ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ এবার বাংলাদেশেও

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ৮ মে ২০২৪   আপডেট: ১৮:৪১, ৮ মে ২০২৪
শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ এবার বাংলাদেশেও

ছবি: গ্রাফিক্স

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করেন। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে তা ছড়িয়ে পড়েছে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ৫০টি দেশে। সেই ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, গ্রিসসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা এবং দেশটির প্রতি মার্কিন সমর্থনের প্রতিবাদে ঢাকায় আমেরিকান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করতে যাচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল ১১টায় এই বিক্ষোভ কর্মসূচি আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

এরই মধ্যে ৬ মে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতার বন্ধের দাবিতে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্রআন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

এ ছাড়া, দেশব্যাপী আগে থেকেই ঘোষণা করা কর্মসূচিতে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও ছাত্রসমাবেশ করেছে দেশের সংগঠনটি।

দেশে দেশে এমন বিক্ষোভকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোর তরুণদের মধ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা প্রকাশ পাচ্ছে।   

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ইসরায়েলবিরোধী এই আন্দোলন দ্রুতই থামছে না। বরং, ইউরোপের আরও কিছু দেশে এই আন্দোলন মাথাচাড়া দিতে পারে। ফ্রান্সের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়।  এটি ছাড়াও প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্রিলের শেষ দিকে ‘গাজা যুদ্ধবিরোধী’ বিক্ষোভ শুরু হয়। 

বুধবার (৮ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। পাল্টা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনও ইউটিউবারকে কেউ ঘুসি মারলে কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে হাতাহাতির ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবাদ জানায়, বিবৃতি দেয়। কিন্তু এখন ফিলিস্তিনে লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছেন, অসংখ্য শিক্ষার্থী নির্যাতিত হচ্ছেন, আমরা অপেক্ষা করছি এখন তারা কী বলে।  

এদিকে, ২৯ এপ্রিল সরবন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীরা বলেন, সারা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। আমরা বসে থাকতে পারি না। বিক্ষোভকারীদের ‘শেম’ ও ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সেই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে লুইস নামের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, কলাম্বিয়া, হার্ভার্ড, ইয়েলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা এ বিক্ষোভ করছেন। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় ৫০টি তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ১০০ জনের মতো বিক্ষোভকারী রাতেও অবস্থান করছেন। 

৩ মে সেখানে পাল্টা বিক্ষোভের আয়োজন করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিরোধিতা করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো। অন্যদিকে, যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকে ‘বর্ণবাদী’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডুটন।

যুক্তরাষ্ট্রের পর বর্তমানে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ। সিএনএন ও মিডলইস্টআই এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দুর্নাম রটাতে নানা মিথের আশ্রয় নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অনেকে এ বিক্ষোভকে ‘ছাত্র ইন্তিফাদা’ ও ‘আমেরিকান বসন্ত’ বলে উল্লেখ করছেন। তবে বিভিন্ন ভাষ্যকররা ফিলিস্তিনিদের পক্ষের এই ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন বিক্ষোভ আন্দোলনকে নানাভাবে অভিহিত করার চেষ্টা করছেন। এই বিক্ষোভ এখন বিশ্বের নজর কেড়েছে। 

গত ১৭ এপ্রিল নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এবং গাজার জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তাঁবুর শিবির স্থাপন করে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর বিশ্বের ৫০টি দেশের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিক্ষোভের বিস্তার ঘটেছে। এমনকি, ভারতের নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চলছে। উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৩ হাজারই শিশু।

/এনএইচ/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়