ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে জটিলতা বাড়ছে 

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ১ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১২:৪৫, ১ অক্টোবর ২০২৩
খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে জটিলতা বাড়ছে 

ফাইল ছবি

সরকার বলছে, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে তারপর যেতে হবে। তবে বিদেশে যেতে অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি। তাদের দাবি, সরকার চাইলেই নির্বাহী আদেশে তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পারে।

গত ৯ আগস্ট থেকে টানা ৫২দিন ধরে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে নানাবিধ শারীরিক জটিলতা নিয়ে চিকিৎসাধীন।  ‘আদালতের মাধ্যমে না নির্বাহী আদেশে’ এই দোটানায় পড়ে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

গত সপ্তাহ ধরে খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিলতা বাড়তে থাকায় তাকে একাধিকবার কেবিন থেকে সিসিইউ (করোনারি কেয়ার ইউনিট)-তে নিতে হয়েছে। এছাড়াও গত দেড় মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাকে চব্বিশ ঘণ্টা ডাক্তাররা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা চালাচ্ছেন। তার লিভার জটিলতা বাড়ায় ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেন।

আরো পড়ুন:

খালদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতে পারে—সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথাবার্তা বলে এমনটাই ধারণা হয়েছিল তার পরিবার ও দলের। চিকিৎসার জন্য কোন দেশে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে খোঁজখবরও শুরু করেছিলেন তারা। তবে আইনি প্রক্রিয়া ও শর্ত আরোপের প্রশ্নে পরিবারের সদস্যরা রাজি না থাকায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার বোনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার পর খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রশ্নে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই অগ্রসর হচ্ছিল সরকার। আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে একাধিকবার আলোচনাও হয়। তাকে কোন দেশের হাসপাতালে পাঠানো যায়, তা নিয়েও চলছিল আলোচনা। গত সোমবার সচিবালয়ে এ ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়াকে কোন দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা করানো যায়, বিএনপির পক্ষ থেকেও সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছিল। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল, খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে এখন যে সাজা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার অনুমতি রয়েছে, তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আবার তাকে জেলে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার বিষয়ে সরকারের মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন কোনো শর্ত মেনে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান না বলে তার পরিবারের একটি সূত্র জানিয়েছে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ ইস্যুতে আদালতে যেতে চান না। তাদের বক্তব্য, বেগম খালেদা জিয়াকে যেহেতু নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু তার বিদেশ যাওয়া আদালতের কোনো বিষয় নেই। সরকারই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পারেন।

সরকার বলছে আদালতের মাধ্যমে যাওয়া, বিএনপি চাচ্ছে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সুরাহা-এ নিয়ে দুইপক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জটিলতা কাটছে না বলে জানা গেছে।

গতকাল (শনিবার) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া মোকাবিলা করে খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের করা আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা মতামত পেলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল (শনিবার) বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে করা আবেদনের বিষয়ে মতামত জানানো হবে আজ রোববার।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘একটা বিষয় স্পষ্ট, বেগম খালেদা জিয়া নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পেয়েছেন। উনি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট বা অন্য কোনো আদালতের আদেশে মুক্তি পাননি। তাই, সরকার এখন যাই বলুক, এখানে আদালতের অনুমতির কোনো বিষয় নেই। পুরোটাই সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।’

আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার নির্বাহী আদেশে যেকোনো আসামির কারাবাস স্থগিত করতে পারে। সেটা শর্তযুক্ত হতে পারে, আবার শর্তহীনও হতে পারে। ৪০১ ধারা অনুযায়ী যেহেতু নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে, এখন শর্ত উঠিয়ে নিলেই হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ায় আর কোনো বাধা থাকে না। বিষয়টি এখন পুরোপুরি সরকারের হাতে।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের বোর্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি। সেজন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’

লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়ার ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, আর্থাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। গত ৯ আগস্ট গুলশানের বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মধ্যরাতে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে রাজধানীর বেসরকারি এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বর্তমানে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটঅ্যাপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।

/মেয়া/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়