ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

এ বর্ষাতেও কি ডুববে ঢাকা

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩১, ২৯ জুন ২০২৪   আপডেট: ২২:৫১, ২৯ জুন ২০২৪
এ বর্ষাতেও কি ডুববে ঢাকা

সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর অলিগলি ও প্রধান প্রধান সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়

ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি হলেই রাজধানীর অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। আর বর্ষা মৌসুম মানেই রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা। কয়েক বছর ধরে এমন দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত নগরবাসী। বর্ষায় অল্প বৃষ্টিতে জলজটে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। অথচ প্রতি বছর জলাবদ্ধতা নিরসনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকে। প্রতিবারের ধারাবাহিকতায় এবারও বর্ষায় রাজধানীতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে।

কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর অলিগলি ও প্রধান প্রধান সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি একটু দীর্ঘ সময় স্থায়ী হলে ডুবে যায় প্রায় পুরো ঢাকা। এ সময় বাসার বাইরে বের হলেই পানিতে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে বহু প্রকল্প ও পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু, সুফল মিলছে না। কোনো উদ্যোগই যেন কাজে আসে না।

এবার বর্ষা শুরুর আগেই বৃষ্টির কারণে রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল। সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর কিছু এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এর মধ্যে গ্রিন রোড, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি ২৭, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর, ১৩ নম্বর, ১৪ নম্বর, বাড্ডা, মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তা, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট, ইসিবি, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা হচ্ছে নিয়মিত।

এখনো যে কোনো দিন বৃষ্টি হলে থই থই পানি জমে সড়কে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরও জলাবদ্ধতা থাকে বহু সড়ক ও অলিগলিতে। কিছু এলাকায় তো বৃষ্টির পর চলাচলের কোনো উপায়ই থাকে না। বৃষ্টির পানির সঙ্গে যোগ হয়, যত্র-তত্র ফেলা ময়লা-আবর্জনা। সবমিলিয়ে বলা যায়, এ বর্ষাতেও রাজধানীতে ফের জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়বেন নগরবাসী।

এবার বর্ষাতেও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না, এ আশাঙ্কা ব্যক্ত করে রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসিন্দা রূম্পা বলেন, প্রতিবছর রাজধানীর বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি আমাদের এলাকাতেও বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনও পরিস্থিতি হয় যে, বৃষ্টির পর এখানে রিকশা ছাড়া কোনো বাহন (উবার, অটো) পাওয়া যায় না। কাজের প্রয়োজনে আমাদের প্রতিদিন বাসা থেকে বের হতে হয়। রিকশায় ডাবল ভাড়া দিয়ে গলি থেকে মেইন রোডে আসি। তারপর ২-৩ গুণ ভাড়া বেশি দিয়ে কর্মস্থলে যেতে হয়। 

তিনি বলেন, প্রতিবছর সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, এবার আর জলাবদ্ধতা হবে না। কিন্তু, বৃষ্টি হলেই রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। প্রতিটা এলাকার বাসিন্দা জলাবদ্ধতা নিয়ে বিরক্ত। মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এত কিছু চোখের সামনে হয়ে যায়, কিন্তু সিটি কর্পোরেশন শুধু তাদের প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থাকে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে তারা প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করে না। জলাবদ্ধতার কথা ভাবলে এখনই আঁতকে উঠি।

রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী ইকবাল হোসেন বলেন, বৃষ্টি মানেই যেন রাজধানীর সড়ক ও অলিগলি ডুবে যাওয়া। বৃষ্টি হলে অন্যান্য এলাকার মতো আমাদের শান্তিনগরও জলপথের রূপ নেয়। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি জমা হয়ে যায় এই এলাকায়। পানির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মময়লা তো আছেই। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। নিজেদের বাড়ি বলে অন্য এলাকায় যেতেও পারছি না। বড় অসহায় হয়ে যাই। কবে যে এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবো?

আসিফ আহমেদ থাকেন মুগদায়। তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে এমন সমস্যা। অথচ, এটার স্থায়ী কোনো সমাধান এখনো করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এক-দুই ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে এখানে হাঁটু পানি জমে যায়। এখনই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ভরা বর্ষায় কী হবে, আল্লাহ জানে! বৃষ্টি হলেই তীব্র জলাবদ্ধতা। নগরবাসীকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও এর কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না।

জলাবদ্ধতায় নিজেদের ক্ষতির কথা উল্লেখ করে নয়াটোলার বাসিন্দা সিএনজি অটোরিকশার চালক আবদুল মতিন বলেন, বৃষ্টি হলেই রাজধানীর বেশিরভাগ সড়ক ডুবে যায়। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমরা সিএনজি চালকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। অনেক সড়কেই হাঁটু পানি থাকে। সেই সড়কগুলোতে সিএনজি চালিয়ে যাওয়ার সময় সাইলেন্সার পাইপ দিয়ে পানি ঢুকে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তখন যাত্রী নামিয়ে দিয়ে, গাড়ি ঢেলে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। ঠিক করাতে অনেক টাকাও খরচ হয়।

বৃষ্টি শেষ হওয়ার ৩-৪ ঘণ্টা পরও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পানি কেন সরে যেতে পারে না? অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার পানি তিনটি মাধ্যমে আশপাশের নদ-নদীতে গিয়ে পড়ে—পাম্প স্টেশন, স্লুইসগেট ও খাল। বর্তমানে বেশ কয়েকটি পাম্প স্টেশন নষ্ট হয়ে আছে। একইভাবে স্লুইসগেটগুলোও অকেজো অবস্থায় আছে। আর খালগুলোর বেশিরভাগই দখল হয়ে আছে। যেগুলো এখনও আছে, সেগুলো অবস্থা ভালো নয়। সেগুলো ময়লা-আবর্জনার কারণে খাল থেকে নালা হয়ে পড়েছে। এখন আর পানি প্রবাহের উপযুক্ত নয়। অবৈধ দখলের পাশাপাশি নানা বর্জ্য জমে খালগুলোতে কয়েক স্তরের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে আছে।

জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশই প্লাস্টিক বর্জ্য, যা ঢাকার ড্রেন, নালা আর খালে গিয়ে পড়ছে। এসব প্লাস্টিক বর্জ্য খালে বা ড্রেনে আটকে থাকছে। এ কারণে খাল-ড্রেন দিয়ে পানি নামতে পারছে না।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এলাকার খালগুলোর মধ্যে রয়েছে—রূপনগর প্রধান খাল; রূপনগর শাখা খাল, আরামবাগ; রূপনগর শাখা খাল, দুয়ারীপাড়া; রূপনগর শাখা খাল, চিড়িয়াখানা; মিরপুর দিয়াবাড়ী খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, বাউনিয়া খাল, শাহজাদপুর খাল, সূতিভোলা খাল, ডুমিনি খাল, বোয়ালিয়া খাল, গোবিন্দপুর খাল, নরাই খাল, আব্দুল্লাহপুর খাল, দ্বিগুণ খাল, ধউর খাল, বাইশটেকি খাল, সাংবাদিক কলোনি খাল, কসাইবাড়ী খাল, মহাখালী খাল, উত্তর দিয়াবাড়ী খাল, বেগুনবাড়ী খাল, কাটাসুর খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, কল্যাণপুর প্রধান খাল, কল্যাণপুর ক, খ, গ, ঘ, ঙ এবং কল্যাণপুর চ খাল।

খালের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ করতে চেয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। তবে, পুরো কাজ এখনো তারা শেষ করতে পারেনি। কোথাও সিএস, কোথাও আরএস এবং কোথাও মহানগর জরিপ ধরে খালের সীমানা নির্ধারণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি খালের আধুনিকায়নে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তার কোনো অগ্রগতি এখনও হয়নি।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকা একসময় খালের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু, অবৈধ দখল ও দূষণের কবলে পড়ে খালগুলো মরতে বসেছিল। খালগুলো বুঝে পাওয়ার পর থেকে আমরা কাজ করছি। এ বছরও কিছু খাল দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়। আমাদের উদ্ধারকৃত খালগুলোর মধ্যে রয়েছে লাউতলা খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, গুলশান লেক, প্যারিস বা বাইশটেকি খাল, সুতিভোলা খাল। রাজউক খাল থেকে ২ লাখ ৫৮ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার, ড্রেনে পানির লেভেল পরীক্ষা, অতিবৃষ্টির সময় কল্যাণপুর থেকে শক্তিশালী পাম্পের সাহায্যে দ্রুত পানি সরিয়ে নদীতে স্থানান্তর ইত্যাদি কাজ নিয়মিত করা হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের খালগুলোর মধ্যে রয়েছে—মান্ডা খাল, হাজারীবাগ খাল, শ্যামপুর খাল, জিয়া সরণি খাল, কদমতলা খাল, বাসাবো খাল, তিতাস খাল, শাহজাহানপুর খাল, নন্দীপাড়া খাল, বেগুনবাড়ি খাল, কাটাসুর খাল, খিলগাঁও-বাসাবো খাল, জিরানী খাল, কুতুবখালী খাল, খিলগাঁও খাল, দোলাইরপাড় খাল, কাজলা খাল, ফকিরখালী খাল, সুকুরসি খাল, ডগাইর খাল, বাইগদা খাল, মৃধাবাড়ী খাল, মাতুয়াইল কবরস্থান খাল এবং সেগুনবাগিচা খাল। এর বাইরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) এলাকায় ডিএসসিসির আওতাভুক্ত অংশে ১৫টি খাল রয়েছে। যেগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে। এগুলো সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।

ডিএসসিসি সূত্র বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির একটি বড় অংশের বৃষ্টির পানি মান্ডা, জিরানী, শ্যামপুর ও কালুনগর খাল হয়ে নিষ্কাশন হয়ে থাকে। এ চারটি খালের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। কাগজে-কলমে খালগুলো থাকলেও বাস্তবে দখল ও ভরাটে অচল হয়ে রয়েছে। মূলত, এ কারণে ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। আসন্ন বর্ষাতেও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা আছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের আওতাভুক্ত এলাকার খালগুলোর মধ্যে শ্যামপুর, জিরানি, মান্ডা ও কালুনগর খাল অন্যতম। এসব খাল পুনরুদ্ধার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

ডিএসসিসি দাবি করছে, ইতোমধ্যে শ্যামপুর বাণিজ্যিক এলাকা, মিটফোর্ড রোড, নটরডেম কলেজের সামনের সড়ক, বঙ্গভবনের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশের রাস্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের সড়ক, সচিবালয়, লালবাগ রোড, আজিমপুর মোড়সহ অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা ও জলজট সমস্যার সমাধান হয়েছে। বর্তমানে জলাবদ্ধতা সমস্যা ৭০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।

দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে খালের দায়িত্ব ছাড়ার আগে ঢাকা ওয়াসা রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০৩ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়। যার মেয়াদ শেষ হয় ২০১১ সালে। কিন্তু, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নগরবাসী কোনো সুফল পাননি। দ্বিতীয় ধাপে আরও ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ১০ বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসা ব্যয় করেছে প্রায় ২হাজার ২৫ কোটি টাকা। এর পর ২০২১ সাল থেকে খাল রক্ষণাবেক্ষণের একক দায়িত্ব পায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, যেহেতু ঢাকার খাল, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব এখন সিটি কর্পোরেশনের, তাই এই বিষয়ে আমরা অফিসিয়ালি কোনো কথা বলব না।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং প্রকৌশল বিভাগের বরাত দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো থেকে ইতোমধ্যে ২ লাখ ৫৮ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতার হটস্পটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করার পাশাপাশি কুইক রেসপন্স টিম নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ডিএনসিসির আওতায় আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ড্রেন লাইনসহ ৭১ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এবং ৮১ কিলোমিটার ড্রেন লাইনের কাজ শেষ হবে। অন্যদিকে, খাল খনন সম্পন্ন হবে সাড়ে তিন কিলোমিটার। কাজগুলো শেষ হলে আশা করা যায় রাজধানীর জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই কমে আসবে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন লেক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দ রেখেছে ৫ কোটি টাকা। ড্রেন ক্লিনিং এবং খাল পরিষ্কারেও সংস্থাটি ব্যয় করছে ৫ কোটি টাকা। এছাড়া, পাম্প হাউসের যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণ, উন্নয়ন ও ক্রয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন চলতি অর্থবছরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের বাজেটে বরাদ্দ রেখেছে মোট ৯০ কোটি টাকা। এছাড়া, খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি প্রকল্পে ব্যয় ধরেছে ২০৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, খাল দখল ও ড্রেনে বিভিন্ন ময়লা পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। নিয়ম মেনে সঠিক কার্যক্রম হিসেবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন পানি নিষ্কাশনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে, এটা কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি হলেও সঠিকভাবে তাদেরকেই এ কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।

এই নগর পরিকল্পনাবিদ আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, দিনশেষে তারাই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাই, যত্র-তত্র বাসার বর্জ্য, ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যাগ এবং পানি ও সফট ড্রিংসের বোতল না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে। নাহলে ড্রেনেজ সিস্টেম জ্যাম হয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। ভোগান্তিও কমবে না।

এমএ/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়