ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৬ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় যেতে ব্যর্থদের সমাধান ‘আপাতত অপেক্ষা’

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩১, ২ জুন ২০২৪   আপডেট: ২২:৫৭, ২ জুন ২০২৪
মালয়েশিয়ায় যেতে ব্যর্থদের সমাধান ‘আপাতত অপেক্ষা’

ছবি: গ্রাফিক্স

আশা-নিরাশার দোদুল্যমানতায় আছেন ‘কলিং ভিসা’ পেয়েও মালয়েশিয়ায় যেতে ব্যর্থ প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি। কার ব্যর্থতায় তারা যেতে পারেননি- এ তথ্য জানাতে পারেনি খোদ প্রবাসীদের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে, কারণ উদঘাটনে কমিটি করে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে সময় বাড়িয়ে ব্যর্থ কর্মীদের দেশটিতে পাঠাতে। বিষয়টির মধ্যস্থতা চলছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে। এই অবস্থায় বিপুল-সংখ্যক কর্মীর একমাত্র ভরসার নাম ‘অপেক্ষা’।

মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, এবার কলিং ভিসার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার ঘোষণা ছিল— সরকারিভাবে যারা মালয়েশিয়ায় কর্মী ভিসা পাবেন, তাদের ৩১ মে’র মধ্যেই সেদেশে যেতে হবে। বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স থাকা সত্ত্বেও ১৬ হাজার ৯৭০ জন বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। তবে, ৩১ তারিখের আগেই বাংলাদেশ দূতাবাস এই সময়সীমা আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর আবেদন করে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে। সে জবাব এখনও মেলেনি।

এ অবস্থায় সর্বশেষ খবর নিয়ে বুধবার (৫ জুন) মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান দেশে আসার কথা রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য দু’বছর আগে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়। তখন বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটি। তবে, মালয়েশিয়া সরকার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আগে থেকে ঘোষণা দেওয়ার পরও অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট তৈরি হয়েছে। প্রথম সংকট তৈরি হয় বিমানভাড়া নিয়ে। ৩১ মে যত ঘনিয়ে আসে বাড়তে থাকে বিমানভাড়া। তিনগুণ ভাড়া পরিশোধ করে কর্মীদের মালয়েশিয়া যেতে হয়েছে। দ্বিতীয় সংকটের কারণে ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী যেতে পারেননি। এ ব্যর্থতার কারণ এখনও জানা যায়নি। রোববার মন্ত্রণায়ের পক্ষ থেকে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করার কথা জানানো হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী দাবি করেছেন, কর্মীদের যেতে না পারার পেছনে মন্ত্রণালয়ের কোনও গাফিলতি ছিল না।

তবে, বিশ্লেষকরা এজন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মধ্যে সমন্বয়নহীনতা এবং সিন্ডিকেট করে লোক পাঠানোকে দায়ী করছেন। আর, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ আটাব বলছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি ও বায়রার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান বলেছেন, যারা ভিসা পেয়ে মালয়েশিয়ায় আসতে পারেনি, তাদের নিয়ে আসার ব্যাপারে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, যেন তাদের দ্রুত নিয়ে আসা যায়।  

রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এর পেছনে অন্যতম কারণ সিন্ডিকেট। আর মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অপতৎপরতা। তবে বিষয় যা-ই হোক, সরকারের উচিত সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যথায় আগামীতে আরও সংকট তৈরি হবে।

এদিকে জানা গেছে, প্রতিশ্রুতি পেয়েও বেশিরভাগ কর্মী হতাশায় রয়েছেন। তারা দু’ধরনের উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। প্রথমত, আদৌ যেতে পারবেন কি না, আর যেতে ব্যর্থ হলে টাকা ফেরত পাবেন কি না।
 
মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, সব পক্ষের চেষ্টা রয়েছে, যেতে ব্যর্থদের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর। তবে যদি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হতে হয়, তাহলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা যেন ক্ষতিপূরণ পায়, সে চেষ্টা করবে মন্ত্রণালয়। একই রকম কথা বলেছেন প্রতিমন্ত্রীও। তিনি বলেছেন, মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীরা তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। প্রয়োজন হলে কর্মীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে, পুরো বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান তুলে ধরেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ৩১ মে পর্যন্ত ৫ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৬ জনকে মন্ত্রণালয় (প্রবাসী কল্যাণ) অনুমোদন দিয়েছে। বিএমইটির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জনকে। ৩১ মে পর্যন্ত যেতে পেরেছেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন। সেই হিসাবে ১৬ হাজার ৯৭০ জন যেতে পারেননি। সংখ্যাটা কিছুটা কমবেশি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যারা যেতে পারেননি, সেই কারণ খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটি সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট এবং সুপারিশ দেবে। আমি বিশ্বাস করি, যারা এর জন্য দায়ী হবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

/এনএইচ/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়