জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রভাব ফেলবে বাজারে
![জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রভাব ফেলবে বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রভাব ফেলবে বাজারে](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2024April/U-2405311646.jpg)
ফাইল ফটো
সরকার বৃহস্পতিবার (৩০ মে) জ্বালানি তেলের নতুন মূল্য নির্ধারণ করেছে। জ্বালানি তেলের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও বাড়বে। ফলে, বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তেল ছাড়া পরিবহন চলে না, সুতরাং নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতেও এটা ভূমিকা রাখবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পরিবহন সেক্টর—এগুলো একটি অপরটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। একটির দাম বাড়লে অপরটির দাম বাড়বেই। এই অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধির বোঝা দিন-রাত জনগণকেই বইতে হচ্ছে। ভর্তুকি কমাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার যা করছে, তা দেশের অর্থনীতির ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করবে।
রাজধানীর নবাবপুরের বাসিন্দা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আতিকুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেছেন, বর্তমানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। ৩০ মে বাড়ানো হলো জ্বালানির দাম। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়ানো হলো। কিন্তু, যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছিল, তখন বাংলাদেশে সেভাবে দাম কমানো হয়নি। ডিজেল-কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েলের দাম বৃদ্ধির কারণে গাড়িভাড়া, পণ্য পরিবহন ও কৃষি উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এর প্রভাব পড়বে সাধারণ যাত্রী ও ক্রেতার ওপর। জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ার কারণে সীমিত আয়ের মানুষ ফের অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়বে। তাই, এখন বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেলের বাড়ানো উচিত নয়।
রাজধানীর কাপ্তান বাজারের মা জেনারেল স্টোরের মালিক আবদুর রহমান বলেন, সরকার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়িয়েছে ডিজেল ও কেরোসিন, অকটেনে ও পেট্রোলের দাম। ফলে, এর প্রভাব পড়বে যানবাহন ও শিল্প খাতে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলে এর প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় অতিরিক্ত যে অর্থ ব্যয় হবে, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা তা জনগণের কাছ থেকেই তুলে নেবে। আমরা ব্যবসা করি। যেভাবে কিনব, সেভাবে বিক্রি করব। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।
বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব বলেন, পবিরহনের অধিকাংশই তেলের ওপর নির্ভরশীল। তাই, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বাড়বে পণ্য পরিবহনের খরচ। এর প্রভাব পড়বে কৃষি, নিত্যপণ্যসহ সব খাতে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেছেন, দেশের সাধারণ মানুষ বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। এরইমধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। এর আগেও বিদ্যুৎ,পানিসহ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন তেলের দাম বাড়ানোর চাপ ভোক্তারা নিতে পারবে না।
তিনি বলেন, সামনে আবার বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বাড়বে। এর পর আবার তেলেরর দাম কিছু দিন পর পর বাড়তেই থাকবে। পুরো বিষয়টি এখন একটি চক্রের মতো ঘুরে ঘুরে চলবে। ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। সামনে আরও অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সব।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। ডলারের দামের পার্থক্যের কারণে ভর্তুকি আরও বেশি বেড়েছে। ধীরে ধীরে ভর্তুকি সমন্বয়ে যেতে হবে। আগামী তিন বছর আমরা এটাকে সমন্বয় করব। যাতে সহনীয় পর্যায়ে থেকে সমন্বয়টা হয়, সেটার একটা ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
অর্থ বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিও মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ফর্মুলার আলোকে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের নতুন মূল্য সমন্বয় করছে সরকার। এ দফায় অকটেনের দাম ১৩১ টাকা, পেট্রোলের দাম ১২৭ টাকা ও ডিজেলের দাম ১০৭ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) নতুন মূল্যের প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। সমন্বয়কৃত এ মূল্য ১ জুন থেকে কার্যকর হবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রাইসিং ফর্মুলার আলোকে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের বিদ্যমান মূল্য ১০৭ টাকা থেকে ০.৭৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১০৭.৭৫ টাকা, পেট্রোলের বিদ্যমান মূল্য ১২৪.৫০ টাকা থেকে ২.৫০ টাকা বাড়িয়ে ১২৭ টাকা এবং অকটেনের বিদ্যমান মূল্য ১২৮.৫০ টাকা থেকে ২.৫০ টাকা বৃদ্ধি করে ১৩১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কিছুটা হ্রাস পেলেও মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এ মূল্য সমন্বয় করতে হয়েছে।
/রফিক/
আরো পড়ুন