ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ৩০ ১৪৩১

‘সালমান শাহর পরিবারের সদস্যরা মরে গেলেও মামলা চালাবেন ভক্তরা’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আপডেট: ০৯:৫১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
‘সালমান শাহর পরিবারের সদস্যরা মরে গেলেও মামলা চালাবেন ভক্তরা’

সালমান শাহ (ফাইল ফটো)

বাংলা সিনেমার মহাতারকা সালমান শাহর মৃত্যুর বিষয়টি এখনও রহস্যময়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তের পর বলেছে, আত্মহত্যা করেছেন তিনি। তবে, তা মানতে নারাজ সালমান শাহর পরিবার। তাদের অভিযোগ, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। তারা সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবার বলছে, সালমান শাহ হত্যার মামলা চলছে, চলবে। আমরা মরে গেলেও সালমান শাহর ভক্তরা মামলা চালাবে।

১৯৯৬ সালের এই দিনে (৬ সেপ্টেম্বর) সালমান শাহর লাশ রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডে ইস্কাটন প্লাজার বাসায় নিজকক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সালমানের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়।

কয়েক দফা তদন্তে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু, তা এখনো মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার ও অগণিত ভক্ত। র্সবশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআইর পরিদর্শক সিরাজুল সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে মর্মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পিবিআইর দেওয়া প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। এর পর আবার সালমান শাহ‘র পরিবারের পক্ষ থেকে রিভিশন দায়ের করা হয়। গত বছরের ১২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেন। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর রিভিশন বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।

আরো পড়ুন:

এ সম্পর্কে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেছেন, পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আমরা এর বিরুদ্ধে নারাজি দেবো মর্মে আদালতকে অবহিত করি। কিন্তু, সালমান শাহর মা দেশের বাইরে থাকায় নারাজি দাখিল করতে পারিনি। আদালত সময় আবেদন নামঞ্জুর করে তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন। আমরা এর বিরুদ্ধে রিভিশন দায়ের করেছি। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে শুনানি হবে। আমরা নতুন কোনো সংস্থা দিয়ে মামলাটি তদন্তের আবেদন করব।

সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম বলেছেন, মামলা চলছে, চলবে। আমরা মারা গেলেও তার ভক্তরা মামলা চালিয়ে যাবে। বিচারের মালিক আল্লাহ। মাটিতে যারা থাকেন, তারা অমানুষ। তা না হলে সালমান শাহকে ঝুলন্ত অবস্থায় নামিয়ে গোসল করালো, নতুন কাপড় পরালো, সালমান শাহর মাকে ফোন দিয়ে পর্যন্ত জানালো না।  এর ভিতর তো রহস্য আছে।

তিনি বলেন, আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআই মামলাটি তদন্ত করল। এর পর সাংবাদিকদের ডেকে তদন্তের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করল। এটা তো আদালত অবমাননা। সালমান শাহর মামলাকে র্দুবল করে ফেললো। তার পরিবারকে হেয় করল। এটা করতেই বনজ কুমার সংবাদ সম্মেলন করে। আমরা মামলাটি র‌্যাবকে দিয়ে তদন্ত করার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু, তদন্ত দেয়া হলো পিবিআইকে। 

এবার কোন সংস্থাকে দিয়ে মামলাটি তদন্তের আবেদন করবেন, এমন প্রশ্নে আলমগীর কুমকুমের কথায় উঠে আসে কোনো সংস্থার প্রতি ভরসা না করার বিষয়টি। তিনি বলেন, পুলিশ, পিবিআই, র‌্যাব এরা তো একে অপরের পরিপূরক।

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, তিনি অসুস্থ। দেশের বাইরে আছেন। তিন মাস পর দেশে ফিরবেন।

শরীফ হোসেন নামে সালমান শাহর এক ভক্ত বলেন, এতদিন হলো প্রিয় নায়ক হত্যার বিচার হলো না। আমরা মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের সাজা চাই।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজ বাসা থেকে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। সালমানের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানকে হত্যা করা হয়েছে, অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। সেখানে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়।

এরপর সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করা হলে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তাধীন ছিল। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার তৎকালীন সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনেও সালমানের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন করা হয়। নারাজি আবেদনে আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা বলা হয়। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানকে (র‌্যাব) মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর মামলাটিতে র‌্যাবকে তদন্ত দেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন। ওই বছরের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর তৎকালীন বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে বলেন, র‌্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না। এরপর ৭ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন মর্মে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। 

/রফিক/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়