ঢাকা     রোববার   ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২১ ১৪৩১

সাগরপাড়ে হুইসেল শোনার অপেক্ষা

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০২, ৯ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২২:০৫, ৯ নভেম্বর ২০২৩
সাগরপাড়ে হুইসেল শোনার অপেক্ষা

কক্সবাজারে নতুন নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশন/ ফাইল ছবি

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেনের হুইসেল শোনা যাবে, তা ওই এলাকার মানুষ কখনও ভাবেননি। রাজধানী ঢাকা থেকে সেখানে অবসরযাপনে কম খরচে আর আরামদায়ক যাত্রা উপভোগ করা যাবে, সেটাও কল্পনায় আঁকেননি কেউ। আওয়ামী লীগ সরকারের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন পরিক্রমায় একে একে সব স্বপ্নই রূপ নিচ্ছে বাস্তবে। তারই অংশ হিসেবে এবার সাগরপাড়ে হুইসেল বাজার অপেক্ষা। এখন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া যাবে ট্রেনে খুব সহজে।

১১ নভেম্বর (শনিবার) চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে যোগাযোগব্যবস্থায় আরও একটি মাইলফলক ছোঁবে আওয়ামী লীগ সরকার।

পরীক্ষামূলকভাবে কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাচ্ছে ট্রেন/ ৬ নভেম্বর সকালে

কক্সবাজারের ট্রেনের আগমনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার মানুষজন। যতবার ট্রেনের ট্রায়াল রান হয়েছে, দু’পাশে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছেন তারা। ট্রেন থামিয়ে ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ যেন তাদের স্বপ্নের এক প্রকল্প।

১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১০০ কিলোমিটারের এই রেলপথ চালু হলে পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কম খরচে বিলাসবহুল ট্রেনে চড়ে পর্যটকেরা বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখার সুযোগ পাবেন। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি এবং বাকি ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।

ইতোমধ্যে একাধিকবার চলাচল করেছে পরীক্ষামূলক ট্রেন। উদ্বোধনী ট্রেনও এই লাইন ধরে কক্সবাজারে গিয়ে পৌঁছেছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে গ্রামীণ পরিবেশ আর দু’পাশে নয়নাভিরাম সবুজের সমারোহ দেখে পুলকিত হবেন যাত্রীরা, পাবেন রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা।

নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন/ ১৬ অক্টোবর 

কক্সবাজারের রেলস্টেশনটি দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। সাগরিকার সাথে মিল রেখে ঝিনুক আকৃতির এই আইকনিক রেলস্টেশন। ২৯ একর জমির ওপর ২২৫ কোটি টাকা তোলা হয়েছে দেশের সব থেকে সুন্দর রেল স্টেশনটি। নিচতলায় থাকছে টিকেট কাউন্টার, অভ্যর্থনা কেন্দ্র, শপিং মল আর রেস্তোরাঁ। কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনে থাকছে তারকা মানের হোটেল, মসজিদ, শিশু যত্ন কেন্দ্র ও চলন্ত সিঁড়ি। আছে এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথসহ নানা সুবিধা।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই অত্যাধুনিক রেলস্টেশনে একসঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন অন্তত ৪৬ হাজার যাত্রী। স্টেশনের প্রায় সব কাজই শেষ। চলছে শেষ মুহূর্তের কিছু সাজসজ্জা। দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশনটির দূরত্ব সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে চান্দেরপাড়া এলাকায়। এক লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৬ তলা ভবনের রেলস্টেশনে চারদিকে গ্লাস ফিটিংস ও চীন থেকে আনা স্টিলের ক্যানোফি স্থাপন করা হয়েছে।

কক্সবাজারে নতুন নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশন

শুরুতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচলের কথা জানান প্রকল্প পরিচালক সুবক্তগীন। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে তা ৮০ কিলোমিটার গতিতে নেওয়া হবে। বর্তমানে ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। সেই হিসাবে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যেতে ৭ ঘণ্টার মত সময় প্রয়োজন হবে।

ট্রেন লাইন যেহেতু বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, তাই পরিবেশ রক্ষা ও বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সুবক্তগীন বলেন, এখানে হাতির জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস করা হয়েছে, যাতে তারা একপাশ থেকে অন্যপাশে যেতে পারে। দীর্ঘদিন আমরা সিসিটিভিতে মনিটরিং করে এবং ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্টরা ডিজাইন করেছে, সেভাবে এটা হয়েছে।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেলসেতু এলাকা পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন/ ১৬ অক্টোবর

এ রেলপথ নির্মাণের আগে কক্সবাজারের সঙ্গে কোনও রেল-যোগাযোগই ছিল না। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ হয়েছে। প্রকল্পের জন্য দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার অংশে কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু, ১৪৯টি বক্স কালভার্ট এবং ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে ১০টি স্টেশন। এগুলো হলো- কক্সবাজার, রামু, ইসলামাবাদ, ডুলাহাজারা, চকরিয়া, হারবাং, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া ও দোহাজারী।

জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা থেকে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আর চট্টগ্রাম থেকে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চলবে। তবে ট্রেনের ভাড়া ও নাম এখনও নির্ধারণ হয়নি’।

ঢাকা/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়