ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

রেপ্লিকায় বাংলাদেশকে তুলে ধরে ‘হাতবাক্স’ 

রায়হান হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
রেপ্লিকায় বাংলাদেশকে তুলে ধরে ‘হাতবাক্স’ 

বাংদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরার অন্যতম মাধ্যম হলো ট্যুরিজম সুভ্যেনির। এ চিন্তা থেকে বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কার্জন হল, আহসান মঞ্জিল, সুন্দরবন, সেন্ট মার্টিনসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থান ও স্থাপনার মিনিয়েচার রেপ্লিকা তৈরি করে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে তুলে ধরছে ‘হাতবাক্স’।

যারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন, তারা ভারতে গেলে তাজমহল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলে স্ট্যাচু অব লিবার্টি, ফ্রান্সে গেলে আইফেল টাওয়ার বা অন্যান্য দেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মিনিয়েচার রেপ্লিকা সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন। তবে, বাংলাদেশে এ ধরনের ট্যুরিজম সুভ্যেনির সহজলভ্য ছিল না। প্রিয়জন বা বিদেশি অতিথিদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য এমন ঐতিহাসিক স্থাপনার রেপ্লিকা পাওয়া যেত না।

বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে, এমন কিছু তৈরি করার ইচ্ছা থেকেই ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাফাত কাদির, রবিউল হোসেন জুয়েল, মো. মোরসালিন অনিক, মো. খায়রুল বাশার সজল, তানজিনা তারেক নিটোলের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ‘হাতবাক্স’। নিবিড় গবেষণার পর ২০১৭ সালে বাজারে আসে তাদের তৈরি পণ্য।

হাতবাক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাফাত কাদির রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গেলে স্মারক বা সুভ্যেনির নিয়ে আসি। কিন্তু, আমাদের দেশে ঘুরতে আসা বিদেশিরা তেমন স্মৃতি-স্মারক নিয়ে যেতে চাইলেও তা পেতেন না। সেই চিন্তা থেকেই আমরা হাতবাক্সের যাত্রা শুরু করি। আমরা মাত্র ৪ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে হাতবাক্স শুরু করেছিলাম। বর্তমানে আমরা বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করি। প্রতি মাসে গড়ে ১০ হাজার পিস রেপ্লিকা ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে হাতবাক্স। প্রথমে একজন কর্মী নিয়ে শুরু করেছিলাম। বর্তমানে অর্ধশতাধিক কর্মী নিয়মিত কাজ করছেন।

তিনি আরও বলেন, হাতবাক্সের পণ্য বাংলাদেশে ও বিদেশে দারুণ সাড়া পাচ্ছে। বিশেষ করে, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং যারা দেশের বাইরে বেড়াতে যান, তারা অনেকেই হাতবাক্স থেকে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন স্যুভেনির হিসেবে।

হাতবাক্সের পণ্য তৈরির কাঁচামাল সম্পর্কে জানতে চাইলে শাফাত কাদির বলেন, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মার্বেল স্টোন। প্রতিটি পণ্যই সম্পূর্ণ হাতে তৈরি ও রং করা। প্রতিষ্ঠাতা ও নকশাকার জুয়েলের নকশায় প্রশিক্ষিত মার্বেল স্টোন আর্টিস্টের সহায়তায় বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়। এছাড়াও ব্যবহার হয় সিলেট ও সেন্ট মার্টিনের ফ্রিজ ম্যাগনেট।

বর্তমানে অনলাইনের পাশাপাশি ঢাকার বাইরে কক্সবাজার, রাঙামাটি, রাজশাহী, খুলনা ও বান্দরবানে পাওয়া যাচ্ছে হাতবাক্সের পণ্য। ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেল, ইউনিমার্ট, বিমানবন্দরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ডিউটি ফ্রি শপ, বিশ্বরং, অঞ্জনস, যাত্রা, বৈঠক ক্যাফেসহসহ ৩৬টি ব্র্যান্ডের দোকানে হাতবাক্সের পণ্য বিক্রি হয়। তাদের ৭০ শতাংশ ক্রয়াদেশই বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্র ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে আসে। এছাড়া, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকেও পণ্য তৈরির ক্রয়াদেশ পান তারা।

প্রসঙ্গত, হাতবাক্স বর্তমানে ১২টি শ্রেণিতে প্রায় ২০০ ধরনের পণ্য বানাচ্ছে। এর মধ্যে মিনিয়েচার রেপ্লিকা ছাড়াও আছে ফ্রিজ ম্যাগনেট রেপ্লিকা, বিভিন্ন ধরনের ফ্রেম, পেপারওয়েট, কার্ড হোল্ডার, ডেস্ক ক্যালেন্ডার, লেপেল পিন, কোট পিন, টাই পিন, কাফলিংক, চাবির রিং, লাগেজ ট্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য। তবে, মিনিয়েচার রেপ্লিকা, ফ্রিজ ম্যাগনেট ও বিভিন্ন ধরনের ফ্রেমই প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয় পণ্য। এসব পণ্যে দেশের দর্শনীয় বিভিন্ন স্থাপনা, স্থান ও বিষয়কে ফুটিয়ে তোলা হয়।

/রফিক/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়