার্নিং-এর আওতায় শিক্ষার্থীরা নানামুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর বিভিন্ন প্রভাব সম্পর্কে নতুন করে অনেক কিছু শিখছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা দায়িত্বশীল হয়ে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রভাবের শিকার হবার পরিবর্তে তারা পরিবর্তনের রূপকার হয়ে উঠবে। নিজেদের পরিবর্তনের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতো কিশোর-কিশোরীদের সম্পৃক্ত করবে। সে কথাই বলছিলেন সাতক্ষীরার আশাশুনির বড়দল এলাকার অ্যাডাপটিভ লার্নিং-এর শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার বাবা ফারুক হোসেন গাজী।
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগপ্রবণ এলাকার পরিবারগুলো বহুমুখি সংকট মোকাবিলা করে। শিশুরাও সে সংকটের বাইরে নয়। ওরা শিশুকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের সংকট মোকাবিলা করে। সে ক্ষেত্রে অ্যাডাপটিভ লার্নিং এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য খুব দরকারি। আমি আশাকরি শেষ অবধি এই কার্যক্রম জলবায়ু সংকটাপন্ন এলাকায় অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।’
খাদিজাতুল কুবরা একা নন, তার গ্রামে মো. আল আমীনের মেয়ে শামীমা খাতুন, শহীদুল ইসলামের মেয়ে সুমি খাতুন, দাউদ মোড়লের ছেলে ফাহিম হোসেন, মহসিন গাজীর ছেলে মো. নাঈমসহ আরো অনেক শিক্ষার্থী অ্যাডাপটিভ লার্নিং-এ সবুজ দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়েছে। শুধু সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলা এই বড়দল এলাকায় নয়, এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে খুলনা জেলার দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা এবং সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার প্রায় তিন হাজার কিশোর-কিশোরী, যারা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে কলেজ পড়ুয়া।
জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই দুইটি জেলার বিপদাপন্ন। জনগোষ্ঠীর জীবিকা, আবাসন এবং পানীয় জলের সমস্যা প্রকট। সংকট মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে অ্যাডাপটিভ লার্নিং সেন্টার। বিপদাপন্ন এলাকার বাস্তবের অবস্থাগুলোর সাথে আগামী প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের আরো নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করতে শিক্ষার্থীদের দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একদল ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী এবং আরেক দল ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী। এরা ‘চলো পৃথিবী সাজাই’ শিরোনামে জলবায়ু শিখন কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হচ্ছে। এই শিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তন শিখছে বিশ্ব, বাংলাদেশ এবং উপকূলের প্রেক্ষাপটে। এর আওতায় থাকছে গ্রীন হাউজ, ইতিহাসের ভয়াবহতম প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো বিষয়ে আলোকপাত।
জলবায়ু শিখনে শিক্ষার্থীরা শিখছে মানুষের জীবন এবং জীবিকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। যে ঘটনাগুলোর সঙ্গে এই শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। কিন্তু এসব বিষয়ে ওদের আগে কিছুই জানা ছিল না। এখন ওরা জানতে পারছে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নিরাপদ পানির অভাব, নদীভাঙন, প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস, স্বাস্থ্যঝুঁকি, জীবিকার উৎস্য ধ্বংস, কৃষি উৎপাদন হ্রাস ইত্যাদি বিষয়ে। শিক্ষার্থীরা শিখছে নারী ও কন্যা শিশুদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বাড়তি প্রভাব সম্পর্কে। এতে তাদের শেখানো হচ্ছে- নারী পরিবর্তনের রূপকার। ওরা শিখছে জলবায়ু পরিবর্তনে জেন্ডার সমতার প্রয়োজনিয়তা, কিশোর-কিশোরীর উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদি। শিক্ষার্থীরা শিখছে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, সক্রিয় নাগরিকত্ব, অধিকার, দায়িত্বসহ নানান বিষয়। জলবায়ু আন্দোলন এবং জলবায়ু স্বেচ্ছাসেবায় কিশোর-কিশোরীদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়গুলো এই পাঠ থেকে শিখছে শিক্ষার্থীরা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সবুজ দক্ষতা গড়ে উঠছে, যা জলবায়ু সংকটাপন্ন এলাকায় সবুজ বাতি জ্বালবে বলে উদ্যোক্তাদের আশাবাদ।
খুলনার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বাজুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শীলা মন্ডল অ্যাডাপটিভ লার্নিং সেন্টারের একজন শিক্ষক। জলবায়ু বিষয়ে পড়ানোর জন্য তিনি প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তার আওতায় বাজুয়া ইউনিয়নের দুইটি কেন্দ্র রয়েছে। শীলা মন্ডল বলেন, ‘আগামী প্রজন্মকে জলবায়ু বিষয়ে সচেতন করার কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। প্রশিক্ষণ সহায়িকার বাইরেও আমার প্রাকৃতিক বিপদের নানান অভিজ্ঞতা আছে। আমি সেগুলো শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করছি। ওরা বুঝতে পারছে। ওরা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতন হচ্ছে। আগামীতে পৃথিবী সাজাতে ওরাও ভূমিকা রাখতে পারবে।’
কারা বাস্তবায়ন করছে
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর, বিশেষত নারীদের, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবেলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ বা জেন্ডার রেসপনসিভ কোস্টাল এডাপ্টেশন প্রকল্প (জিসিএ)। এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার ও গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ)-এর যৌথ অর্থায়নে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এতে কারিগরি সহায়তা দেয়। খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ৫টি উপজেলা- দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, আশাশুনি ও শ্যামনগরে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে দু’টি জেলার বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর জলবায়ু সহনশীল জীবিকা এবং পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের কাজ করছে।
এ প্রকল্প নারীদের উপর অমূল্যায়িত সেবামূলক কাজের বাড়তি বোঝার বিষয়টিতে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে ও একই সাথে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে জেন্ডার সংবেদনশীল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে, প্রকল্পটি তিন হাজার কিশোর- কিশোরীকে 'অ্যাডাপ্টিভ লার্নিং' উদ্যোগের আওতায় আনার মাধ্যমে তাদের জেন্ডার সমতামূলক এবং জলবায়ু সচেতন আচরণ সম্পর্কে ধারণা প্রদান এবং তাদের কে 'চেঞ্জ এজেন্ট' হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস নিয়েছে।
উদ্যোক্তারা জানান, অ্যাডাপটিভ লার্নিং সেন্টার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা করবে। এই উদ্যোগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্বলতার দুষ্ট চক্র ভেঙ্গে কিশোর-কিশোরীদের এগিয়ে নেবে, জলবায়ু সহনশীল জীবনযাপনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা বাড়াবে, বিশ্বব্যাপী চলমান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার উপায় জানতে সাহায্য করবে। এই উদ্যোগ নারী ও পুরুষ, ছেলে ও মেয়ে একে অপরের প্রতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে সাহায্য করবে, বাড়িতে এবং সমাজে সবার সঙ্গে জেন্ডার সমতা এবং জলবায়ু সহিষ্ণু আচরণের মানসিকতা অর্জনে সহায়তা করবে, কিশোর-কিশোরীদের সবুজ দক্ষতা বাড়াবে।
কিশোর-কিশোরীদের এই ব্যতিক্রমী জলবায়ু শিক্ষা প্রসঙ্গে ইউএনডিপি’র জিসিএ প্রকল্পের জেন্ডার স্পেশালিস্ট জিনাত হাসিবা বলেন, ‘এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা সম্পৃক্ত কিশোর-কিশোরীদের জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব সম্পর্কে অবহতি করার সাথে সাথে তাদের জেন্ডার সংবেদনশীল করে তোলার প্রয়াস নিয়েছি। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফল নানা অসম রীতিনীতির চর্চার কারণে মূলত নারীদেরই ভোগ করতে হয়। এই অঞ্চলে বসবাসরত কিশোর-কিশোরীরা চলমান এসব প্রথা পরিবর্তনে নিজেদের আচরণগত পরিবর্তনের সঙ্গে তার পরিবার ও বন্ধুবলয়ে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা আশাকরি, ভবিষ্যতে তারা জলবায়ু অভিযোজিত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে, কেউ কেউ হয়ত যুক্ত হবে বৈশ্বিক জলবায়ু আন্দোলনে। আমরা চাই তারা পৃথিবীটাকে ভালোবেসে সাজিয়ে তুলবে- যেখানে প্রাধান্য পাবে প্রকৃতি, প্রাধান্য পাবে সহমর্মিতা ও সমতার চর্চা।’
তারা//