১০০ দিনে কূটনৈতিক অর্জন যেসব ক্ষেত্রে
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে গত ৫ আগস্ট বিগত সরকারপ্রধান পদত্যাগ করে। এর মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর। এই সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতো কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এই সরকারের অর্জন ও সফলতা নিয়ে বিশ্লেষণ হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্র ও প্রশাসন মেরামতে এরই মধ্যে ৬টি কমিশন গঠন করেছে। কমিশনগুলো শিগগির তাদের কাজ শুরু করবে। ড. ইউনূস দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ব পরিমণ্ডলে তার যে পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, পাকিস্তানসহ বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বহু দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা ইউনূসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এটিকে কূটনীতিতে সরকারের বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।’’
সরকারের তিন মাসে বাংলাদেশকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ প্রায় সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ড. ইউনূস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গার বৈঠকে বাংলাদেশকে সংস্কারে খরচের জন্য সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। আগামী তিন বছরে একটা প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশকে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে আইএসডিবি। এ ছাড়া, ডিসেম্বরের মধ্যে বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এডিবি। সংস্থাটি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কারের জন্য দেবে ৫০ কোটি ডলার। এটা পাওয়া যাবে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে। এসব কিছুই কূটনৈতিক সাফল্যের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমরা এখনো স্পষ্টভাবে জানি না, কেমন সময় লাগবে। আর বাংলাদেশের কূটনীতি হচ্ছে সব সময় পজিটিভ। আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই।
প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চাই। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।’’
ড. ইউনূসের সুদক্ষ নেতৃত্ব ও ইমেজের সুফল
জাতিসংঘের সব প্রথা ভেঙে সাধারণ অধিবেশন চলাকালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বাইডেনের বৈঠকের পর বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোও ইউনূসের প্রতি তাদের সমর্থন ও সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন। বিশ্বনেতাদের এমন আগ্রহের পেছনে মূলত ড. ইউনূসের সুদক্ষ নেতৃত্ব ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা রয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে সংগঠিত বর্বরোচিত গণহত্যার কথা শুনেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধানরাও বাংলাদেশের উন্নয়নে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। মূলত নোবেলজয়ী প্রফেসরের সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ কূটনৈতিক সফলতা দেখাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের খ্যাতিকে কাজে লাগানোর জন্য কূটনীতিকদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন এরইমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি ইউনূসের সুনামকে কূটনীতিতে ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা দেন। দেশের কূটনীতিকরা সেই অনুযায়ীই কাজ করছেন। নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের বিশ্বজোড়া খ্যাতিও কূটনৈতিক অঙ্গনে সুফল বয়ে আনছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতিসংঘ অধিবেশনে কূটনৈতিক সাফল্য
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন একটি বহুপক্ষীয় আলোচনার জায়গা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও জাতিসংঘ অধিবেশনে এবার বাংলাদেশের অর্জন অনেক বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এককভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও পরিচিতির কারণে এবারের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বহুপক্ষীয় আলোচনার চেয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বেশি হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কাছে এবার বাংলাদেশ বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি নজর কেড়েছে। এটি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ২৪ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এটিই ছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রথম বিদেশ সফর।
কপ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার সরব উপস্থিতি
বাকুতে অনুষ্ঠিত এবারের কপ-২৯ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলনেও সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। সম্মেলনে অন্তত ২৫ জন বিশ্ব নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। বিষয়টিকেই বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন কূটনীতিকরা। সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনুস তার স্বপ্নের ‘থ্রি জিরো’ মডেলের কথা বলেছেন। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন আপডেট, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর ঢাকা সফর
যুক্তরাজ্যের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট দুই দিনের জন্য ঢাকা সফরে এসেছেন। সফরকালে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীর ঢাকা সফরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও অভিবাসন অংশীদারত্ব জোরদারকরণের মাধ্যমে সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
তার এই সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান বলেছিলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও অভিবাসন অংশীদারত্ব জোরদারকরণের মাধ্যমে সম্পর্কের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করা তার এ সফরের অন্যতম লক্ষ্য।’’
এরই মধ্যে ক্যাথরিন ওয়েস্ট আলাদাভাবে প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যুক্তরাজ্যের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন তিনি।
লেবানন থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরই লেবাননে ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়। এরপর সেখান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহযোগিতায় লেবানন থেকে এ পর্যন্ত ১০টি ফ্লাইটে সর্বমোট ৬১৫ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে আরও বাংলাদেশি ফিরবেন।
ব্রাজিলের সাথে সম্পর্ক জোরদার
সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং ব্রাজিলের মধ্যে কৃষি, প্রতিরক্ষা এবং খেলাধুলা বিষয়ক ৩টি সহযোগিতামূলক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়াও ব্রাজিলের সাথে দ্বৈত কর, আইসিটি, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সংলাপ, কৃষি গবেষণা, চিনি ও খাদ্য শিল্প, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, বিমান পরিষেবা, সরাসরি শিপিং পরিষেবা, কৌশলগত অধ্যয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রশমন এবং স্থিতিস্থাপকতা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক আরও ১২টি চুক্তি আলোচনাধীন রয়েছে।
আরও কিছু কূটনৈতিক অগ্রগতি
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান জানান, কূটনৈতিকভাবে এই সময়ে বর্তমান সরকার বেশকিছু উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। ক্ষুদ্রঋণ সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ সম্প্রতি আর্জেন্টিনার কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছে। এ ছাড়াও দ্বৈত কর, তুলা সম্পর্কিত সহযোগিতা, বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয়ে আরও ৩টি চুক্তি প্রস্তাবের উপর আর্জেন্টিনার সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে। গত ৪ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রিপাবলিক অব কোরিয়ার অ্যাম্বাসেডর পার্ক ইয়ং সিক। সেখানে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের বিপুল সম্ভাবনার কথা আলাপ হয়।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর
গত ৪ অক্টোবর ঢাকা সফর করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এ সরকারের সময়ে এটিই ছিল কোনো বিদেশি সরকারপ্রধানের প্রথম ঢাকা সফর। বাংলাদেশ সফরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, এমপি ও শীর্ষ বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
প্রায় ১১ বছর পর মালয়েশিয়ান কোনো প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করলেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। ঢাকা সফরকালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দেন।
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্গের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল গত ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর বাংলাদেশ সফর করেন। সফরকালে প্রতিনিধিদলটি প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সংস্কৃতি উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে। দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় দুই পক্ষের মধ্যে। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে দুটি সমঝোতাও সই হয়।
উপদেষ্টা-সচিবের সফর
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, সৌদি আরব, সামোয়া প্রভৃতি দেশ সফর করেছেন। এসব দেশে বিভিন্ন সম্মেলনে অংশ নিয়ে সম্পর্কের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানও তুলে ধরেন।
সৌদি আরবের রিয়াদে আরব-ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য দাবির পক্ষে এবং স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে জোরালো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সফর করেছেন।
বাংলাদেশ-ইইউ সভা
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রস্তাবিত পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট-পিসিএ সংক্রান্ত আলোচনা শুরুর লক্ষ্যে প্রথম ব্যাখ্যামূলক সভা গত ৫-৬ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় প্রস্তাবিত চুক্তিতে উল্লেখিত সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহের ওপর প্রাথমিক পরিচিতিমূলক আলোচনা হয়। বিশেষভাবে ব্যবহৃত বিভিন্ন পরিভাষা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এ চুক্তি সই হলে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং তা কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে ‘নতুন মোড়’
বর্তমান সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক। আগে তৃতীয় দেশ হয়ে ঘুরে আসলেও স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম পণ্যবাহী কোনো জাহাজ পাকিস্তান থেকে সরাসরি বাংলাদেশে এসেছে। ১৩ নভেম্বর জাহাজটি করাচি থেকে রওনা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। ঘটনাটিকে দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ বলে উল্লেখ করেছে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ এ ঘটনাকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে একটি প্রধান পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন। তবে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে জাহাজ আসার ঘটনায় গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া ১৫ নভেম্বর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয়, বন্যার পানি, সীমান্ত হত্যা, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর উসকানিমূলক বক্তব্য, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ইলিশ রপ্তানি ইত্যাদি নানা ইস্যুতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের টানাপড়েন চলছে।
ভারতে বসে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিতে দেশটির কাছে একাধিকবার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘তাকে বিরত রাখতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।’’
গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর
আনুষ্ঠানিকভাবে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। গত ২৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেন। ফলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পথে তার অঙ্গীকার পূরণের পথে হাঁটছে। সরকারের এমন পদক্ষেপ নাগরিকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা/এনএইচ