ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

জিএম কা‌দে‌রের ‘নাটক’, শপথ নি‌তে উন্মুখ এমপিরা

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২২, ৯ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:১৭, ৯ জানুয়ারি ২০২৪
জিএম কা‌দে‌রের ‘নাটক’, শপথ নি‌তে উন্মুখ এমপিরা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির এমপিরা বুধবার শপথ নিচ্ছেন না। দলটির নবনির্বাচিত অধিকাংশ এমপি চাইলেও ‘সমঝোতার’ নির্বাচনে গিয়ে জিতে ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি’ ‘গ্রহণযোগ্যতা পাবে না’— এমন অজুহাত তুলে শপথ নিতে ‘নাটক’ করছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। আদৌ শপথ নেবেন কি না, এমন কথাও বলেছেন তিনি। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানিয়েছেন কাদের। 

নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ থেকে বাঁচতে তিনি একদিকে যেমন নাটক করছেন, অন্যদিকে সরকারকে চাপে ফেলে বাড়তি সুবিধা আদায় করতে ‘কৌশল’ নিয়েছেন কাদের। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সংসদ সচিবালয় থেকে দলীয় এমপিদের ফোন করা হলেও, এ কারণে শপথ গ্রহণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছে জাতীয় পার্টি। দলীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে স্পিকারের কাছে এই চিঠি দেওয়া হয়। পার্টি চেয়ারম্যান গড়িমসি করলেও নির্ধারিত সময়ে শপথ নিতে উন্মুখ হয়ে আছেন দলের বিজয়ী অধিকাংশ এমপি। শেষ পর্যন্ত শপথ নিতে না চাইলে এসব এমপি দলীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারেন বলে দলটির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক নেতা জানান, সিনিয়র নেতাদের ‘কোরবানি’ দিয়ে স্ত্রী শেরিফা কাদেরকে ঢাকা-১৮ আসন পাইয়ে দিয়ে নির্বাচনে যান পার্টি চেয়ারম্যান। তার নেতৃত্বে এই প্রথম সংসদ নির্বাচনে ২৬ আসনে সমঝোতা করার পরও দল পেয়েছে মাত্র ১১টি। এজন্য দলের প্রায় সব প্রার্থী ও নেতাকর্মী চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী, দলের মহাসচিবের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে চেয়ারম্যানের একগুঁয়েমি সিদ্ধান্ত দলকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে গেছে। এখন মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে তাদের ক্ষোভ কমাতে শপথ নেওয়া-না নেওয়ার নাটক করছেন তিনি। আবার তিনিই বিরোধী দলের নেতা ও তার স্ত্রী শেরিফা কাদেরকে সংরক্ষিত আসনে এমপি করাসহ নানা কৌশল গ্রহণ করেছেন।

আরো পড়ুন:

জানা গেছে, নির্বাচনের বিজয়ী হওয়ার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের রংপুর নগরীর স্কাই ভিউ ভবনে নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন হয়েছে। সরকার যেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চেয়েছে, সেখানে সুষ্ঠু করেছে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাসে আমরা ভোটে অংশ নিয়েছিলাম কিন্তু সরকার আমাদের যে কথা দিয়েছিল, সেই কথা রাখেনি। আর যেখানে তাদের লোকজনকে জেতাতে চেয়েছে, সেখানে তারা আমাদের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোর করে সিল মেরে হারিয়ে দিয়েছে। সার্বিকভাবে নির্বাচন ভালো হয়নি। আমাদের বিশ্বাস এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না’।

দলীয় চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের পরপরই নির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণ করা, না করা নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। নেতাকর্মীদের মধ্যেও জিএম কাদেরের শপথ না করার বিষয়টি চাওর হয়। দলের চেয়ারম্যান বর্তমানে রংপুরে অবস্থান করছেন। শপথ গ্রহণ করাসহ সার্বিক বিষয়ে রংপুর ডিভিশনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঢাকায় এসে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার বিজয়ী সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে শপথ গ্রহণ করাসহ সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন জিএম কাদের।  

বুধবার শপথ গ্রহণ করছেন কি না, জানতে চাইলে মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের জানান, কাল আমরা শপথ নিচ্ছি না। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জি এম কাদেরের অফিসে আমরা বৈঠকে বসব। বৈঠকে আলাপ-আলোচনার করে শপথের বিষয়টি ঠিক করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম-১ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা আগামীকাল শপথ গ্রহণ করব না। পরশু দিন আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, কবে আমরা শপথ নেব। আদৌও নেব কি না’।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যে ধরনের ভোটের পরিবেশ চেয়েছিলাম, তা পাইনি। যার কারণে আমাদের অনেক সদস্য ভোটের মাঠে লড়াই করতে পারেননি। জয় পাননি। এ কারণেই আমরা শপথ নিচ্ছি না’।

এদিকে, দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের শপথ নিতে ‘নাটক’ করলেও দলটির অধিকাংশ এমপি নির্ধারিত সময়ে নিতে চান। কোনও কারণে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের শপথ নিতে না চাইলে বিজয়ীরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন। এমনকি, তাকে মাইনাস করে শপথ নিতে পারেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

বুধবার শপথ নিচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান ও দলের সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, ‘আমি ঢাকা ফিরলেও অনেকে এখনও ঢাকার বাইরে রয়েছেন। এ কারণে শপথ নিতে দেরি হচ্ছে। সবাই আসুক, আলোচনা করে একসঙ্গে শপথ গ্রহণ করবো’।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বিজয়ী সেলিম ওসমান রাইজিংবিডিকে জানান, ‘শপথে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। আমাদের বিজয়ী প্রার্থীরা সবাই এক জায়গায় আসতে সময় লাগছে। সে কারণে সময় চাওয়া হয়েছে। শপথ না নেওয়ার কোনও কারণ নেই। আমি নিজেই অসুস্থ। তবে শপথ না নেওয়ার গুঞ্জন সঠিক নয়’।

শপথ নিতে ঢাকায় ফিরছেন বলে জানিয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বরিশাল-৩ আসনে বিজয়ী গোলাম কিবরিয়া টিপু। তিনি বলেন, ‘শপথ নিতে ফোন করা হয়েছে। শপথ গ্রহণ করবো। তবে কবে নেব, সেটা ঢাকায় গেলে বলতে পারবো’।

অন্যদিকে, শপথ না নেওয়ার কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছেন ফেনী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। শপথ নিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই শপথ নেব। নির্বাচন করে এত কষ্ট করে বিজয়ী হয়েছি, শপথ না নেওয়ার তো কোনও কারণ নেই। যাদের সমস্যা, তারা ভালো বলতে পারবেন’।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে হবে। শপথ গ্রহণের পরই তিনি কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলেও গণ্য হবেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২টি আসন, স্বতন্ত্র ৬১টি, অন্যান্য ৩ এবং জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জয় পেয়েছে।

ঢাকা/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়